ইসলাম বিদ্বেষীরা একটি হাদিস উল্লেখ করেন এবং প্রমাণ করার বৃথা চেষ্টা করেন যে মুহাম্মদ (সাঃ) খাদিজা (রাঃ) এর চাচাতো ভাই ওয়ারাকা বিন নওফেলের থেকে তাওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা নিতেন এবং কুরআন রচনা করতেন! (নাউজুবিল্লাহ) । তারা যে ঘটনাটি উল্লেখ করেন তা হলো সহীহ বুখারীর ওহীর সূচনা অধ্যায়ের ৪ নং হাদিস। চলুন আমরা ঘটনাটি একটু পড়ে দেখি আসলে কি আছে সেখানে।
"...এ আয়াত নিয়ে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) ফিরে এলেন। তাঁর অন্তর তখন কাঁপছিল। তিনি খাদীজা বিন্ত খুওয়ালিদের কাছে এসে বললেন, আমাকে চাঁদর দিয়ে ঢেকে দাও, আমাকে চাঁদর দিয়ে ঢেকে দাও। ’ তাঁরা তাঁকে চাঁদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তাঁর ভয় দূর হল। তখন তিনি খাদীজা(রা.) এর কাছে সকল ঘটনা জানিয়ে তাঁকে বললেন, আমি নিজের উপর আশংকা বোধ করছি। খাদীজা (রা.) বললেন, আল্লাহ্র কসম, কক্ষনো না। আল্লাহ্ আপনাকে কক্ষনো অপমানিত করবেন না। আপনিতো আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করেন, অসহায় দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। এরপর তাঁকে নিয়ে খাদীজা (রা.) তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনু নাওফিল(অথবা নাওফাল) ইবনু আবদুল আসা’দ ইবনু আবদুল উযযার কাছে গেলেন, যিনি জাহিলী যুগে ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরানী(হিব্রু) ভাষা লিখতে জানতেন এবং আল্লাহ্র তওফীক অনুযায়ী ইবরানী ভাষায় ইঞ্জিল থেকে অনুবাদ করতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বয়োবৃদ্ধ এবং অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা (রা.) তাঁকে বললেন, হে চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। ’ ওয়ারাকা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ভাতিজা! তুমি কী দেখ?’ রাসুলুল্লাহ(ﷺ) যা দেখেছিলেন, সবই খুলে বললেন।
তখন ওয়ারাকা তাঁকে বললেন, ইনি সে দূত যাঁকে আল্লাহ্ মূসা(আ.) এর কাছে পাঠিয়েছিলেন। আফসোস! আমি যদি সেদিন যুবক থাকতাম। আফসোস! আমি যদি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার কাওম তোমাকে বের করে দেবে। ’ রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বললেনঃ তাঁরা কি আমাকে বের করে দিবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অতীতে যিনিই তোমার মত কিছু নিয়ে এসেছেন তাঁর সঙ্গেই শত্রুতা করা হয়েছে। সেদিন যদি আমি থাকি, তবে তোমাকে প্রবলভাবে সাহায্য করব। ’ এর কিছুদিন পর ওয়ারাকা(রা.) ইন্তেকাল করেন। …”
খ্রিষ্টান মিশনারীরা বলতে চায় যে ওয়ারাকা বিন নাওফাল যেহেতু প্রাচীন আসমানী কিতাবে অভিজ্ঞ ছিলেন, কাজেই তিনিই মুহাম্মাদ (ﷺ)কে শিখিয়ে দিতেন যা দ্বারা মুহাম্মাদ (ﷺ) কুরআন ‘রচনা’ করতেন (নাউযুবিল্লাহ)। তাদের সাথে নাস্তিক-মুক্তমনাদেরকেও তাল মেলাতে দেখা যায়।
এ মূর্খতাপ্রসূত অভিযোগের জবাব মাত্র একটা পয়েন্টেই দেওয়া যায়! আর কোনো কিছুর প্রয়োজনই হয় না! তা হলোঃ
আলোচ্য ঘটনার শেষে খুব সুন্দর করে লেখা আছে যে " ওয়ারাকা বিন নওফেল ঘটনার কিছুদিন পরই ইন্তেকাল করেন " এ অংশটুকুই যথেষ্ট তাদের এ ফালতু অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য।
অর্থাৎ মুহাম্মাদ(ﷺ) প্রথম ওহী{সুরা আলাকের ১ম ৫টি আয়াত} লাভের কিছুদিনের মাঝেই ওয়ারাকা ইন্তেকাল করেন। অথচ মুহাম্মাদ(ﷺ) এর নিকট এরপরেও টানা ২৩ বছর কুরআন নাজিল হতে থাকে। ওয়ারাকা তাহলে কী করে মুহাম্মাদ(ﷺ)কে “কুরআন শিক্ষা” দিতেন? মৃত মানুষ কি কাউকে কিছু শেখাতে পারে? !!আজীব কথা!....
আমরা জানি যে বিভিন্ন অবস্থা ও ঘটনার প্রেক্ষিতে কুরআনের আয়াত নাজিল হত। এছাড়াও মুহাম্মাদ(ﷺ) এর নিকট অনেক সময়েই আহলে কিতাব ইহুদিরা বিভিন্ন প্রশ্ন ছুড়ে দিত। ইহুদিরা নিজেরাই বলত যে, সেগুলো এমন প্রশ্ন ছিল যার জবাব একজন নবী ছাড়া কেউ দিতে পারে না। উদাহরণ স্বরূপ জাস্ট একটি ঘটনা উল্লেখ করা যাক। যেমনঃ
"তাফসিরে মা’আরিফুল কুরআন, ৫ম খণ্ড, সুরা ইউসুফের তাফসিরের সার-সংক্ষেপ অংশ, পৃষ্ঠা ৩-৪"
ইহুদিরা পরীক্ষার্থে রাসুলুল্লাহ(ﷺ)কে বলেছিলঃ যদি আপনি সত্যিই আল্লাহর নবী হন, তবে বলুন ইয়াকুব পরিবার শাম থেকে মিসরে কেন স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং ইউসুফ(আ.) এর ঘটনা কী ছিল? প্রত্যুত্তরে ওহীর(সুরা ইউসুফ) মাধ্যমে পূর্ণ কাহিনী অবতারণ করা হয়।...তিনি ছিলেন নিরক্ষর এবং জীবনের প্রথম থেকেই মক্কায় বসবাসকারী।তিনি কারো কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেননি এবং কোন গ্রন্থও পাঠ করেননি।এতদসত্ত্বেও তাওরাতে বর্ণিত আদ্যোপান্ত ঘটনাটি বিশুদ্ধরূপে বর্ণণা করে দেন।বরং এমন কিছু বিষয়ও তিনি বর্ণণা করেন যেগুলো তাওরাতে উল্লেখ ছিল না।