প্রশ্নঃ কুরআন পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা বলে?

✅ উত্তরঃ আমি সম্পূর্ণ লেখাটি লিখবো অন্ধবিশ্বাসী নাস্তিকদের মূল দাবিকে সামনে রেখে । এতে আপনারা নিজেরাই ওদের মিথ্যাচার ধরতে পারবেন আর আমার জন্য বুঝানো সহজ হবে, আপনাদেরকে । অভিযোগের দাবিকে সামনে রেখে ওরা কুরআনের যে আয়াত গুলো আমাদের সামনে তুলে ধরে সব গুলা আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরব এবং বর্ণনা করব । বিশুদ্ধ দলিল প্রমান যুক্ত করেছি বিধায় লেখাটি বিশাল লম্বা হয়েছে তাই সবর করে পাঠ করবেন।আমি আবারো বলছি ওদের দাবিটি খেয়াল করুন । 


❌ নাস্তিকদের দাবিঃ "কুরআনে পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা বলা হয়েছে"


এখন আমি কুরআনের আয়াত সমূহ তুলে ধরব আর ওদের দাবির সাথে হুবহু শব্দটু শব্দ মিলাতে চেষ্টা করব যে আসলেই কুরআনে “পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা” বলা হয়েছে কিনা নাকি কুরআন অন্য রকম বলছে আর নাস্তিকরা তাদের অন্ধ বিশ্বাস প্রমানে মিথ্যার সাহায্য নিয়ে চলছে।


👉পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ বিষয়ক কুরআনের আয়াত সমূহঃ


* সুরা বাকারা ২:২২ = যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব, আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাকেও সমকক্ষ করো না। বস্তুতঃ এসব তোমরা জান। 


* সুরা হিজর ১৫:১৯,২০ = আমি ভু-পৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি এবং তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক বস্তু সুপরিমিতভাবে উৎপন্ন করেছি। আমি তোমাদের জন্যে তাতে জীবিকার উপকরন সৃষ্টি করছি এবং তাদের জন্যেও যাদের অন্নদাতা তোমরা নও।


* সুরা ত্বা-হা ২০:৫৩ = তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে শয্যা করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি। 


* সুরা যূখরুফ ৪৩:১০ = যিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং তাতে তোমাদের জন্যে করেছেন পথ, যাতে তোমরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার।


* সুরা ক্বাফ ৫০:৭ = আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি এবং তাতে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদগত করেছি।


* সুরা যারিয়াত ৫১:৪৮ = আমি ভূমিকে বিছিয়েছি। আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম।


* সুরা নূহ ৭১:১৯,২০ =  আল্লাহ তা'আলা তোমাদের জন্যে ভূমিকে করেছেন বিছানা। যাতে তোমরা চলাফেরা কর প্রশস্ত পথে।


* সুরা নাবা ৭৮:৬,৭ = আমি কি করিনি ভূমিকে বিছানা এবং পর্বতমালাকে পেরেক?


* সুরা নাজিয়াত ৭৯:৩০,৩১,৩২,৩৩ =পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।তিনি এর মধ্য থেকে এর পানি ও ঘাম নির্গত করেছেন, পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন,তোমাদের ও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের উপকারার্থে।


* সুরা গাশিয়াহ ৮৮:১৮,১৯,২০ =  এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে? এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কিভাবে স্থাপন করা হয়েছে? এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে সমতল বিছানো হয়েছে? 


* সুরা শামস ৯১:৬ = শপথ পৃথিবীর এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন, তাঁর ।


* সুরা রহমান ৫৫ঃ১০ = আর যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছেন সৃষ্টজীবের জন্য।


👆☺👉উপরের সব আয়াত গুলোকে সামনে রেখে আমরা যে সারমর্ম স্পষ্ট করতে পারি তা হচ্ছেঃ


১/ ভুমিকে সমতল করা করা হয়েছে পৃথিবীর আকৃতিকে নয়।


২/  ভুমিয়ে বিছিয়ে সেটাতে পাহাড় গেড়ে দেওয়া হয়েছে।


৩/ ভুমিকে বিছিয়ে সেটাকে চলার পথ তৈরি করেছেন মানুষের সহজের জন্য ।


উপরের সব গুলো আয়াতের কোথাও অথবা তিনটি পয়েন্টের কোথাও কি দাবি করা হয়েছে "পৃথিবীর আকার,শেইপ সমতল চ্যাপ্টা" ? উত্তর হচ্ছে না। ইশারাতেও কিন্তু নাস্তিকদের ভ্রান্ত্র দাবিটি সঠিক প্রমান হচ্ছে না । সুতরাং নাস্তিকদের দাবি বাতিল এবং ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কুরআনে এমন একটি আয়াতও কেউ কখনোই দেখাতে পারবে না যেখানে দাবি করা হয়েছে যে “পৃথিবীর আকার আকৃতি শেইপ গোল চ্যাপ্টা সমতল”।


🎞কিছু কথাঃ চিন্তাশীল পাঠক আপনি যদি উপরের সমস্ত আয়াতের তাফসীর এবং ব্যাখ্যা পড়েন আপনি কোথাও এই কথা পাবেন না যে কুরআনের আয়াত বলছে “পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা” । কারন কুরআনের উপরের আয়াত সমূহ এই উদ্দেশ্যেই বলা হয়নি । উপরক্ত আয়াতের সত্য এবং সঠিক তথ্য হল আল্লাহ পৃথিবীর ভুমিকে মানুষের জন্য বিছিয়ে দিয়েছেন।মানুষ পৃথিবীতে বসবাস করছে , সহজে চলাফেরা করছে খাদ্য উৎপাদন করছে , এই কথা একেবারেই আমরা নিজে চোখেই দেখতে পারছি। সুতরাং আয়াতে মোটেও পৃথিবীর আকৃতি নিয়ে কথা হচ্ছে না বরং আল্লাহ আমাদের জন্য ভুমিকে বিছিয়ে দিয়েছেন সেটার কথাই বলা হচ্ছে ভুমিকে বিছিয়ে দেয়া আর পৃথিবীর আকৃতি সমতল দুটি আলাদা বিষয় , যারা এই সাধারন বিষয়ে পার্থক্য করতে পারে না তারা বিনা দলিলে মূর্খ এবং যুক্তিবিদ্যা বুঝে না এবং এরাই ধাপ্পাবাজ প্রতারক নাস্তিকরা।


☺ সুবিধার জন্য সরাসরি বিশুদ্ধ তাফসীরের অনুবাদ তুলে ধরছিঃ


*সুরা বাকারা ২:২২ ব্যাখ্যা ড মুজিবুর রহমান ১ খণ্ড, ১৮৭ পৃষ্ঠাঃ আল্লাহই যমীনকে বিছানা স্বরূপ বানিয়েছেন এবং আকাশকে ছাঁদ করেছেন । যেমন অন্য আয়াতে আছে, আমি আকাশকে নিরাপদ চাঁদোয়া বা ছাঁদ বানিয়েছি এবং এতদসত্ত্বেও তারা নির্দেশনাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে রাখে । আকাশ হতে বারিধারা বর্ষণ করার অর্থ হল মেঘমালা হতে বৃষ্টি বর্ষণ করা এমন সময়ে যখন মানুষ ও পূর্ণ মুখাপেক্ষী থাকে । অতপর ঐ পানি থেকে বিভিন্ন প্রকারের ফলমূল উৎপন্ন করা, যা থেকে মানুষ এবং জীবজন্তু উপকৃত হয় । যেমন কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় এর বর্ণনা এসেছে । এক স্থানে মহান আল্লাহ বলেছেন তিনি আল্লাহ যিনি তোমাদের জন্যে যমীনকে বিছানা ও আকাশকে ছাঁদ স্বরূপ বানিয়েছেন , সুন্দর সুন্দর কমনীয় আকৃতি দান করেছেন, ভাল ভাল এবং স্বাদে অতুলনীয় আহার্য পৌঁছিয়েছেন।


*তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন ১ খণ্ড, ৫৮ পৃষ্ঠাঃ শাব্দিক অনুবাদ, তিনি এমন, যিনি করেছেন, তোমাদের জন্যে যমীনকে বিছানাস্বরূপ এবং আসমানকে ছাঁদ স্বরূপ আর বর্ষণ করেছেন আসমান হতে পানি , উৎপন্ন করেছেন তা দ্বারা ফলসমূহ, তোমাদের খাদ্যরুপে......


*তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ১ খণ্ড, ৮৩ পৃষ্ঠাঃ পৃথিবীতে মানুষের সাচ্ছন্দে জীবন যাপনের ব্যবস্থা করেছেন । পৃথিবীকে বিছানার মতো আরামদায়ক ও নিরাপদ অবস্থান স্থল বানিয়েছেন । আল্লাহ পেতে দেয়া এই বিছানাটার কথা মানুষ ভুলে যায় । কারন এটি তাদের চোখে অনেক দীর্ঘ ও বিস্তৃত । জীবন যাপনের উপকরণ সরবরাহের জন্য আল্লাহ তা"লা এ পৃথিবীতে যে সমন্বয় ও সাযুজ্য সৃষ্টি করেছেন , আরাম আয়েশ, বিশ্রাম ও আনন্দের যে উপকরণ তার করায়ত্ত করে দিয়েছেন , তাকে সে বিস্তৃত হয় । এই সাযুজ্য ও সামঞ্জস্য যদি সৃষ্টি না করা হতো তাহলে এই গৃহে এত সহজে ও সাচ্ছন্দে জীবন যাপনের কোন সুযোগ থাকতো না । 


*তাফসীরে মাযহারী ১ খণ্ড, ৭০ পৃষ্ঠাঃ আল্লাহ তা"লা পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন শয্যারুপে । শয্যা অর্থ এমন বিছানা যা বসোপযোগী । অতি শক্ত নয় । অতি কমলও নয় । 


🤠 সিদ্ধান্তঃ উপরের আয়াত এবং তাফসীর খেয়াল করুন তো , কোথায় বলা হচ্ছে "পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা" ? এরকম কিছুই বলা হয়নি।মূলত উপরের আয়াতে "ভুমিকে বিছানা বলতে" আমরা যেখানে হাঁটাচলা করছি অর্থাৎ সমতল ভুমিতে সেটার কথাই বলা হচ্ছে।“পৃথিবী পুরাটাই সমতল চ্যাপ্টা” অথবা “অর্ধেক চ্যাপ্টা” অথবা “অর্ধেক গোল” এরকম কিছুই বলা হচ্ছে না সরাসরি অথবা ইশারাতেও । আরও খেয়াল করুন আয়াত বর্ণনার পরেই কিন্তু সাথে সাথে বলা হচ্ছে যে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং ফসল উৎপাদন করেছেন যাতে আমরা খাদ্য পাই , বৃষ্টি কিন্তু উপর থেকেই পরে আর আমরা কিন্তু ভুমিতে বসবাস করছি এটি কিন্তু আমরা নিজ চোখেই দেখছি তাহলে কুরআনের আয়াত কিভাবে বলতে পারে যে পৃথিবীর আকৃতি সমতল চ্যাপ্টা ? উত্তর হচ্ছে কুরআন এই কথা কখনোই বলে না । চাক্ষুষ প্রমানিত হচ্ছে যে নাস্তিকরা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা এবং আমাদেরকে মিথ্যা কথা বলেছে। আসলে এটাই ওদের নাস্তিক্যধর্মের আদর্শ...

Post a Comment

Previous Post Next Post