আসলেই কি এমনটি ঘটেছিল? । আমরা এখন সেগুলো বিশ্লেষণ করবো।
ইবনুল আসির(র.)'উসদুল গাবাহ' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনঃ
.
"বলা হয়েছে, নবী(ﷺ) তাকে [কুতায়লা বিনত কায়েস] তাঁর মৃত্যুর ১ মাস পূর্বে বিবাহ করেছিলেন এবং তিনি তাকে বেছে নেবার সুযোগ দেন। যদি সে চায়, তাহলে তার উপর হিজাব নির্ধারিত হবে এবং সে মুমিনদের (বিবাহের) জন্য হারাম হয়ে যাবে। আর চাইলে সে তাঁকে তালাক দিতে পারবে এবং যাকে ইচ্ছা বিয়ে করে নেবে। অতঃপর সে বিয়ে করাকেই বেছে নেয়। সে হাদরামাউতে ইকরিমাহ বিন আবু জাহল(রা.)কে বিয়ে করে।
আবু বকর(রা.) বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমি তাদের বাড়ির মধ্যে পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিলাম। উমার(রা.) বলেন, সে তো উম্মাহাতুল মুমিনিনদের কেউ ছিলো না। আর তিনি [নবী(ﷺ)] তার সাথে বাসরও করেননি। আর তার উপর হিজাবও নির্ধারিত হয়নি।
.
আরো বলা হয়েছে [আরেকটি অভিমত হচ্ছে,] নবী(ﷺ) তাকে এমন কিছু বলেননি। তবে তিনি তার সাথে বাসরও করেননি। তঃপর সে তার ভাইয়ের সাথে মুর্তাদ হয়ে যায়। ইকরিমাহ ইবন আবু জাহল মুর্তাদ হয়ে যাবার পর তাকে বিয়ে করেন। এ জন্য আবু বকর(রা.) তাকে [পুংবাচক, ইকরিমাহ] রজম [পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড] করতে চান। উমার(রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) তার সাথে বাসর করেননি এবং সে উম্মাহাতুল মুমিনিনদের কেউ ছিলো না। মহান আল্লাহ তাকে ধর্মত্যাগের দ্বারা এ থেকে সম্পর্কহীন করে দিয়েছেন। অতঃপর আবু বকর(রা.) নিরব হয়ে গেলেন।"
[1]রেফারেন্সঃ উসদুল গাবাহ – ইবনুল আসির গ্রন্থ।
.
এখানে ২য় অভিমতটি সত্য হওয়া অসম্ভব। এখানে ভুল তথ্য রয়েছে। কারণ বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত যে ইকরিমাহ ইবন আবু জাহল(রা.) কখনো মুর্তাদ হননি। তিনি শেষ পর্যন্ত ইসলামে অটল ছিলেন, রোমানদের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশ নেন এবং ইয়ারমুকের যুদ্ধে শহীদ হন। এ ব্যাপারে বহু সাহাবী(রা.) সাক্ষী। ইবন হাজার আসকালানি(র.) তাঁর ‘ইসাবাহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,
.
“আবু বকর(রা.) তাঁকে [ইকরিমাহ(রা.)] নু’মানের বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে পাঠান। তিনি তাদেরকে পরাজিত করেন। এরপর তিনি তাঁকে ইয়েমেনে পাঠান। সেখান থেকে ফিরে আসার পর তিনি জিহাদে যান। সে বছরই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর শহীদি মৃত্যু হয়েছিলো। …”
[2]Al-Isaabah গ্রন্থ থেকে।
.
আর ১ম অভিমতে স্পষ্টতই উল্লেখ আছে, স্বয়ং নবী(ﷺ) কুতায়লাকে বেছে নেবার সুযোগ দিয়েছিলেন সে উম্মুল মুমিনীন হিসেবে থাকবে কিনা। সে যদি উম্মুল মুমিনীন হিসেবে থাকতো, তাহলে তার উপর হিজাব নির্ধারিত হতো। এবং তাকে বিবাহ করা অন্য মুমিনদের জন্য হারাম হয়ে যেতো। নবী(ﷺ) তাকে এ স্বাধীনতাও দিয়েছিলেন যে চাইলে সে তাঁকে তালাক দিতে পারে এবং যাকে ইচ্ছা বিয়ে করতে পারে। কুতায়লা বিনত কায়স নিজের ইচ্ছাতেই আর উম্মুল মুমিনীন থাকেনি এবং সে বিয়ে করাকেই বেছে নিয়েছিলো। কাজেই এখান থেকে এটি বলার কোনো সুযোগ নেই যে, কোনো ‘উম্মুল মুমিনীন’ মুর্তাদ হয়েছে এবং অন্য কাউকে বিয়ে করেছে!
.
তবে কুতায়লা বিনত কায়সের সাথে নবী(ﷺ) এর বিবাহের ঘটনা যে আদৌ সত্য নয়, এ ব্যাপারে তাবিঈ উরওয়াহ বিন যুবাইর(র.) থেকে বক্তব্য পাওয়া যায়। তাঁর মতে, নবী(ﷺ) ঐ নারীকে আদৌ বিবাহ করেননি।
হিশাম বিন উরওয়াহ(র.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি [উরওয়াহ বিন যুবাইর(র.)] এই ঘটনার [কুতায়লা বিনত কায়েসের সাথে নবী(ﷺ) এর বিয়ে] সত্যতা অস্বীকার করেছেন। এবং তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) কুতায়লা বিনত কায়েস অথবা বানি জুনের বোন ব্যতিত অন্য কোনো কিন্দিয়্যাহ নারীকে বিবাহ করেননি।
[3]তাবাকাতুল কুবরা - ইবন সা'দ
.
কুতায়বা বিনত কায়েস নামে কেউ যে উম্মাহাতুল মুমিনীনদের (যাকে বিয়ে করা মুমিনদের জন্য হারাম ছিলো) অন্তর্ভুক্ত নয় -- এ ব্যাপারে উলামাদের ঐক্যমত রয়েছে।
অতএব আমরা উপসংহারে বলতে পারি, একজন প্রখ্যাত তাবিঈ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে নবী(ﷺ) এর সাথে কুতায়লা বিনত কায়েস নামে কারো আদৌ বিবাহ হয়নি। এবং এমন কথা বলা মোটেও সঠিক নয় যে কোনো উম্মুল মুমিনীন মুর্তাদ হয়ে গিয়েছিলেন।