সহিহ বুখারি সহ বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে একটি ঘটনা পাওয়া যায় যে উরাইনা গোত্রের (কোন কোন বর্ণনা অনুযায়ী উকল গোত্রের বা উভয় গোত্রের) ৮ জন লোক ইসলাম গ্রহণ করে, কিন্তু মদিনার আবহাওয়া তাদের জন্য অনুকূল না হওয়ায় তারা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের মদিনার বাইরের একটা জায়গায় পাঠান এবং (চিকিৎসাস্বরূপ) সেখানকার সদকার উটের দুধ এবং মূত্র পান করতে বলেন। তারা সেখানে যায় এবং উটের দুধ ও মূত্র পান করে, ফলে তাদের রোগমুক্তি ঘটে এবং তারা মোটাসোটা হয়ে ওঠে। অত:পর তারা ইসলাম পরিত্যাগ করে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিযুক্ত উটের রাখালকে হত্যা করে এবং উটগুলো নিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বাহিনী পাঠিয়ে তাদের পাকড়াও করে নিয়ে আসেন এবং তাদের শাস্তি দেন।
তাদের যে শাস্তির কথা হাদিসে এসেছে তা হলো:
১. তাদের হাত-পা কেটে দেওয়া হয়।
২. তাদের চোখ উত্তপ্ত লৌহ-শলাকা দিয়ে গেলে দেওয়া হয় বা বের করে ফেলা হয়।
৩. তারা পিপাসার্ত হয়ে পানি চেয়েছিল, কিন্তু তাদের পানি দেওয়া হয় নাই।
৪. তাদেরকে মৃত্যু পর্যন্ত ‘আল-হাররা’ নামক প্রস্তরময় স্থানে ফেলে রাখা হয়।
এখানে একটা অভিযোগ আসে, হত্যার বিনিময় হত্যা না হয় করা হলো, কিন্তু এত নির্মমভাবে কেন? বিচারের চেয়ে হিংস্রভাবে প্রতিহিংসা চরিতার্থই কী তবে এই ঘটনায় প্রাধান্য পেয়েছে? এবার আসুন দেখে নেই, উরাইনা গোত্রের লোকগুলো কী কী করেছিল?
এক. হাদিস হতে:
আনাস(রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের চোখ উপড়ে ফেলেন কারণ তারাও রাখালের চোখ উপড়ে ফেলেছিল। [সূত্র: Muslim Book: 16, Chapter: 2, Number: 4137 ]
দুই. ইতিহাস গ্রন্থ হতে:
তারা (বর্ণনাকারিগণ) বলেন: উরাইনাহর ৮ জনের একটি দল রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাছে এলো এবং ইসলাম গ্রহণ করলো, কিন্তু মদিনার আবহাওয়া তাদের জন্য অনুকূল হলো না। ফলে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তাদেরকে তাঁর দুগ্ধবতী উটসমূহের কাছে বসবাস করতে আদেশ দিলেন যেগুলো মদিনা হতে ৬ মাইল দূরে ‘আইর’ এর নিকটবর্তী ‘কুবা’র সংলগ্ন ‘যুল জাদর’ নামক স্থানে চরে বেড়াত। আরোগ্য লাভ করে মোটা হয়ে যাওয়া অবধি তারা সেখানে অবস্থান করলো। একদিন সকালে তারা উটের পালের ওপর হামলা চালালো এবং সেগুলোকে তাড়িয়ে নিয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর রাখাল ইয়সার একটি দল নিয়ে তাদের ধাওয়া করলেন। তিনি তাদের সাথে লড়াই করলেন। তারা তার [রাখালের] হাত-পা কেটে দিলো এবং তার জিহ্বা এবং চোখ কাঁটা দিয়ে খুঁচালো, যার ফলশ্রুতিতে তিনি মারা গেলেন। [সূত্র: ইবনে সা’দের ‘ কিতাব আত তাবাক্বাত আল কাবির’, ২ খ:, পৃ: ১১৪, (ইংরেজি অনুবাদ- এস মঈনুল হক)]
আমরা না হয় ভুলে গেলাম উরাইনা গোত্রের লোকগুলোর অকৃতজ্ঞতার কথা, কৃতঘ্নতার কথা, ধর্মদ্রোহিতার কথা, রাষ্ট্রদ্রোহিতার কথা, বিশ্বাসঘাতকতার কথা, ডাকাতির কথা। কিন্তু যে কথাগুলো ভুলে যাওয়া চলে না, তা হলো-
১. তারা রাখালের হাত-পা কেটে দিয়েছিল।
২. তারা কাঁটা দিয়ে রাখালের জিহ্বা এবং চোখ খুঁচিয়ে তার মৃত্যু ঘটিয়েছিল।
৩. ক্ষত-বিক্ষত জিহ্বা নিয়ে ঐ রাখাল যখন মারা যাচ্ছিল তখন সে তো পিপাসার্তই ছিল।
উরাইনার লোকগুলোকে পিপাসার্ত অবস্থায় কেন পানি দেওয়া হবে? অথচ তারা নির্মমভাবে খুঁচিয়ে রাখালের জিহ্বাকে ক্ষত-বিক্ষত করেছিল, তাদের তো সৌভাগ্য যে তাদের জিহ্বাও একইভাবে ক্ষত-বিক্ষত করা হয় নাই।
তারা যেমন নির্মম, নিষ্ঠুর, নির্দয়ভাবে কষ্ট দিয়ে দিয়ে রাখালকে হত্যা করেছিল, শাস্তিস্বরূপ ঠিক একই পরিণতি তারাও বরণ করেছে।
রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষ হিসেবে দয়ালু হতে পারেন, রহমাতাল্লিল আলামিন হতে পারেন, নিজের হত্যা চেষ্টাকারিকে তিনি মাফ করে দিতে পারেন, তার খাবারে কেউ মিশিয়ে দিলে তাকে ছেড়ে দিতে পারেন, ঘুমন্ত অবস্থায় তার মাথার ওপর তলোয়ার উত্তোলনকারির প্রতি দয়া দেখাতে পারেন; কিন্তু বিচারকের আসনে বসে নির্মম, নিষ্ঠুর, পাশবিক হত্যাকাণ্ড সংঘটনকারিদের প্রতি দয়া, সহানুভুতি দেখাবার কোন অধিকার তার নেই, থাকতে পারে না।
মায়াকান্না করা যাদের অভ্যাস, তারা তা করতে থাকুক…
লিখেছেনঃ মুহাম্মদ সাদাত
মূল লেখার লিংকঃ https://response-to-anti-islam.com/show/%E0%A6%89%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%97%E0%A7%8B%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%9F-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%AE-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%A3%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%AA%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87-/267