গর্ভপাত বা (এবরশন)
গর্ভপাত যদি ইচ্ছাকৃতভাবে হয়ে থাকে, কোন ধরণের উল্লেখযোগ্য কারণ এর মধ্যে যদি না থাকে তা হলে গর্ভপাত ঘটানো হারাম। চাই এটি যে অবস্থায় বা যত দিনেই হোন না কেন। কারণ যেহেতু একটি বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরে সেটাকে ধ্বংস করা আর সেটা যদি মানবভ্রুণ হয়ে থাকে তা হলে কোন অবস্থাতেই এটি হালাল হবে না। যেহেতু গর্ভপাতকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোপন হত্যা বলেছেন। এটি গোপনীয়ভাবে ভ্রুণ হত্যা যেটি সম্পূর্ণ হারাম করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এব বিষয়ে তাহদিদ করেছেন, কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন এবং সতর্কবাণী দিয়েছেন। তাই এটি হারাম তাতে কোন সন্দেহ নেই। কুরআনুল কারীমের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ‘কেয়ামতের দিন তাদের এই প্রশ্ন করা হবে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করেছে, কোন অপরাধে এদেরকে হত্যা করা হয়েছে?’ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। পারব কি জবাব দিতে?
বিধান
যদি কোন মহিলা গর্ভবতী হয়ে যায় এবং তার কোলের বাচ্চার জন্য তা ক্ষতিকর হয়, এমতাবস্থায় গর্ভবতী হওয়াতে দুধ শুকিয়ে যাওয়া, দুধ নষ্ট হয়ে যাওয়া, যা কোলের শিশুকে খাওয়ানো যায় না, এমতাবস্থায় গর্ভ চারমাস পূর্ণ হওয়ার আগে ওয়াশ করে বা অন্যপদ্ধতিতে গর্ভপাত করানো যেতে পারে।যদি এ কাজ না করে কোলের শিশুকে বাঁচানোর কোন ব্যবস্থা না থাকে তবে।
ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ৫/৩৫৬, ফাতাওয়ায়ে শামী ৩/১৭৬
বৈধ পদ্ধতি
আবার নিম্নবর্ণিত কারণে গর্ভধারণের ক্ষমতাবান হওয়া সত্বেও গর্ভনিরোধ জায়েয-
ক. মহিলা গর্ভধারণের বোঝ বহন করতে অপারগ হলে।
খ. মহিলা নিজ বাসস্থান থেকে এত দূরে থাকে, যেখানে তার স্থায়ীভাবে অবস্থানের ইচ্ছে নেই। তার এমন বাহনে সফর করতে হবে, যার দ্বারা গন্তব্যে পৌঁছতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।
গ. স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক স্বাভাবিক না থাকায় সম্পর্ক বিচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে।
ঘ. পূর্বের যে সন্তান মায়ের কোলে রয়েছে, তার স্বাস্থ্য নষ্ট হওয়ার প্রবল আশংকা থাকলে।
ঙ. যুগের প্রতিকূল অবস্থার কারণে সন্তান অসচ্চরিত্র এবং পিতা-মাতার অপমানের কারণ হওয়ার প্রবল আশংকা থাকলে।
চ. গর্ভধারণের কারণে মহিলার দুধ শুকিয়ে যাওয়া এবং কোলের সন্তানকে লালন-পালন করার মতো অন্য কোন ব্যবস্থা না থাকলে বা কঠিন হয়ে গেলে।
ছ. কোন দীনদার ডাক্তার গর্ভধারণ করলে মহিলার প্রাণহানি বা কোন অঙ্গহানি হওয়ার প্রবল আশংকার কথা বললে।
জ. মহিলা অসচ্চরিত্র হলে এবং স্বামী তার সাথে বিচ্ছেদের ইচ্ছাও রাখলে।
বিস্তারিত দেখুন- ফাতাওয়ায়ে শামী ৩/১৭৬, আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৪৭
উল্লিখিত কারণগুলো ছাড়াও ইমাম গাযালী রহ. থেকে আরও দুটি অভিমত পাওয়া যায়-
১. সুখময় দাম্পত্য জীবন এবং স্বামীর নিরবচ্ছিন্ন আনন্দের জন্য স্ত্রীর শারীরিক স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য রক্ষণের উদ্দেশ্যে।
২. বৃহৎ পরিবার প্রতিপালনের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক দৈন্যতা-ক্লেশ পরিহার করার উদ্দেশ্যে। বহুসংখ্যক সন্তানের কারণে পিতা-মাতা অসৎ জীবন-যাপনে বাধ্য হতে পারে এবং জীবিকা সংগ্রহে অতিমাত্রায়ত ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে।
* হানাফী ও হাম্বলী মাযহাব মতে, শত্রু এলাকায় জন্ম হলে সন্তানের ইসলাম বিচ্যুতি হতে বাধ্য হবার সম্ভাবনা থাকলে।
তবে সকল মাযহাবের সর্বসম্মতি অভিমত হলো, গর্ভসঞ্চারের ১২০ দিন পর গর্ভপাত হারাম। অবশ্য যদি গর্ভধারিণীর জীবন রক্ষার কারণে প্রয়োজন হয়, সেটা ভিন্নকথা।