আয়েশা (রাঃ)-এর সঙ্গে নবি মুহাম্মাদ ﷺএর বিবাহের মহাপ্রজ্ঞা ও বিশদ আলোচনা
অনেকেই নবির প্রকৃত চিত্রকে বিকৃত করার চেষ্টা করে এবং তজ্জন্য প্রচার করে যে, নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ছিলেন একজন যৌন নিপীড়নকারী, এর পক্ষে তারা যুক্তি দেয় যে, তিনি আয়েশাকে বিবাহ করেছিলেন যখন তিনি ছিলেন একটি শিশু।
বিষয়সূচি
(1) বিয়ের বয়সসংক্রান্ত ইসলামি আইন
(2) কখন বয়ঃসন্ধি শুরু হয়?
(3) মেয়েদের বয়ঃসন্ধি
(4) অল্প বয়স্ক মায়েদের তালিকা
(5) নবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের বিবাহ পরিপ্রেক্ষিতের নিয়মানুসারে
(6) (আয়েশা ব্যতীত) তাঁর সমস্ত পত্নী ছিলেন বয়স্কা বিধবা
(7) কতিপয় মেয়ের উদাহরণ যারা ৫-৯ বছর বয়সে সন্তানের জন্ম দিয়েছে
(8) নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কি ছয় বছরের আয়েশাকে বিবাহ করেছিলেন
(9) আয়েশার কত বছর বয়সে বিয়ের নির্জনবাস সুসম্পন্ন হয়েছিল
(10) বিবাহ নিছক শারীরিক বাসনা জন্য ছিল না
(11) আরবের প্রচলিত কর্মকাণ্ড
(12) খ্রিষ্টান ধার্মিক ব্যক্তিবর্গ, রাজা, রাজকীয় লোক এবং গণ্যমান্যদের বিবাহ
(13) সেসময় নবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শত্রুদের প্রতিক্রিয়া কী ছিল
(14) আয়েশা (রাঃ) কখনো অসম্মতি প্রকাশ করেননি অথবা আয়েশার বিবাহ এবং সম্মতি
(15) বিবাহের পশ্চাতে মহাপ্রজ্ঞা
(16) বিবাহের বয়স নিম্নোল্লেখিত ধর্মে
(17) ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্ম
(18) হিন্দু ধর্ম
(19) ইসলাম
(20) ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মশাস্ত্রের বিশ্লেষণ
(21) প্রণিধানযোগ্য পয়েন্ট
(22) উপসংহার
(23) তথ্যসূত্র
বিয়ের বয়সসংক্রান্ত ইসলামি আইন
ইসলামে বিয়ের নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। যখনই একজন মানুষ বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হয় তখনই সে বিয়ের উপযুক্ত হয়ে যায়। বিবাহ (নিকাহ্), বিবাহচুক্তি এর পূর্বেও হতে পারে কিন্তু বিয়ের নির্জনবাস কেবল বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হওয়ার পরই হতে পারে।
কখন বয়ঃসন্ধি শুরু হয়?
যদিও সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধি ৮ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে শুরু হয়ে যায়, তবে এর পূর্বে বা পরেও হতে পারে। সকলের শরীরে বিভিন্ন সময় পরিবর্তন আসে। যদি ১০ বছর বয়সেই তোমার বক্ষ উঁচু হয়ে ওঠে অথবা ১৪ বছর বয়সেও তোমার ঋতুস্রাব আরম্ভ না হয় তাহলে চিন্তার কোনো কারণ নেই। অবশেষে সবাই বয়ঃসন্ধি অতিক্রম করে।
যদিও মহিলাদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধির বয়সে তারতম্য ঘটে তবে সাধারণত তা খুব তাড়াতাড়ি এসে পড়ে। “Woman (মহিলা)” পুস্তকের বিখ্যাত লেখকগণ (হারমান এইচ. প্লস, ম্যাক্স বারটেল্স এবং পল বারটেলস, ওম্যান, প্রথম খণ্ড, লর্ড ও ব্রান্সবাই, ১৯৮৮, পৃষ্ঠা ৫৬৩, http://www.biblioz.com/lp25762280577.html), বলছেন : “দেশ বা প্রদেশের গড় তাপমাত্রাকে মূল ফ্যাক্টার হিসেবে গণ্য করা হয়, তা শুধু ঋতুস্রাব-বিষয়েই নয় বরং বয়ঃসন্ধিতে যৌন উন্নতির সর্বক্ষেত্রেই”। http://www.livescience.com/1824-truth-early-puberty.html
মেয়েদের বয়ঃসন্ধি
একটি অস্ট্রেলিয়ান সরকারিজনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানবলছে :
“সাধারণত বয়ঃসন্ধির প্রথম লক্ষণ দ্রুত বৃদ্ধি : তুমি লম্বা হও; তোমার বক্ষ বিকশিত হয়; গোপনাঙ্গে এবং বগলে চুল গজাতে শুরু করে। এটা ১০ বছর থেকে ১৪ বছর বয়সের মধ্যে আরম্ভ হয়ে থাকে – যদিও কারো ক্ষেত্রে পূর্বে এবং কারো ক্ষেত্রে পরে ঘটতে পারে”।(http://www.population.health.wa.gov.au/Communicable/Resources/2107%20PubertyinGirls.pdf)
Medline Plus Medical Encyclopedia (মেডলাইন প্লাস মেডিকাল ইন্সাইক্লোপিডিয়া)-র মন্তব্য :
“এঁচড়ে পাকা বয়ঃসন্ধি শরীরের বৈশিষ্ট্যসমূহের অকাল উন্নয়ন যা সাধারণত বয়ঃসন্ধির সময় ঘটে। (বয়ঃসন্ধি জীবনের সেই পর্যায় যখন শরীরে দ্রুত পরিবর্তন এবং প্রজনন ক্ষমতার বিকাশ ঘটে)। বয়ঃসন্ধি ছেলেদের ক্ষেত্রে সাধারণত ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ৯ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যে ঘটে। (http://www.nlm.nih.gov/medlineplus/ency/article/001168.htm)
মেয়েদের ক্ষেত্রে, এঁচড়ে পাকা বয়ঃসন্ধি হলো ওই সময় যখন ৮ বছর বয়সের পূর্বেই নিম্নের কোনো একটি বিষয় দেখা যায় : স্তন, বগল বা গোপনাঙ্গের চুল, পরিপক্ক বহিঃস্থ জননেদ্রিয়, প্রথম ঋতুস্রাব”।
যখন আয়েশা (রাঃ) বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হন তখন তাঁর বিবাহ সুসম্পন্ন হয়। যেমন কারেন আর্মস্ট্রোং তাঁর পুস্তক “মুহাম্মাদ, পৃষ্ঠা ১৫৭”-তে লিখছেন : “তাবারি বলছেন : তিনি এতটাই ছোটো ছিলেন যে, তিনি তাঁর পিতৃগৃহে থাকতেন এবং যখন তিনি বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হন তখন তাঁর বিয়ের নির্জনবাস সম্পন্ন হয়”।
সুতরাং মনে রাখুন, একটি মেয়ের ঋতুস্রাব ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সের মধ্যে ঘটে, যদিও এরকম সবসময় হ্য় না, তবে ১৪ বা ১৫ বছর বয়সে তার ঋতুস্রাব শুরু হতে পারে। তবে সম্ভবত আয়েশার বয়ঃসন্ধি ৮ বছরে শুরু হয়েছিল এবং ৯ বছর বয়স পর্যন্ত অব্যহত ছিল। এই বয়ঃসন্ধিতে একবার তাঁর ঋতুস্রাবের ঘটে, এটাই তাঁকে মহিলায় পরিণত করে দেয়, তখন থেকে তিনি আর কোনো শিশুকন্যা ছিলেন না। সেসময় তিনি মহিলা হওয়ার উপযুক্ত ছিলেন, সুতরাং তিনি আর শিশু নন।
প্রমাণ : তাছাড়া, আয়েশা (রাঃ) যে বয়ঃসন্ধির মধ্যে কালাতিপাত করছিলেন, এই সত্যিটা আমরা বিশুদ্ধ বর্ণনা হতেজানতে পারি। আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করে যে, বয়ঃসন্ধিতে চুল ঝরে পড়তে পারে আর ঠিক একথাই আমরা হাদিসে পড়ি : আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন : “আমি যখন ছয় বছরের মেয়ে তখন আমার সঙ্গে নবির বিয়ের পাকা কথা হয়ে যায়। আমরা মদিনায় গিয়ে বানি হারিস বিন খাজরাজের গৃহে অবস্থান করলাম, অতঃপর আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং আমার চুল ঝরে পড়ে…”।(সহি বুখারি : ৩৬০৫)
কতিপয় মেয়ের উদাহরণ যারা ৫-৯ বছর বয়সে সন্তানের জন্ম দিয়েছে
সত্যি বলতে, দ্রুত বয়ঃসন্ধির অনেক ঘটনাই ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, লিনা মেডিনা ৫ বছর ৭ মাস ২১ দিন বয়সে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। ইন্সাইক্লোপিডিয়া উইকিপিডিয়া বলছে :
“লিনা মেদিনা (২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৩ সালে পৌরেঞ্জ পেরু স্থানে জন্মগ্রহণ করেন) ৫ বছর ৭ মাস ২১ দিন বয়সে সন্তানের জন্ম দেন। তিনি ছিলেন চিকিৎসা-ইতিহাসের সর্বকনিষ্টা মা। অনুরূপ একটি বিশ্ব রেকর্ড ঘটনা ঘটেছে”।
(http://en.wikipedia.org/wiki/Lina_Medina)
তাছাড়া একটি ৯ বছরের থাই মেয়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছে :
সংবাদ চিত্রটিNew Straits Times, ১০/৩/২০০১-হতে গৃহীত।
আমাদের বর্তমান বিশ্বে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলির মানুষ খুব ছোটো মেয়েদের বিবাহ করিয়ে দেয়। তাহলে একজন মানুষ যিনি ১৪০০ বছর পূর্বে ৯ বছর বয়সী মেয়েকে বিবাহ করেছিলেন, তাঁকে আমরা কেন শিশু নিপীড়ক বলব, অথচ অনেক মানুষ আজও এরকম কাজ করে ? উপরোক্ত মেয়েটিও ৯ বছর বয়সে সন্তানের জন্ম দিয়েছে।
আয়েশার (আমাদের নবির স্ত্রী) পিতামাতা স্বেচ্ছায় এবং নিজেদের পছন্দে আমাদের নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে তাঁদের কন্যার বিবাহ দিতে সম্মত হয়েছিলেন। তাঁরা এতে গৌরাবান্বিত ছিলেন যে, তাঁরা তাঁর বিবাহ দিচ্ছেন ভূপৃষ্ঠের সর্বোত্তম মানুষের সঙ্গে।
সর্বকনিষ্ঠা মায়েদের তালিক
http://en.wikipedia.org/wiki/List_of_youngest_birth_mothers
নবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের বিবাহ পরিপ্রেক্ষিতের নিয়মানুসারে
নবীর জীবনধারা এবং তাঁর বিয়ের বিশদ বিবরণ দেখব :
তিনি খাদিজাকে বিবাহ করেছিলেন যখন তাঁর (খাদিজার) বয়স ছিল ৪০ বছর এবং তাঁর (সঃ) বয়স ছিল ২৫ বছর। এই বয়সকে একজন পুরুষের যৌন-বসন্ত বলা যায় আর তিনি (সঃ) তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত শুধু তাঁরই সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন অর্থাৎ অন্য কোনো বিবাহ করেননি।
নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হ ওয়া সাল্লাম আয়েশা (রাঃ) ছাড়া কোনো কুমারী মেয়েকে বিবাহ করেননি। তাঁর অন্য সমস্ত পত্নী ছিলেন অকুমারী, এটাই ওই সমস্ত ধারণাকে খণ্ডন করে দেয় যা অনেক শত্রু ও প্রতিকূল সূত্র দ্বারা ছড়িয়ে পড়েছে এবং এই ধারণাকেও খণ্ডন করে যে, নবির বিয়ের মৌলিক অভিপ্রায় ছিল শারীরিক বাসনা এবং নারীদের সম্ভোগ; যদি তাঁর উদ্দেশ্য তাই হত তাহলে তিনি শুধুমাত্র কুমারী ও সুন্দরী রমণীদেরকেই বেছে নিতেন।
তাঁর সমস্ত পাত্রী ছিলেন বয়স্কা বিধবা (আয়েশা (রাঃ) ব্যতীত)
উপরের চার্টটিও প্রমাণ করে যে, নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কোনো শিশুকন্যা নিপীড়নকারী ছিলেন না। যদি একথা নবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের ক্ষেত্রে সত্য হত তাহলে তিনি আয়েশার সঙ্গে ঠিক সেসময় সঙ্গম করতেন যখন তাঁর বয়স ছিল ছয় বছর এবং তিনি আরও অনেক ৪ থেকে ৭ বছর বয়সী মেয়েদেরকে বিবাহ এবং তাদের সঙ্গে সহবাস করতে পারতেন, কিন্তু তিনি কখনো এমন করেননি।
নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কি ৬ বছরের আয়েশাকে বিবাহ করেছিলেন ?
বিশুদ্ধ হাদিসের বর্ণনা হতে প্রতীয়মান হয় যে, নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ছয় বছরের আয়েশাকে বিবাহ করেছিলেন, কিন্তু ওই সব বর্ণনা হতে এও স্পষ্ট হয় যে, বিবাহের নির্জনবাস সুসম্পন্ন হয়েছিল যখন তাঁর বয়স ছিল নয় বছর।
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে : “রসূলুল্লাহ্সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আমার বাগ্দত্তা হয়ে যান যখন আমি ছয় বছরের মেয়ে ছিলাম। আমরা মদিনা গিয়ে বানি হারিস বিন খাযরাজের গৃহে অবস্থান করলাম। অতঃপর আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং আমার চুল ঝরে পড়ে। পরে চুল আবার গজিয়ে ওঠে। আমি আমার কিছু মেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে দোলনায় খেলাধুলা করছিলাম, এমন সময় আমার মা উম্মে রুমান আমার কাছে এলেন। তিনি আমাকে ডাকলেন, ফলে আমি তাঁর কাছে গেলাম কিন্তু আমি জানতাম না তিনি আমাকে কি বলতে চাইছেন। তিনি আমাকে হাত ধরে ঘরের দরজায় দাঁড় করিয়ে দিলেন। আমি হাঁপাচ্ছিলাম। যখন আমার শ্বাসক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হলো তখন তিনি পানি এনে আমার মুখ-হাত মুছে দিলেন। অতঃপর তিনি আমাকে গৃহাভ্যন্তরে নিয়ে গেলেন। গৃহে আমি কতিপয় আনসারি মহিলাকে দেখলাম। তাঁরা বলছিলেন : “প্রাণঢালা শুভেচ্ছা, আল্লাহ্র অনুগ্রহ এবং সৌভাগ্য”। অতঃপর তিনি আমাকে তাঁদের হাতে ছেড়ে দিলেন আর তাঁরা আমাকে প্রস্তুত করলেন (বিবাহের জন্য)। অপ্রত্যাশিতভাবে আল্লাহ্র নবি (সঃ) আমার নিকট সেদিন পূর্বাহ্নে এলেন এবং আমার মা আমাকে তাঁর হাতে সমর্পণ করলেন। সেই সময় আমি নয় বছরের মেয়ে ছিলেম। (সহি বুখারি : ৪৭৩৮)
আবু হিশাম বর্ণনা করছেন : “নবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের মদিনায় হিজরতের তিন বছর পূর্বে খাদিজা (রাঃ) মৃত্যুবরণ করেন। অতঃপর তিনি প্রায় দুই বছর পর আয়েশা (রাঃ)-কে বিবাহ করেন যখন তাঁর বয়স ছিল ছয় বছর এবং তিনি সেই বিবাহকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেন যখন তিনি নয় বছরের হন”। (সহি বুখারি, ৫ম খণ্ড, অধ্যায় : ৫৮, হাঃ ২৩৬)
আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করছেন : রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আমাকে বিবাহ করেন যখন আমার বয়স ছিল ছয় বছর এবং আমি তাঁর গৃহে প্রবিষ্ট হই যখন আমি নয় বছর বয়সে উপনীত হই। (সহি মুসলিম : ৩৩১০)
আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করছেন : রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বিবাহ করেন যখন আমার বয়স ছিল সাত বছর এবং বউরূপে স্বগৃহে নিয়ে যান যখন তিনি নয় বছরের ছিলেন এবং সেসময় তাঁর পুতুলগুলি তাঁর সঙ্গেই ছিল; আর যখন তিনি (নবি (সঃ) মৃত্যুবরণ করেন তখন তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর। (সহি মুসলিম : ৩৩১১)
আয়েশার কত বছর বয়সে বিয়ের নির্জনবাস সুসম্পন্ন হয়েছিল ?
প্রথমেই এটা বোঝা একান্ত দরকার যে, ১৪০০ বছর আগের অবস্থা এখন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল, সময় বদলেছেআর পরিবর্তিত হয়েছে মানুষও। ১৪০০ বছর পূর্বে আরব সমাজে বাল্যবিবাহ ব্যাপক ছিল, ছোটো মেয়েদের বিবাহ খুব সাধারণ ব্যাপার ছিল। সত্যি বলতে কি, তাদেরকে ছোটো মেয়ে মনে করা হত না, বরং সেসময় তারা যুবতি মহিলা বলে বিবেচিত হত।
একটি ঐতিহাসিক সত্য যে, ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকায় নয় থেকে চোদ্দ বছর বয়সী মেয়েদের বিবাহ হয়ে যেত। এও বাস্তব সত্য যে, এক শতাব্দীর কিছু পূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও দশ বছরের মেয়েদের বিবাহ দিয়ে দেওয়া হত। (বিভিন্ন প্রমাণ নিম্নে দেওয়া হচ্ছে)
এই ঘটনাগুলি সত্ত্বেও কোনো ইতিহাসবিদ এই দাবি করেন না যে, এই সমস্ত লোক ছিল বিকৃত মস্তিষ্ক ও বিকারগ্রস্থ। বরং যারা এহেন দাবি করে তাদের সম্পর্কে ইতিহাসবিদগণ বলেন যে, তারা উদ্ধত এবং তাদের কোনো বুদ্ধিবৃত্তি ও ইতিহাসের জ্ঞান নেই।
কোনো মুসলিম সূত্র হতে এই তথ্য পাওয়া যায় না যে, তৎকালীন সমাজের কেউ আয়েশা (রাঃ)-এর বাল্যবয়সের জন্য এই বিবাহের সমালোচনা করেছে। পক্ষান্তরে নবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে আয়েশার বিবাহের প্রতি আয়েশার পিতা আবুবাক্র উৎসাহ প্রদান করেছিলেন এবং বিশাল আকারে উম্মত তাকে স্বাগত জানিয়ে ছিল।
তাছাড়া আয়েশার সঙ্গে নবির বিবাহে যে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি মানুষ লক্ষ করবে তা হলো : বিবাহের কাজ পূর্ণতা লাভ করেছিল যখন আয়েশার বয়স ছিল নয় বছর, যখন ছয় বছর ছিল তখন নয় আর এর পশ্চাতে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। এর কারণ হচ্ছে যে, আয়েশা নয় বছর বয়সে বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হয়েছিলেন আর ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো মেয়ে যখন বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হয় তখন তাকে মহিলা হিসেবে বিবাহের উপযুক্ত বলে গণ্য করা হয়।
বিবাহ নিছক শারীরিক বাসনার জন্য ছিল না
তিনি (সঃ) তাঁকে বিবাহ করার বিষয়ে একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন। সহি বুখারি হাদিসে আয়েশার সূত্রে প্রমাণিত আছে : রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন : “আমার একটি স্বপ্নে তোমাকে দুবার দেখানো হয়েছে। আমি দেখলাম : এক টুকরো রেশমে আবৃত আছ, এবং বলা হলো : এটা তোমার স্ত্রী। আমি তাকে অনাবৃত করে দেখলাম এটা তুমিই ছিলে। আমি বললাম : যদি এটা আল্লাহ্র পক্ষ হতে হয় তাহলে তা ঘটবেই”। (সহি বুখারি : ৩৬৮২)
আয়েশার সঙ্গে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের বিবাহ তাঁর নিজস্ব মত ছিল না। বরং এটা খাওলা বিন্ত হাকিম নামের একজন মহিলার অভিমত ছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল সম্বন্ধের মাধ্যমে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের তাঁর প্রিয়তম বন্ধু আয়েশার পিতা আবু বাকরের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও বলিষ্ঠ করা।
আবু বাক্র (রাঃ) ছিলেন ইসলামের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের ঘনিষ্টতম বন্ধু। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের পর তিনিই ছিলেন প্রথম ধর্মপরায়ণ খলিফা।
তাঁর বন্ধু আবু বাকরের প্রতি তাঁর অনুরাগ ওই প্রস্তাব গ্রহণের প্রতি তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল আর এর উদ্দেশ্য ছিল তাঁর তাঁদের মধ্যে সম্পর্কের বলিষ্ঠকরণ।
এও উল্লেখ্য যে, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে বিবাহের পূর্বে জুবায়ের বিন মুতয়িম নামে এক ব্যক্তি সাথে আয়েশার বিবাহের চুক্তি হয়েছিল। যদিও আবু বাকর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন বলে জুবায়েরের পিতামাতা ওই চুক্তি বাতিল করেছিল।
এখান থেকে এও ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, তৎকালীন আরবে বাল্যবিবাহ খুব সাধারণ এবং ব্যাপক প্রচলিত প্রথা ছিল, কেউ তা অস্বীকার বা তাতে আপত্তি করত না। তাছাড়া বিবাহের পর আয়েশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের জীবনে উচ্চস্থান অধিকার করেছিলেন।
আরবের প্রচলিত কর্মকাণ্ড
এটাও ছিল তৎকালীন আরবের স্বাভাবিক ঐতিহ্য
ইমাম শাফিয়ী বলছেন : “ইয়ামানে অবস্থানকালী নয় বছরের অনেক এমন মেয়ের সাথে আমার আকস্মিক সাক্ষাত ঘটেছে যাদের ঋতুস্রাব হত”। (সিয়ারুল আ’লাম আল-নুবালা, ১০ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯১)
ইমাম বায়হাকিও ইমাম শাফিয়ীর উক্তি বর্ণনা করছেন : “আমি (ইয়ামানের) সানা শহরে এক নানীকে দেখেছি, তখন তার বয়স ছিল ২১ বছর। নয় বছর বয়সে তার ঋতুস্রাব শুরু হয় এবং দশ বছর বয়সে সে সন্তানের জন্ম দেয়”। (সুনানে বায়হাকি কুবরা : ১/৩১৯)
ইবনুল জাওযিও ইবনে উকাইল এবং উবায়েদ আল-মাহ্লভি হতে অনুরূপ ঘটনা বর্ণনা করেছেন : আব্বাদ ইবনে আব্বাদ আল-মাহলভি বলছেন : “আমি মুহ্লাভার একটি মহিলাকে প্রত্যক্ষ করেছি যে আঠারো বছর বয়সে নানী হয়েছিল। সে তার (মেয়ে সন্তানের) জন্ম দিয়েছিল নয় বছর বয়সে এবং তার মেয়েও একটি সন্তানের জন্ম দেয় নয় বছর বয়সে, এভাবে মহিলাটি আঠারো বছর বয়সে নানী হয়ে যায়”। (তাহ্ক্বীক্ব ফী আহাদিস আল-খিলাফ, ২য় খণ্ড, পৃঃ ২৬৭)
খ্রিষ্টান ধার্মিক ব্যক্তিবর্গ, রাজা, রাজকীয় লোক এবং গণ্যমান্যদের বিবাহ
জোশেফের সঙ্গে মেরির বিবাহ, ক্যাথোলিক ইন্সাইক্লোপিডিয়া বলছে :
“…… মেরিকে বিবাহ করতে একজন শ্রদ্ধেয় মানুষ, সেসময় তাঁর (মেরির) বয়স ১২ থেকে ১৪ বছর, জোশেফ যাঁর বয়স সেসময় ৯০ বছর, প্রস্থান করলেন……”। (http://www.newadvent.org/cathen/08504a.htm)
“ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৪ বছর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১২ বছর বিবাহযোগ্য বয়স, অকার্যকর রাখা শাস্তিযোগ্য (যতক্ষণ না স্বাভাবিক বয়ঃসন্ধি বছরগুলির চাহিদা পূরণ করে [অর্থাৎ যদি বয়ঃসন্ধি ১২ বছরের আগে ঘটে])…। এটা ইংল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগাল, গ্রীকের ধর্মসম্মত বয়স (আয়োনিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এর ব্যতিক্রম, ওখানে ওই বয়স ১৬ এবং ১৪), এমনকি অস্ট্রেলিয়ার ক্যাথোলিকদের নিকট সেটা ধর্মসম্মত বয়স। পরন্তু, ১৪ এবং ১২ বছরের ধর্মসম্মত বয়সটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশে এখনো বিরাজ করছে, তবে অন্যান্য জায়গায় সংবিধান অনুযায়ী তা বাড়ানো হয়েছে”।
(Catholic Encyclopedia, http://www.newadvent.org/cathen/01206c.htm)
অন্যত্র, ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া বলে:
“সাধারণ আইনে, যে বয়সে ছোটোরা বিবাহের উপযুক্ত হয় যা সম্মতির বয়স হিসেবে পরিচিত, তা নির্ধারিত হয় ছেলেদের জন্য ১৪ বছর এবং মেয়েদের জন্য ১২ বছর। সাত বছরের কম বয়সে উভয়ের বিবাহ বাতিল ছিল, কিন্তু সাত এবং সম্মতির বয়সের (ছেলেদের জন্য ১৪ এবং মেয়েদের জন্য ১২ বছর) মাঝামাঝি সময়ে তারা একটি অসম্পূর্ণ বিবাহের চুক্তি করতে পারে যা বাতিলযোগ্য হলেও একান্তভাবে বাতিল নাও হতে পারে। (Catholic Encyclopedia, http://www.newadvent.org/cathen/09691b.htm)
যদিও বারো বছর সাধারণ নির্দেশিকা ছিল, তবে খ্রিষ্টান ফাদারদের জন্য তার পূর্বেই তাদের কন্যাদের বিবাহ দেওয়ার অনুমতি ছিল। আমরা পড়ি :
মধ্যযুগীয় খ্রিষ্টানগণ নারী-বিবাহের জন্য বারো বছরের বয়সকেই বজায় রেখেছিল। তবে এই নিম্ন সময়সীমাই চুড়ান্ত ছিল না। প্রাকৃতিক আইন যুক্তিবিজ্ঞান ব্যবহার করে ক্যাথোলিক কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত দেয় যে, যে চরম নির্ণায়ক বিবাহের জন্য সন্তানের প্রস্তুতি এবং যৌনসম্পর্ককে নির্ধারণ করে তা হলো বয়ঃসন্ধির সূত্রপাত, এই ধরনের বয়স একান্ত জরুরি নয়। এক ক্যাথোলিক বিদ্বানের অভিমত : “যদি সন্তোষজনকভাবে প্রমাণিত হয় যে, ছেলে তার ১৪ বছর বয়স পূর্ণ করার পূর্বেই কিংবা মেয়ে তার ১২ বছর বয়স পূর্ণ করার পূর্বেই বয়ঃসন্ধিতে সত্যিসত্যিই উপনীত হয়েছে তাহলে ব্যক্তিবিশেষ একটি বৈধ বিবাহের বন্ধনে তাদেরকে আবদ্ধ করতে পারে”। (Mark E. Pietrzyk, http://www.internationalorder.org/scandal_response.html)
ইহুদি আইনের ন্যায় খ্রিষ্টান আইন বিবাহের নিম্ন সময়সীমা এবং চরম নিম্ন সময়সীমার মধ্যে পার্থক্য করেছে। বিবাহের নিম্ন সময়সীমা বারো বছর, যাকে সম্মতির বয়স বলা হয়; অন্য শব্দে, একটি মেয়ে নিজের বিবাহের ব্যবস্থা নেওয়ার পূর্বে তাকে বারো বছরের হতে হবে। কিন্তু বিবাহের চরম নিম্ন সময়সীমা সাত বছর যখন তার পিতা তার অনুমতি ছাড়াই তার বিবাহের ব্যবস্থা করতে পারে।
১। সেন্ট আউগুস্টাইন : সেন্ট আউগুস্টাইন, খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ব প্রণয়নে যাঁর উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব ছিল, একটি দশ বছর বয়সী মেয়ের বাগদত্তা ছিলেন। সেসময় তাঁর বয়স ছিল ৩১ বছর। তার শরীর পরিণত হোক, এই অপেক্ষায় তিনি দুবছর ছিলেন। তারপর মেয়েটি বারো বছর বয়সে সেন্ট আগুস্টাইনের সংস্পর্শে যায়। এরপরও কীভাবে খ্রিস্টানরা নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের উপর এই বলে আক্রমণ করতে পারে যে, তিনি মাত্র নয় বা দশ বছর বয়সী আয়েশাকে বিবাহ করেছিলেন, অথচ তার শ্রদ্ধাভাজন সেন্ট আউগুস্টাইন একটি দশ বছরের মেয়ের বাগদত্তা হয়েছিলেন ?
আমরা পড়ি :
একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ এবং একটি অল্প বয়সী বালিকার মধ্যে এই ধরনের বাগ্দানের একটি উদাহরণ সেন্ট আউগুস্টাইনের (৩৫৪-৪৩৯ খ্রিঃ) বাগ্দান। ৩১ বছর বয়সে আউগুস্টাইন একটি দশ বছরের মেয়ের সঙ্গে বাগ্দান করেছিলেন।
(Mark E. Pietrzyk, http://www.internationalorder.org/scandal_response.html)
২। সেন্ট আগ্নেস : ইতিহাসের আরেকজন অত্যন্ত বিখ্যাত খ্রিস্টান মহাপুরুষ সেন্ট আগ্নেস। তিনি সতীত্বের পৃষ্ঠপোষক সেন্ট হিসেবে পরিচিতা ছিলেন। তিনি বারো বছরেরও কম বয়সে বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। এরপরও খ্রিস্টানরা তাদের নাক তুলে যখন আমরা মুসলমানরা বলি যে, আয়েশা (রাঃ) ওই একই রকম বয়সে বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন ?
Domestic-Church.com মন্তব্য করে :
গ্রীক ভাষায় সেন্টা আগ্নেস নামের অর্থ সতী বা পবিত্র এবং ল্যাটিন ভাষায় এর অর্থ নির্দোষ শিশু বা প্রতারিত লোক। তিনি সর্বদা চার্চ কর্তৃক পবিত্রতার বিশেষ পৃষ্ঠপোষিকা হিসেবে গণ্য হয়েছেন। তিনি খুব ছোটো বেলায় ডাইওক্লেতিয়ানের নিগ্রহের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। ডাইওক্লেতিয়ান তার খ্রিস্টান নিপীড়ন শুরু করেছিল ৩০৩ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে। যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১২ বা ১৩ বছর। এই তরুণ বয়সেই তাঁর ধনসম্পদ ও সৌন্দর্য রোমের সম্ভ্রান্ত তরুণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তারা তাঁকে বিয়ে করার জন্য পরস্পপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছিল। (Domestic-Church.com, http://www.domesticchurch.com/CONTENT.DCC/19980101/SAINTS/STAGNES.HTM)
৩। আন্ডেচসের সেন্ট হেডউইগ : সেন্ট হেডউইগ খ্রিস্টানদের দ্বারা অনাথদের অভিভাবক সেন্টস্বরূপ সম্মানিত হয়েছিলেন। বারো বছর বয়সে তাঁর বিবাহ দেওয়া হয়েছিল সিলিজিয়ার হেনরি ১-এর সঙ্গে।
৪। কস্কিয়ার সেন্ট রিতা : তিনি খ্রিস্টানদের নিকট নৈরাশ্যপূর্ণ লোকদের অভিভাবক সেন্ট হিসেবে গণ্য করা হত। বারো বছর বয়সে পাওলা মানসিনি নামক একজন লোকের সঙ্গে তাঁর বিয়ের কথা পাকা হয়।
৫। সেন্ট মেরি অফ যিসাস ক্রুসিফাইড : তেরো বছর বয়সে তাঁর বিবাহের কথা পাকা করা হয়।
৬। পর্তুগালের সেন্ট এলিজাবেথ : তিনি ছিলেন সেন্ট ফ্রান্সিসের তৃতীয় আদেশের রক্ষাকর্তা। বারো বছর বয়সে তাঁর বিবাহ হয়েছিল।
৭। সেন্ট জোসেফ : যিশুর অনুমোদিত পালক পিতা, তিনি ৯০ বছর বয়সে বারো বছরের মেরিকে বিবাহ করেছিলেন। কারো কারো দাবি : সেসময় তাঁর বয়স ৯০ নয়, বরং ৩০ বছর ছিল। কিন্তু অনস্বীকার্য সত্য যে, তিনি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ হয়ে বারো বছরের মেয়েকে বিবাহ করেছিলেন।
শ্রদ্ধাভাজন খ্রিস্টান সেন্টদের আরও অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে ……।
১। দ্বিতীয় কিং রিচার্ড ত্রিশ বছর বয়সে একজন ফরাসি রাজকুমারীকে বিবাহ করেছিলেন। তাঁর নাম ইসাবেলা, সেসময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র সাত বছর। http://en.wikipedia.org/wiki/Isabella_of_Valois
২। মিলানের জাঁদরেল মহিলা স্যাভয় বিয়াঙ্কার বিবাহ হয়েছিল তেরো বছর বয়সে। http://www.academia.edu/990174/Medieval_Marriage
৩। থিওডোরা কমনেনার তেরো বছর বয়সে বিবাহ হয়েছিল তৃতীয় কিং ব্যাল্ডউইনের সঙ্গে যাঁর বয়স সেসময় তাঁর দ্বিগুণ বেশি ছিল। http://www.academia.edu/990174/Medieval_Marriage
৪। প্রথম কিং আন্ড্রোনিকোস কোমনেনোস, বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের নির্ভীক খ্রিস্টান নেতা, ৬৪ বছর বয়সে ফ্রান্সের বারো বছরের আগ্নেসকে বিয়ে করেছিলেন। http://www.academia.edu/990174/Medieval_Marriage
http://en.wikipedia.org/wiki/Jeanne_d’Albret
৫। পর্তুগালে রাজা ডেনিস পর্তুগালের বারো বছর বয়সী সেন্ট এলিজাবেথকে বিবাহ করেছিলেন।
৬। গিরোলামা রিয়ারিও, ইমোলা ও ফোরলির প্রধান ধর্মযাজক নয় বছরের ক্যাটারিন স্ফোর্জাকে বিবাহ করেছিলেন।
৭। ন্যাভেরার তৃতীয় জিয়ান্নার বিবাহ দেওয়া হয়েছিল তেরো বছর বয়সে। http://en.wikipedia.org/wiki/Jeanne_d’Albret
৮। জিওভান্নি স্ফোর্যা তেরো বছরের লিওক্রিজিয়া বোরজিয়াকে বিবাহ করেছিলেন। http://en.wikipedia.org/wiki/Giovanni_Sforza
৯। নরওয়ের ষষ্ঠ রাজা হাকোন দশ বছরের রাণী মার্গারেটকে বিবাহ করেছিলেন। http://en.wikipedia.org/wiki/Margaret_I_of_Denmark
১০। এসেক্সের কাউন্ট আগ্নেসের বিয়ের পাকা কথা হয়ে গিয়েছিল মাত্র তিন বছর বয়সে এবং বারো বছর বয়সে তার বিবাহ হয়েছিল এমন একজনের সঙ্গে যার বয়স ছিল প্রায় পঞ্চাশ বছর। http://en.wikipedia.org/wiki/Isabella_of_Angoul%C3%AAme
১১। ওয়েলসের প্রিন্স এডওয়ার্ড বিবাহ করেছিলেন ফরাসির রাজকন্যা ইসাবেলাকে যার বয়স ছিল মাত্র সাত বছর।
১২। দ্বিতীয় রোমানোস ইতালির রাজকন্যা বার্থাকে (নতুন নাম ইউডোকিয়া) বিবাহ করেছিলেন, সেসময় রাজকন্যার বয়স ছিল মাত্র চার বছর।
১৩। স্টেফিন মিলুটিন, সার্বিয়ার ক্রাল সম্রাট দ্বিতীয় এন্ড্রোনিকোসের কন্যা সিমোনিসকে বিবাহ করেছিলেন। বিবাহের সময় তার বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর এবং স্টেফিনের বয়স ছিল পঞ্চাশ বছর।
১৪। প্রথম এডওয়ার্ড নয় বছর বয়সের ক্যাস্টিলের এলানরকে বিবাহ করেছিলেন।
১৫। রিচার্ড শ্রিয়ুজবারি, চতুর্থ রাজা এডওয়ার্ড-এর পুত্র, নরফোল্কের পাঁচ বছরের আন্নে মউব্রেকে বিবাহ করেছিলেন। http://en.wikipedia.org/wiki/Richard_of_Shrewsbury,_1st_Duke_of_York
১৬। মেরি স্টেওর্ট অষ্টম হেনরিকে বিবাহ করেছিলেন যখন তার বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর। http://en.wikipedia.org/wiki/Mary,_Queen_of_Scots
এছাড়া আরও অনেক উদাহরণ আছে ……।
বিবাহের সময় নবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শত্রুদের প্রতিক্রিয়া কী ছিল ?
কুরাইশ গোত্রের লোক নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে অপমান ও অসম্মান করতে কোনো সুযোগ হাতছাড়া করেনি। তারা তাঁর প্রতি অপমানের বারি বর্ষণের সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে পেয়েছিল এই বিবাহকে। কিন্তু তারা এই বিবাহ-চুক্তির মধ্যে অন্যায় কিছু দেখেনি এবং তারা আয়েশাকে নবির বিবাহের প্রস্তাবের সংবাদটিকে স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিতরূপেই নিয়েছিল।
আয়েশা (রাঃ) কখনো অসম্মতি প্রকাশ করেননি অথবা আয়েশার বিবাহ ও সম্মতি
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, আয়েশার সহস্রাধিক বর্ণনার মধ্যে একটিও এমন বর্ণনা পাওয়া যায় না যা থেকে বোঝা যে, তিনি বিবাহতে অসন্তুষ্ট বা অসম্মত ছিলেন। তাই এই সম্পর্কে তাঁর কোনো অসুবিধা ছিল না। সত্যি বলতে কি, বিভিন্ন রিওয়ায়াত থেকে স্পষ্ট যে, তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন, একনকি তাঁর পাশে কাউকে দেখলে তিনি ইর্ষান্বিত হতেন। এটা থেকে কি প্রমাণিত হয় না যে, তিনি এই বিবাহে অত্যন্ত খুশি ছিলেন ? সুতরাং, যখন তাঁর নিজের কোনো সমস্য নেই তাহলে তা নিয়ে অন্যদের উদ্বেগ কেন ?
আয়েশা (রাঃ) এই বিবাহতে অত্যধিক খুশি ছিলেন। তিনি হয়ে ওঠে ছিলেন নবি (সাঃ)-এর সর্বশ্রেষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক এবং তিনি তাঁর নিকটে ইসলামের বিষয়ে অনেক কিছু শিক্ষালাভ করেছিলেন। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের অনেক পুরুষ ও নারীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা। তাঁর পিতামাতাও ছিলেন এই বিবাহতে যথেষ্ট সন্তুষ্ট। নবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সমসাময়িক, বন্ধু হোক বা শত্রু, কেউ এই বিবাহতে বিস্মিত হয়েছিল বা এর বিপক্ষে অভিযোগ করেছিল, এমন কোনো তত্ত্ব পাওয়া যায় না।
বিবাহের পশ্চাতে মহাপ্রজ্ঞা
নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে আয়েশার বাল্যবিবাহই তাঁকে তাঁর (নবির) জীবনের ব্যক্তিগত যাবতীয় বিষয়ের প্রত্যক্ষদর্শী করেছিল এবং পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত পৌঁছানোর সুযোগ করে দিয়েছিল। তরুণ বয়সে মানুষের তীক্ষ্ণ মেধা এবং পর্যবেক্ষণের বিশাল অনুভূতি থাকে। অতঃপর তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর ৪৬ বছর জীবিত ছিলেন এবং ওই সময়কালে তিনি মানুষকে শিক্ষা দিতে থাকেন ইসলামের বিভিন বিষয়, বিশেষত পারিবারিক এবং বৈবাহিক জীবনের বিষয়াদি।
বিবাহ আয়েশাকে ধর্মীয় ও দৈহিকভাবে নবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকটবর্তী করেছিল যা তাঁকে সমগ্র মুসলিমজাতি, বিশেষত মহিলাদের জন্য চিরস্থায়ী দৃষ্টান্ত করে তুলেছে। তিনি আধ্যাত্মিক শিক্ষিকা ও পণ্ডিত হিসেবে বিকশিত হয়েছিলেন, কারণ তিনি ছিলেন সাতিশয় বুদ্ধিমতি ও জ্ঞানী। তাঁর গুণাবলি নবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কার্য তথা ইসলামের বিষয়ে সাহায্য করেছিল। মুমিনদের মা,আয়েশা (রাঃ)স্ত্রী ও মায়েদের জন্য শুধুমাত্র একটি মডেল ছিলেননা, বরং তিনি ছিলেন কুরআনের একজন ভাষ্যকার, হাদিসে রাবি এবং ইসলামি আইনজ্ঞ।
তিনি কমপক্ষে ২,২১০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন যা মুসলমানদেরকে শেষনবি (সাঃ)-এর দৈনন্দিন জীবন এবং আচার-ব্যবহারের মধ্যে অন্তর্দৃষ্টি দান করে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ সংরক্ষণে সাহায্য করে।
ইসলামের পণ্ডিতগণের দাবি, তাঁকে বাদ দিলে ইলমে হাদিসের (ইসলাম ও হাদিসের জ্ঞান) অর্ধেকাংশ বিনষ্ট হয়ে যেত।
আয়েশা (রাঃ) সর্বদা সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বহু মানুষকে ইসলাম শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি ছিলেন ইসলামি আইনের অনেক বিষয়ে, বিশেষ করে মহিলা সংক্রান্ত বিষয়াদির বিশ্বস্ত সূত্র।
শিক্ষিকা হিসেবে তিনি সুস্পষ্ট ও আকর্ষণীয় বচনভঙ্গির অধিকারী ছিলেন। আল-আহ্নাফ বাগ্মিতায় তাঁর ক্ষমতাকে চরম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বলে বিবরণ দিয়েছেন। তিনি বলছেন : “আজ পর্যন্ত আমি আবু বাক্র, উমার, উসমান ও আলি এবং খলিফাদের (রাঃ) বক্তৃতা শুনেছি, কিন্তু আয়শার মুখে যা শুনেছি তার থেকে অধিক সুন্দর ও উৎসাহব্যঞ্জক বক্তৃতা আর কারো মুখে শুনেনি”।
আবু মুসা আশআরি (রাঃ) বর্ণনা করছেন : রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “আয়েশার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য মহিলাদের উপর ঠিক তেমন যেমন সারিদের (মাংস ও রুটির মিশ্রনে তৈরি খাদ্যবিশেষ) শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর উপর। পুরুষদের মধ্যে অনেকেই পূর্ণতার স্তরে পৌঁছেছে কিন্তু নারীদের মধ্যে ইমরানের কন্যা মারয়াম এবং ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া ব্যতীত অন্য কেউ পূর্ণাঙ্গ হয়নি”। (সহি বুখারি : ৩২৩০)
মুসা ইবনে তালহা (রাঃ) বলছেন : “আয়েশা থেকে বেশি বাগ্মী ও বাকপটু আমি কাউকে দেখিনি”।(মুস্তাদরাক হাকিম, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১১)
এখান থেকে ঐশী প্রজ্ঞা পরিষ্কার হয়ে যায়, কারণ এটা স্বয়ং রসূলুল্লাহ্র পক্ষ হতে ছিল না, বরং এই বিবাহের প্রতি আল্লাহ্ তাআলার নির্দেশ ছিল। আয়েশা নিজেই বর্ণনা করছেন : রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন : “তোমাকে বিবাহ করার পূর্বে আমার স্বপ্নে তোমাকে দুবার দেখানো হয়েছে। আমি দেখলাম, একজন ফেরেশ্তা তোমাকে এক টুকরো রেশমের কাপড়ে আবৃত করে নিয়ে আছে; আমি তাঁকে বললাম : খোলো, অতঃপর দেখলাম : এটা তুমিই ছিলে”। (সহি বুখারি : ৬৪৯৫)
যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে, আয়েশা কীসের জন্য বিখ্যাত ছিলেন ?
তাঁর কী বিশেষত্ব ছিল ?
সৌন্দর্য ?
ধনসম্পদ ?
না ! এটা ছিল ধর্ম ! এখান থেকেই ঐশী যুক্তি প্রমাণিত হয়।
ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মে বিবাহের বয়স
তাদের উচিৎ ইহুদি ধর্মের উপরও ফোকাস করা যা তিন বছর একদিনের মেয়ের বিবাহকে অনুমোদন করে।
ইহুদি ওয়েবসাইট, Jewfaq.org, উল্লেখ আছে:
“ইহুদি আইনে বিবাহের বয়সের নিম্ন সীমা ছেলেদের জন্য ১৩ বছর এবং মেয়েদের জন্য ১২ বছর, তবে বাগ্দান তার পূর্বেই হতে পারে, আর মধ্যযুগে প্রায়ই এরকম ঘটেছে…”। (JewFaq.org, http://www.jewfaq.org/marriage.htm)
বারো বছর বয়স বয়ঃসন্ধির দ্বারপ্রান্ত। ইহুদি আইনে এই বয়সে বিবাহ কেবল অনুমোদিতই নয়, বরং সক্রিয়ভাবে এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং পিতাদের উপদেশ দেওয়া হয় তাদের প্রাপ্তযৌবন কন্যাদের দ্রুত বিবাহ দিতে।
অনেক ইহুদি বিদ্বানের অভিমত, কোনো মেয়ে যেমনই বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হয় কোনো দেরী না করে তার বিবাহ করে দেওয়া উচিৎ। ইহুদি এন্সাইক্লোপিডিয়াতে উল্লেখ আছে :
রব্বিদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী বাইবেলের প্রথম ইতিবাচক আজ্ঞা হলো মানব প্রজাতির প্রচার সংক্রান্ত। তাই মনে করা হয় যথাসম্ভব দ্রুত বিবাহ করা প্রত্যেক ইস্রায়িলির দায়িত্ব……। একাংশ দৃঢ়স্বরে বলে যে, বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছতেই সন্তানদের বিবাহ দেওয়া উচিত”। (Jewish Encyclopedia, http://www.jewishencyclopedia.com/view.jsp?letter=M&artid=216)
ওল্ড টেস্টামেন্টে রেফকার সঙ্গে ইসহাক বিন ইব্রাহিম (আঃ)-এর বিবাহের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। বিয়ের সময় রেফকার বয়স ছিল তিন বছর। জিনেসিস-তে উল্লেখ আছে : ইসহাকের জন্মের সময় সারার বয়স ছিল ৯০ বছর। তখন ইব্রাহিম মাটিতে মুখমণ্ডল রেখে মনেমনে বলেছিলেন : “এমন একজন মানুষের কি কোনো সন্তান জন্মলাভ করতে পারে যার বয়স ১০০ বছর ? আর সারা কি কোনো সন্তানের জন্ম দেবে যখন তার বয়স ৯০ বছর”। (জিনেসিস ১৭:১৭)
যে বছর সারা মৃত্যুবরণ করেন সেই বছরই রেফকা জন্মলাভ করেন : “বথুয়েল রিবেকার পিতা হলেন। মিলকাহ্ ইব্রাহিমের ভ্রাতা নূহ সহ আট সন্তানের জন্ম দেন”। পরের অধ্যায়ের প্রথম অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে : “সারা ১২৭ বছর জীবিত ছিলেন” অর্থাৎ ইসহাক সেসময় ৩৭ বছরের ছিলেন এবং রেফকা ছিলেন একদম শিশু।
যখন ইসহাক ৪০ বছরে উপনীত হলেন এবং রেফকা তিন বছরে তখন ইসহাক তাঁকে বিবাহ করেন। “আর তিনি চল্লিশ বছরের ছিলেন যখন তিনি পদ্দান অরামের অরামীয় এবং অরামীয় লবানের বোন বাথুয়েলকে বিবাহ করেছিলেন”। (জিনেসিস ২৫:২০)তালমুদ (গ্রন্থ) এমন বিবাহ সম্বন্ধ তৈরির অনুমতি দিত যদিও মেয়ে বাচ্চা হত। এতে তারা নিম্নের শিক্ষার অনুসরণ করত :
স্যানহেডরিনের (মহাসভার) ৫৫তম আজ্ঞা বর্ণনা করেছে : “একটি তিন বছর একদিনের কুমারিকে রতিক্রিয়া দ্বারা বিবাহের মধ্যে আনা যেতে পারে”। তালমুদ স্যানহেডরিনের (মহাসভার) ৫৪তম আজ্ঞা বর্ণনা করেছে : নয় বছরের কম বয়সী কিশোরের সঙ্গে পেডেরাস্টি (পেডেরাস্টিবলতে বোঝায় কোনো প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের সঙ্গে তাঁর নিকটাত্মীয় নয় এমন কোনো কিশোর বালকের (প্রধানত যৌন) সম্পর্ক) তার থেকে বড়ো কিশোরের সঙ্গে পেডেরাস্টির মতো গণ্য করা হয় না”।
তালমুদ খেথুবথের ১১শ আজ্ঞায় উল্লেখ আছে : একটি পূর্ণবয়স্ক মানুষ এবং একজন যুবতীরমধ্যে যৌন মিলনএকটিসাধারণ বিষয়”। তাছাড়া সাঈদ রাবি জোসেফ লিখছেন : “তিন বছর একদিনের মেয়ে যৌনমিলন করতে পারে”।
পরিশেষে আমরা মার্ক ই. পিটারযাইকের উক্তি দিয়ে এই প্রসঙ্গ বন্ধ করছি :
তালমুদে উল্লেখ আছে : বিবাহের জন্য প্রস্তাবিত বয়স নারীদের জন্য বারো বছরের কিছু বেশি এবং পুরুষদের জন্য তেরো বছর। এর কম বয়সে বিবাহে সাধারণত অসম্মতি প্রকাশ করা হয়। তবে পিতা নিজের মেয়ের বাল্যবয়সেই অন্য পুরুষের সাথে বাগ্দান করতে পারে, এবং যৌনমিলনকে বিবাহচুক্তির মোহরের বৈধ উপায় হিসেবে গণ্য করা হয়। যৌনমিলনের মাধ্যমে বিবাহচুক্তির বয়সসীমা নির্ধারণ বিভৎস ঘৃণ্য। তালমুদে উল্লেখ আছে : “যৌনমিলনের মাধ্যমে একটি তিন বছর একদিন বয়সী মেয়ের বিবাহচুক্তি করা যেতে পারে”। (Mark E. Pietrzyk, http://www.internationalorder.org/scandal_response.html)
সুতরাং ইহুদি ধর্মে একটি তিন বছরের মেয়ের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়, তবে একটি নয় বছরের কুমারিকে বিবাহ করার কারণে নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সমালোচনা তারা করছে কেন ?
হিন্দু ধর্মে বিবাহের বয়স
মনু-স্মৃতির মতো প্রসিদ্ধ হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে আমরা পড়ি :
গৌতম (১৮-২১) – বয়ঃসন্ধির পূর্বেই একজন মেয়ের বিবাহ দেওয়া উচিত।
ভসিষ্ঠ (১৭.৭০) – রজঃস্রাব শুরু হওয়ার আশঙ্কা হলেই, যখন মেয়ে নগ্ন শরীরেই দৌড়ে বেড়ায় তখনই তার পিতার উচিত তার বিবাহ দিয়ে দেওয়া। কারণ বয়ঃসন্ধির পর সে গৃহে অবস্থান করলে তার পাপ পিতার উপর এসে পড়ে।
বৌদ্ধায়ন (৪.১.১১) – যখন কন্যা প্রায় নগ্নদেহে ঘুরে বেড়ায় তখনই তার পিতার উচিত তাকে এমন একজন লোকের হাতে তুলে দেওয়া যে সতীত্বের ব্রত ভঙ্গ করেনি এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী, অথবা এমন লোকের সঙ্গে হলেও যে উত্তম চরিত্র হতে নিঃস্ব; বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হওয়ার পর কন্যাকে সে যেন গৃহে না রাখে। (মনুIX, ৮৮; http://www.payer.de/dharmashastra/dharmash083.htm)
The Encyclopedia of Religion and Ethics (ধর্ম ও নৈতিকতার এনসাইক্লোপিডিয়া)-তেউল্লেখ আছে :
“কন্যাকে বিবাহ ছাড়াই বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছতে দিলে পিতা পাপী হয় এবং মেয়েটি নিজেকে একজন সুদ্রের (নিম্ন উপজাতি) স্তরে নিপতিত করে। মনু-স্মৃতি স্বামী এবং স্ত্রীর বয়স স্থির করে যথাক্রমে ৩০ এবং ১২ অথবা ২৪ এবং ৮ বছর; বৃহস্পতির পরের কার্য এবং মহাভারতের নীতিমূলক অংশ এই ক্ষেত্রগুলিতে স্ত্রীর বয়স স্থির করে যথাক্রমে ১০ এবং ৭। পরের অংশে উল্লেখ আছে : নিম্নসীমা ৪ থেকে ৬ বছর এবং উর্ধ্বসীমা ৮ বছর। এই দিনগুলি নিছক তাত্ত্বিক ছিল না, এর পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে। (Encyclopedia of Religion and Ethics, p.450,
ইসলাম ধর্মে বিবাহের বয়স
ইসলাম বয়ঃসন্ধিকে বিয়ের বয়স বলে নির্ধারণ করে, কেননা এটাই বাল্য এবং যৌবনের মধ্যে প্রাকৃতিক বিভাজক রেখা। রজঃস্রাব ইঙ্গিত করে যে, একজন যুবতী মেয়ে বাল্যকাল অতিক্রম করেছে। এই বয়স বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভিন্ন হতে পারে, কিন্তু এটা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, নির্বিচারে নয়।
ইসলামি আইন (শারিয়াহ্) প্রকৃত বিবাহ সুসম্পন্ন করার কয়েক বছর পূর্বে বিবাহচুক্তি সম্পাদন করার অনুমতি দেয়। বিবাহচুক্তি প্রণীত হয় কিন্তু পরবর্তী তারিখ পর্যন্ত চুক্তিটি কার্যকর হয় না। তাই যদিও বিবাহচুক্তি সম্পাদিত হয়ে যায়, তথাপি বহু বছর পর্যন্ত মেয়েকে স্বামীর হাতে সোপর্দ করা হবে না। অন্য শব্দে, একজন পিতা তার অপরিণত কন্যার বিবাহ তার বয়স হওয়ার পূর্বেই কোনো ব্যক্তির সাথে করতে পারে, কিন্তু মেয়ে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত স্বামী তার সাথে বিবাহের নির্জনবাস করতে পারবে না।
ইসলামি আইনে বিবাহচুক্তি কার্যকর করার জন্য কিছু বিশেষ শর্ত আছে। তন্মধ্যে একটি শর্ত : বিবাহের নির্জনবাসের জন্য উভয়কেই বিবাহের উপযুক্ত ও পরিণত হতে হবে। যদি এই শর্তটি ব্যহত হয় তাহলে বিবাহচুক্তি স্থগিত থাকবে এবং এর কোনো প্রকৃত ব্যবহারিক প্রভাব থাকবে না, অর্থাৎ বিবাহের নির্জনবাস ততদিন পর্যন্ত স্থগিত থাকবে যতদিন না মেয়েটি তার যথেষ্ট উপযুক্ত হয়ে যায়। নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এবং আয়েশার উদাহরণে, বিবাহচুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল যখন তিনি অপরিণত ছিলেন, কিন্তু তা কার্যকর হয়েছিল তাঁর পরিণত হওয়ার পর। এজন্যই বিবাহচুক্তি সাক্ষরিত হওয়ার পর তিন বছর ধরে আয়েশা তাঁর পিতৃগৃহেই ছিলেন।
ইহুদি ও খ্রিস্টান আইনের ন্যায় – ইসলামি আইনেও তাদের নির্জনবাসের পরেই বিবাহ সুনিশ্চিত হয় (অর্থাৎ যখন দম্পতির মধ্যে যৌনমিলন ঘটে)। কতিপয় মুসলিম বিদ্বানের অভিমত যে, ইসলামি আইনে বিবাহের নিম্ন বয়স নয় বছর কিংবা আদ্যঋতু (রজঃস্রাবের সূত্রপাত)। কিন্তু একথা সঠিক নয়; প্রকৃতপক্ষে ইসলামে কোনো নির্দিষ্ট নিম্ন বয়সসীমা নেই।
বরং, ইসলামী আইন এই সহজ নীতিবাক্য অনুসরণকরে :
একজন মানুষ তার স্ত্রীর সঙ্গে তখনই যৌনমিলন করতে পারে যখন সে যৌনতার দিক থেকে এতটাই পরিপক্ক হয় যে, যৌনমিলনের ফলে সে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হয় না।
প্রকৃতপক্ষে এটাই সবার জন্য সবচেয়ে সুন্দর এবং সর্বব্যাপক নিয়ম। ইজমা (ঐক্য) কর্তৃক ইসলামি বিদ্বানগণ উপরে বর্ণিত নীতিবাক্যের প্রতি সম্মত হয়েছেন। অন্য শব্দে, বিবাহের বিষয়ে একমাত্র অলঙ্ঘনীয় নিয়ম হলো : একজন মানুষ তার স্ত্রীর সঙ্গে কেবল তখনই যৌনমিলন করতে পারে যখন সে যৌনতার দিক থেকে এতটাই পরিপক্ক হয় যে, যৌনমিলন করলে সে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হয় না।
ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মশাস্ত্রের বিশ্লেষণ
তালমুদ (ইহুদি ধর্নশাস্ত্র)-তে উল্লেখ আছে : “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাবালকত্বে পদার্পণ করার পরে পরেই স্বীয় কন্যার বিবাহ করে দেওয়া উচিত যদিও কারো ভৃত্যের সাথে হয় (তালমুদ হতে গৃহীত, পেসাচিম ১১৩এ)”।
বাইবেলীয় সময়ে সাবালকত্ব বলতে বোঝানো হত বয়ঃসন্ধির বয়সকে অথবা অল্প বয়সকে।
জোসেফের সঙ্গে মেরির বিবাহের বিষয়ে ক্যাথোলিক এন্সাইক্লোপিডিয়াতে (http://www.newadvent.org/cathen/08504a.htm), উল্লেখ আছে :
“যখন বয়স চল্লিশ বছর, তখন জোসেফ এক মহিলাকে বিবাহ করেন। কেউ কেউ বলেন তার নাম ছিল মেলচা বা এসচা আর কেউ কেউ বলেন তার নাম ছিল স্যালোম; তাঁরা একসাথে ৪৯ বছর জীবন যাপন করেন এবং তাঁদের ছয় সন্তান ছিল, দুই কন্যা এবং চার পুত্র, তাদের মধ্যে কনিষ্ঠতম ছিল জেম্স। তাঁর বউয়ের মৃত্যুর এক বছর পর যিহূদিয়ার মাধ্যমে পুরোহিত ঘোষণা করলেন যে, তাঁরা যিহূদা গোত্রে একজন সম্ভ্রান্ত লোককে পেতে চাই যে মেরিকে বিবাহ করবেন, সেসময় মেরির বয়স ছিল ১২-১৪ বছর। জোসেফ অভ্যর্থীদের সঙ্গে জেরুজালেম গেলেন। সেসময় তাঁর বয়স ছিল ৯০ বছর। আল্লাহ্ অলৌকিকতা প্রদর্শন করলেন এবং জোশেফকে তাদের পছন্দ হলো এবং দুই বছর পর অ্যানানসিয়েশনকার্যকর হলো
বিঃদ্রঃ ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়ারউপরওইনিবন্ধটি প্রথম থেকে তার তথ্য গ্রহণ করে।
তালমুদ খেথুবথের ১১শ আজ্ঞায় উল্লেখ আছে : একটি পূর্ণবয়স্ক মানুষ এবং একজন যুবতীরমধ্যে যৌন মিলনএকটিসাধারণ বিষয়”। তাছাড়া সাঈদ রাবি জোশেপ লিখছেন : “তিন বছর একদিনের মেয়ে যৌনমিলন করতে পারে”।
প্রণিধানযোগ্য পয়েন্ট
অভিযোগগুলি খণ্ডনের জন্য এই কয়েকটি পয়েন্ট যথেষ্ট
১। নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কোনো শত্রু তাঁর বিরোধিতায় এটাকে অস্ত্র হিসেবে কেন ব্যবহার করেনি। যদি বিবাহটি এতটাই অন্যায় হত তাহলে আপনি দেখতেন যে, তাঁর শত্রুরাই সর্বপ্রথম তাঁর বিরোধিতায় এটাকে ব্যবহার করছে। কিন্তু আমরা তাঁর বিপরীত দেখছি যে, তাঁর শত্রুরা কখনো একবারের জন্যও তাঁর বিরোধিতায় এই বিবাহকে একটি নেতিবাচক উপায় হিসেবে ব্যবহার করেছে।
২। যখন আয়েশাকে নবির হাতে সোপর্দ করা হয় তখন তাঁর পার্শ্বে যে সমস্ত মহিলা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা কেন আয়েশাকে বিয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে ছিলেন এবং আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন ? যদি বিবাহটি অন্যায় হত তাহলে সেখানে উপস্থিত মহিলাগণ শোক-সন্তপ্ত হতেন এবং তাঁরা আয়েশার জন্য আনন্দ প্রকাশ করতেন না। কিন্তু আমরা দেখছি, তাঁরা আয়েশার জন্য অত্যন্ত খুশি ছিলেন এবং সে বিষয়ে কোনো সমস্য বোধ করেননি।
৩। আয়েশা হতে একটিও এমন হাদিস কেন বর্ণিত নেই যা থেকে প্রতিভাত হয় যে, তিনি এই বিয়েতে অখুশি ছিলেন ? আয়েশা থেকে এমন একটিও হাদিস কেন বর্ণিত নেই যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আয়েশা অন্যায়ের শিকার হয়েছিলেন ? পক্ষান্তরে আপনি যদি আয়েশার প্রতি প্রণিধান করেন তাহলে তাঁর উপর কোনো প্রতারিত ব্যক্তির কোনো লক্ষণ আপনি পাবেন না। তিনি হয়েছিলেন ইসলামের শ্রেষ্ঠ নেত্রী, শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত যিনি বহু মানুষকে ইসলামের বিষয়ে জ্ঞান দিতেন। এটা কি মনে হয় যে, এগুলো কোনো নির্যাতিত লোকের প্রতীক ?
৪। যদি আয়েশা সত্যিই অন্যায়ের শিকার হতেন তাহলে তিনি নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে এত কেন ভালোবাসতেন এবং অনেক সময় কেন তিনি তাঁর আশেপাশে কাউকে দেখলে ইর্ষান্বিত হতেন ? এর একটাই কারণ তিনি তাঁকে অত্যধিক ভালোবাসতেন। তবুও কি মনে হয় যে, তিনি অন্যায়ের শিকার ছিলেন ?
উপসংহার
পিডোফিলিয়া (বাল্য যৌন শোষণ) একটি অন্তর্মুখী শব্দ। কতিপয় রাষ্ট্র ১৬ বছর বয়সে বিবাহকে বৈধ করে, কতিপয় করে তার পূর্বে আর কতিপয় করে তার পরে। সুতরাং একটি রাষ্ট্রে আপনি যৌন নিপীড়নকারী কিন্তু অন্যটিতে নয়। কে সিদ্ধান্ত দেবে ? মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলয়হি ওয়া সাল্লাম ১৪০০ বছর আগের একটি সমাজ ও সংস্কৃতিতে বসবাস করতেন। তাই আমাদের মান ও স্তরের উপর ভিত্তি করে তাঁর বিচার করা আমাদের জন্য বাঞ্ছনীয় নয়। এরকম করাটা ভুল ও নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক।
এক দৃঢ় নৈতিক নিয়ম থাকা প্রয়োজন।যদি বিবাহে ও ঘনিষ্ট সম্পর্কে কোনো অনিষ্ট হয় তাহলে ঘনিষ্ট সম্পর্কে রাখা কারো জন্য উচিত নয়। যদি কোনো অনিষ্ট না হয় তাহলে এমন একজন তরুণ প্রাপ্তবয়স্কের জন্য নিজস্ব পছন্দে বিবাহ করা পুরোপুরি সমীচীন।
যদি আপনি প্রশ্ন করেন যে, একজন মানুষ কীভাবে তা নিরুপণ করতে পারে তাহলে শুনুন,এটা তাদের দৈহিক বৃদ্ধির লক্ষণ দেখে স্পষ্টহয়ে যায়, অনুরূপ এই তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক মন-মানসিকতার দিক থেকে কেমন তা দেখেও স্পষ্ট হয়ে যায়। যদি তারা এর উপযুক্ত হয় তাহলে বৈবাহিক সম্পর্কের সাথে অগ্রসর হওয়া তাদের অধিকার।
নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সমগ্র মানবতা এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের (আধুনিক ইউরোপীয়দের থেকে শুরু করে আস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী পর্যন্ত) জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত। তিনি আল্লাহ্র রসূল ছিলেন। তিনি শুধু আল্লাহ্র নবি ও রসূলই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একজন কূটনীতিজ্ঞ, শাসক, সামরিক নেতা, প্রতিবেশি ও বন্ধু প্রভৃতি। পারিবারিক জীবন একটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় যেখানে তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত, কারণ তিনি ছিলেন একজন স্বামী এবং একজন পিতা। বিশ্বের, বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলির অনেক পারিবারিক সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের জীবনচরিতের আনুগত্য ও অনুসরণের মাধ্যমে।
যখন সত্য আসে তখন মিথ্যা বিলুপ্ত হয়ে যায়। আল্লাহ্ তাআলা বলছেন : “বলো, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, আর মিথ্যা তো হয়েই থাকে”। [সূরা ইসরা ১৭:৮১]
তথ্যসূত্র
1. http://www.answering-christianity.com/aisha.htm
2. http://www.answering christianity.com/sami_zaatri/aisha_and_prophet_Muhammad ﷺ.htm
3. http://www.answering-christianity.com/childbrides_rebuttal.htm
4. http://muslim-responses.com/Marriage_with_Aisha/Marriage_with_Aisha_
5. http://www.islamic-awareness.org/Polemics/aishah.html
6. http://www.iol.ie/~afifi/BICNews/Sabeel/sabeel6.htm
8. http://forums.almaghrib.org/showthread.php?t=64727
9. http://www.letmeturnthetables.com/2008/07/why-prophet-muhammad-married-aisha-when.html
11. http://www.ebnmaryam.com/vb/t196253-3.htm
.
.
.
.
আয়েশা (রা.)-এর বিয়ে নিয়ে বিতর্ক
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে আয়েশা (রা.)-এর বিয়ের সময় তাঁর বয়স কত ছিল, ইতিহাসবিদদের মধ্যে এ নিয়ে মতানৈক্য দেখা যায়। একদল ইতিহাসবিদের অভিমত হলো, বিয়ের সময় আয়েশা (রা.)-এর বয়স ছিল ১৪ বছর।
আর যখন তাঁর সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর দৈহিক সম্পর্ক হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল ১৭ থেকে ১৮ বছর। (দেখুন—আরবি পত্রিকা ‘আশ্ শিরকুল আওসাত’ : ৬-৯-২০০৮; আরবি সাহিত্যিক শওকি জইফের গ্রন্থ ‘মুহাম্মদ খাতামুল মুরসালীন’ : পৃষ্ঠা ১৭১)
তবে হাদিসগ্রন্থে এ বিষয়ে ভিন্নমত পাওয়া যায়। হিশাম ইবনে উরওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.)-এর মদিনায় হিজরতের তিন বছর আগে খাদিজা (রা.)-এর ইন্তেকাল হয়। তারপর দুই বছর বা এর কাছাকাছি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি আয়েশা (রা.)-কে বিয়ে করেন। তখন তিনি ছিলেন ছয় বছরের বালিকা। তারপর ৯ বছর বয়সে বাসর যাপন করেন। ’(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৮৯৬)
আয়েশা (রা.)-এর মাতা-পিতা স্বপ্রণোদিত হয়ে তাঁকে মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। সে সময়ের কোনো মুসলিম কিংবা অমুসলিম এ বিয়ের প্রতিবাদ করেনি। কারণ সে সময় মেয়েদের এ বয়সেই সাধারণত বিয়ে দেওয়া হতো।
এর কারণ হলো, সে সময় আরবের মানুষদের আয়ু ছিল কম। মানুষ ৪০-৬০ বছর বয়সেই সাধারণত মারা যেত। তাই প্রাকৃতিকভাবে ৯ বা ১০ বছরের মেয়েকে বিয়ে করাই ছিল সে সময়ের স্বাভাবিক ঘটনা। মহানবী (সা.) আয়েশা (রা.)-কে প্রধানত তিনটি কারণে বিয়ে করেছিলেন। এক. আবু বকর (রা.)-এর সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আত্মীয়তার বাঁধনে আবদ্ধ করা।
দুই. সব ইতিহাসবিদ এ ব্যাপারে একমত যে আয়েশা (রা.) ছিলেন তৎকালীন আরবের অন্যতম মেধাবী নারী। তাই মহানবী (সা.) তাঁর মাধ্যমে ইসলামের বিধিবিধান, বিশেষ করে নারীদের একান্ত বিষয়াদি উম্মতকে শিক্ষা দিতে চেয়েছেন। তিন. মহানবী (সা.) তাঁকে বিয়ে করেছেন ওহির নির্দেশ অনুসরণ করে। ওহির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁকে বিয়ে করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) তাঁকে বলেছেন, দুইবার তোমার চেহারা আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। আমি দেখলাম, তুমি একটি রেশমি কাপড়ে আবৃতা এবং (জিবরাইল) আমাকে বলছেন, ইনি আপনার স্ত্রী, আমি ঘোমটাটা সরিয়ে দেখলাম। দেখি ওই নারী তো তুমিই। তখন আমি ভাবছিলাম, যদি তা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, তাহলে তিনি তা বাস্তবায়িত করবেন। (বুখারি, হাদিস নং : ৩৮৯৫, ৫০৭৮, ৫১২৫, ৭০১১; মুসলিম, হাদিস নং : ২৪৩৮)
বিভিন্ন ধর্মে বিয়ের ন্যূনতম বয়স
ইসলাম ধর্মমতে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের অভিভাবক যদি তাঁদের সন্তানকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন, তাহলে বিয়ে বৈধ হয়ে যাবে। কিন্তু সন্তান প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার পর এ বিয়ে ভেঙে দেওয়ার এখতিয়ার রাখবে, যদি পিতা ও দাদা ছাড়া অন্য কেউ বিয়ে দিয়ে থাকে। (হেদায়া : ১/১৯৩)
রোমান ক্যাথলিকরা বিশ্বাস করে যে মরিয়ম (আ.)-এর বয়স ছিল ১১-১৪ বছর, যখন তিনি ঈসা (আ.)-কে জন্ম দিয়েছিলেন।
তাওরাত বা ওল্ড টেস্টামেন্টের বর্ণনা অনুসারে ইসহাক (আ.) ৪০ বছর বয়সে মাত্র তিন বছরের কন্যাশিশুকে বিয়ে করেছেন। সেখানে আছে : ‘ইসহাক ৪০ বছর বয়সে রেবেকাকে বিয়ে করেছেন। রেবেকা ছিলেন পদ্দম-ইরাম দেশের সিরীয় বথুয়েলের মেয়ে এবং সিরীয় লাবনের বোন। ’ (তাওরাত, সৃষ্টি অধ্যায়, ২৫ : ২০)
ইহুদিদের ধর্মীয় বিধানশাস্ত্র বিষয়ের গ্রন্থ হলো ‘তালমুদ’। তালমুদের সানহাদরিনের বর্ণনা মোতাবেক উপদেশ নম্বর ৫৫-তে উল্লেখ করা আছে : ‘ইহুদিদের জন্য তিন বছরের মেয়েকে বিয়ে করা বৈধ। ’
আর তালমুদের খুসুবুসের বর্ণনা অনুযায়ী উপদেশ নম্বর ৫৬-তে উল্লেখ করা হয়েছে : ‘শিশুর ৯ বছর হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করা ইহুদিদের জন্য বৈধ। ’
তালমুদের বর্ণনাকারী সাইদ রাবি জুসেফ লিখেছেন : ‘এ কথা তোমার কাছে রেজিস্ট্রার করে নাও যে কন্যাশিশুর বয়স তিন বছর একদিন হলে তার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব। ’ (বিস্তারিত দেখুন : : Neusner, The Talmud of Babylonia, vol.B, Tractate Sanherdrin 1984)
উপমহাদেশে হিন্দুদের সমাজ জীবন নিয়ন্ত্রিত হয়েছে প্রধানত মনুর বিধান অনুসারে। মনুসংহিতায় বলা হয়েছে, মেয়েদেরে আট বছর বয়সের মধ্যেই বিয়ে দিতে হবে। মনুশাস্ত্রে বলা হয়েছে, ‘কালেহদাতা পিতা বাচ্যো বাচ্যশ্চানুপযন্ পতিঃ। /মৃতে ভর্তরি পুত্রস্তু বাচ্যো মাতুররক্ষিতা। ’ অর্থাৎ বিবাহযোগ্য সময়ে (ঋতুদর্শনের আগে) পিতা যদি কন্যাকে পাত্রস্থ না করেন, তাহলে তিনি মানুষের কাছে নিন্দনীয় হন। স্বামী যদি ঋতুকালে পত্নীর সঙ্গে সঙ্গম না করেন, তবে তিনি লোকসমাজে নিন্দার ভাজন হন। স্বামী মারা গেলে পুত্ররা যদি তাদের মাতার রক্ষণাবেক্ষণ না করে, তাহলে তারাও অত্যন্ত নিন্দাভাজন হয়। (মনুসংহিতা : ৯/৪)
বাল্মিকী রামায়ণের তৃতীয় খণ্ডের ৪৭ শ অধ্যায়ে সীতার বিবৃতি থেকে আমরা জানতে পারি যে সীতা অষ্টাদশ বছর বয়ঃক্রমকালে বিবাহের ত্রয়োদশ বছরে রামের বনগমনকালে তাঁর সঙ্গে অযোধ্যা ত্যাগ করেছিলেন। পাটিগণিতের সহজ হিসাব মতে, বিবাহের সময় সীতার বয়স পাঁচ-ছয় বছর ছিল। (মোহাম্মদ মতিয়র রহমান, প্রাচীন ভারতে বাল্যবিয়ে)
যাঁরা মহানবী (সা.) ও আয়েশা (রা.)-এর বিয়ে নিয়ে আপত্তি করেন, তাঁরা কিন্তু রাম আর সীতার বিয়ে নিয়ে টুঁশব্দও করেন না। কারণ কী?
বিভিন্ন দেশ ও সভ্যতায় নারীর বিয়ের বয়স
বিয়ের ক্ষেত্রে দেশ-জাতিভেদে আলাদা বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। একজন মানুষ কোন বয়সে বিয়ে করছেন, তা নির্ভর করে ওই দেশের গড় আয়ের ওপর। দেখা যায়, ধনী দেশ যেমন—সুইডেনের মানুষ তিরিশের আগে বিয়ে করেন না। কিন্তু সেন্ট্রাল আফ্রিকায় বিয়ের গড় বয়স ২০। আমাদের এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে মহানবী (সা.)-এর সময়ে আরবের লোকদের গড় আয়ু ছিল ৪০ থেকে ৬০ বছর। তাই সে সময় তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা ছিল প্রথাসিদ্ধ।
১৪০০ বছর তো অনেক দূরে, এই গত ১৮৮০ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের দেলোয়ারে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ছিল ৭ বছর। মাত্র ১৩০ বছর আগে পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স কত ছিল? দেখুন—ডেনমার্ক ১২, ইংল্যান্ড ১৩, ফ্রান্স ১৩ পর্তুগাল ১২, রাশিয়া ১০, স্কটল্যান্ড ১২, স্পেন ১২, কানাডা ১২, আমেরিকার ফ্লোরিডা ১০, ক্যালিফোর্নিয়া ১০ বছর। লিস্টটা আরো অনেক বড়। আপনি চাইলে এখানে গিয়ে আরো দেখতে পারেন (http://chnm.gmu.edu/cyh/primary-sources/24)
বর্তমান পৃথিবীতেও এমন বহু দেশ আছে, যেখানে মেয়েদের বেশ কম বয়সে বিয়ে করা হয়। নিচের লিঙ্কগুলোতে দেখুন—
• http://www.answering-christianity.com/gypsy_girl.htm
• http://www.answering-christianity.com/thai_girl.htm
• http://www.answering-christianity.com/aisha.htm#bible_prophets
• http://www.answering-christianity.com/aisha.htm#mary_age
• http://www.answering-christianity.com/aisha.htm#osama_bin_zaid
• http://www.answering-christianity.com/aisha.htm…
• http://www.answering-christianity.com/aisha.htm#her_parents
তথাকথিত সভ্য লোকেরা আয়েশা (রা.)-এর বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন তুললেও বৈধ পথ বাদ দিয়ে অবৈধ উপায়ে ঠিকই শিশুকন্যাদের ভোগ করছে। পরিসংখ্যান বলছে : যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ষণের শিকার হওয়াদের মধ্যে ৯১ শতাংশ নারী ও বাকি ৯ শতাংশ পুরুষ। সেখানে প্রতি তিনজনে একজন নারী ধর্ষিত হয়। ১৮ বছরের আগে ৪০ শতাংশ নারী এখানে ধর্ষণের শিকার হয়। (দৈনিক ইত্তেফাক, ৭ জুলাই, ২০১৫)
শুধু ধর্ষণ নয়, শিশুকন্যাদের বিয়েও রীতিমতো সিদ্ধ আধুনিক পৃথিবীতে। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের ৪০ শতাংশ কন্যাশিশুর বিয়ে হয় ভারতে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতে বাল্যবিয়ের সংখ্যা দুই কোটি ৩০ লাখের মতো, যা বিশ্বের মোট বাল্যবিয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ। (ভয়েচে ভেলের বরাতে দৈনিক সংগ্রাম : ২৪-১১-২০১৬)
বর্তমান বিশ্বে ন্যূনতম কত বছর বয়সের নারীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করা বৈধ, দেখুন—মেক্সিকোতে ১২, কুরিয়ায় ১৩, কানাডায় ১৪, সুইডেনে ১৫ বছর বয়সী মেয়েদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করা রীতিমতো আইনসিদ্ধ। (বিস্তারিত দেখুন : http://www.avert.org/sex-stis/age-of-consent)
এ ছাড়া আর্জেন্টিনায় ১৩, নাইজেরিয়ায় ১৩, প্যারাগুয়ে ও পেরুতে ১৪, সেনেগালে ১৩, স্পেনে ১৩, পোপের শহর ভ্যাটিকান সিটিতে ১২ বছর বয়সী মেয়েদের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করা আইনসিদ্ধ। (বিস্তারিত দেখুন— http://chartsbin.com/view/hxj)
বাঙালি সংস্কৃতিতে নারীদের বিয়ের বয়স
১৯ শতকেও বাঙালি নারীদের ছোট বেলায় বিয়ে দেওয়া হতো। বাঙালির বিয়ের ইতিহাস বিষয়ে ‘বাংলাপিডিয়া’ লিখেছে : ‘১৯২১ সালের আদমশুমারিতে বিয়ের গড় বয়স মেয়েদের ১২ এবং ছেলেদের ১৩ বছর উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯২৯ সালে বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন (Child Marriage Restraint অপঃ) পাস হয়। এ আইন অনুযায়ী ১৪ বছরের নিচের পাত্রী এবং ১৮ বছরের নিচের পাত্রের বিবাহ ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ’ (বিবাহ, বাংলাপিডিয়া)
‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’ নামে একটি বই লিখেছেন গোলাম মুরশিদ। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতিতে নারীদের বিয়ে কত বছর বয়সে হতো? তিনি লিখেছেন : ‘দ্বারকানাথ ঠাকুর (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা) বিয়ে করেছিলেন ১৫ বছর বয়সে। চিন্তার দিক দিয়ে তিনি সে যুগের তুলনায় খুব আধুনিক থাকলেও তাঁর পুত্র দেবেন্দ্রনাথের বিয়ে দিয়েছিলেন ১৭ বছর বয়সে, পাত্রীর বয়স ছিল ১১। ’
বাঙালি জাতির সবচেয়ে প্রাগ্রসর শিক্ষাবিদ হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়, তাঁরা কত বছর বয়সী নারীদের বিয়ে করেছিলেন, ড. মুরশিদ লিখেছেন : বঙ্কিমচন্দ্র যাঁকে বিয়ে করেছিলেন, তাঁর বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। দেবেন্দ্রনাথ ও বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর স্ত্রীর বয়স ছিল ছয় বছর। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রীর বয়স ছিল সাত বছর, ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্ত্রীর বয়স আট বছর, কেশব সেন এবং জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ৯, শিবনাথ শাস্ত্রীর ১০ আর রাজনারায়ণ বসুর স্ত্রীর বয়স ছিল ১১ বছর। ’ (দেখুন : হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, পৃষ্ঠা-২২০)
যাঁরা আয়েশা (রা.)-এর বিয়ের বয়স নিয়ে আপত্তি করেন, তাঁদের অনেকের কাছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেবতাতুল্য। রবীন্দ্রনাথ তাঁদের কাছে সবক্ষেত্রে আদর্শ পুরুষ। তিনি কিন্তু ২৩ বছর বয়ছে মাত্র ১১ বছরের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। ড. গোলাম মুরশিদই সে তথ্য উল্লেখ করেছেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১২ বা ১৩ বছর বয়সে তিন বছর বয়সী রেণুকে (বঙ্গমাতা) বিয়ে করেছেন। অবশ্য এটা ছিল পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। (দেখুন—অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ৭)
বাংলাদেশে নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার বিয়ে কত বছর বয়সে হয়েছিল? ১৮৯৬ সালে ১৬ বছর বয়সে রোকেয়ার বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। বিয়ের পর তিনি ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ নামে পরিচিত হন। তাঁর স্বামীও ‘মুক্তমনা’ মানুষ ছিলেন।
উপমহাদেশে ১৮৬০ সালে ‘এজ অফ কন্সেন্ট’ আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স স্থির করা হয় ১০। ১৮৯২ সালে এই বয়স বেড়ে দাঁড়ায় ১২। ১৯২৯ সালে এটা আবার বেড়ে দাঁড়ায় ১৪। ১৯৫৫ সালে এটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ বছর। সে আইন এখনো বলবৎ আছে। তার মানে যুগে যুগে নারীদের গড় আয়ু ও পরিবেশ পরিস্থিতিতে বিয়ের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে তারতম্য দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে পরের আইনের আলোকে আগের আইনসিদ্ধ বিষয়কে বিচার করা অজ্ঞতা, মূর্খতা ও জ্ঞানপাপিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
ধরুন, আজ আপনি ২১ বছর বয়সে একটি ১৮ বছরের মেয়েকে বিয়ে করলেন। ঠিক ১০০০ বছর পর আইন হলো যে ছেলেদের বিয়ের বয়স ২৮ আর মেয়েদের ২৫। তখন কি ৩০১৬ সালের মানুষ আপনাকে বাল্যবিয়ে আইন ভঙ্গ করেছেন—এমন অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারবে? কেন পারবে না? যদি না পারে, তাহলে আপনি কেন ১৪০০ বছর আগের আইনের আলোকে সংগঠিত হওয়া আয়েশা (রা.)-এর বিয়ে নিয়ে চিল্লাচিল্লি করছেন? নতুন আইনের আলোকে কেন পুরনো আইনের বিষয়কে বিচার করছেন?
.
.
.
.
হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর বিয়ের বয়স নিয়ে নাস্তিকদের প্রপাগান্ডা! মহানবী কি শিশু বিয়ে করেছেন? তিনি কি তাহলে সর্বকালের আদর্শ হতে পারেননি?
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্বন্ধে বলা হয় তিনি হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে আয়েশার ৬/৯ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। অথচ আমি অনুসন্ধান করে দেখতে পেলাম হুজুরেপাক (সাঃ)-এর সাথে বিয়ের সময় হযরত আয়শা (রাঃ)-এর বয়স মাত্র ৬/৯ বছর ছিল মর্মে তথ্যটি ‘বর্ণনাসূত্র আর ঐতিহাসিক’ দু দিক থেকেই ক্রুটিপূর্ণ।
জেনে রাখা দরকার যে, ইসলামী আকিদা সাব্যস্ত হবে দুটি মূলনীতির ভিত্তিতে –
১- পবিত্র কুরআনের দ্ব্যর্থবোধক আয়াত।
২- বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত সুস্পষ্ট অর্থবোধক হাদিস দ্বারা। এর বাহিরে ভিন্ন কোনো উপায়ে আকিদা সাব্যস্ত হয়না।
আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, সহীহ হাদীস কখনো পবিত্র কুরানের বিরুদ্ধে যায়না। দৃশ্যত সাংঘর্ষিক মনে হলেও বুঝতে হবে যে, হয়ত আপনার স্বল্প জ্ঞানের কারণে তা মনে হচ্ছে। অনেকে সব কিছুতে নিজের বুদ্ধি খাটাতে চায়। বুদ্ধির মানদণ্ড দিয়েই সব কিছুকে বিচার করে সিদ্ধান্ত দিতে চায়, যা পুরোপুরি আত্মঘাতী বৈ কিছুনা। কুরান হাদিস থেকে যে কোনো (মর্মের দিক থেকে অস্পষ্ট) মাসয়ালার এলমটি বুঝার জন্য আমাদের শরণাপন্ন হতে হবে সেসব অভিজ্ঞ মহান পুরুষদের যারা কুরান সুন্নাহ’র গবেষক হিসেবে সুপ্রসিদ্ধি অর্জন করেছেন এবং যাদের আমানতদারি আর তাকওয়া প্রমাণিত। এক কথায়, ইসলামের আদিম ও সালফে সালেহীন ইমামদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ থেকেই সঠিক ব্যাখ্যাটি বুঝে নিতে হবে।
কেউ কেউ হাদিস বাদ দিয়ে স্রেফ কুরান নিয়েই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন, যা মারাত্মক ভুল। কারণ কুরানের সহায়ক হচ্ছে ‘সহীহ হাদিস।’ সূরা নাহাল আয়াত নং ৪৪ এর ভাষ্য হল – ‘আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি কুরান। যাতে আপনি মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন যা তাদের উদ্দেশ্যে নাযিল করা হয়েছে, যেন তারা ভেবে দেখে।’ এ আয়াত সুস্পষ্টভাবে বুঝাচ্ছে যে, কুরানের মর্মার্ম সঠিকভাবে অনুধাবন করতে হলে নবীজি (সা)-এর বাণী (হাদিস) অবশ্য জুরুরী। কিন্তু যখন কোনো হাদিস সূত্রের বিশুদ্ধতার বিচারে টিকবেনা, তখনি সেটি ছেড়ে দেয়ার মত যথেষ্ট যুক্তি এবং অবকাশ থাকবে। এজন্য ঊসূলে হাদিসের উপর পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করা জুরুরী।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদিসে হযরত হিশাম ইবনে উরওয়া (রহঃ) -এর রেওয়ায়েত নিয়ে কিছু কথা-
অনেকে ইমাম বুখারীর বর্ণিত একটি মওকূফ (যে হাদিসের সূত্র তাবেয়ী পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়ে গেছে এমন) হাদিসের উপর ভিত্তি করে হযরত মা আয়েশা (রা)-এর বিয়ের বয়স ৬ বছর ছিল বলে মনে করে থাকেন। অথচ উক্ত তথ্যটি একদিকে ঐতিহাসিক ভাবে অপ্রমাণিত, অপরদিকে হাদিসটির সনদের ভেতর হিসাম ইবনে উরওয়া নামের একজন রাবি (হাদিসের বর্ণনাসূত্রের একজন বর্ণনাকারী) সম্পর্কে ইমাম মালেক (রহ) বলেছেন, সে শেষ বয়সে ( তথা ৭১ বছর বয়সে) মদিনা থেকে ইরাক চলে যাওয়ার পর স্মৃতিশক্তি হারিয়ে পেলেছিল। ফলে তার বর্ণনায় অনেক কিছুই উল্টোপাল্টা হয়ে যেত। সেজন্য তার থেকে কোনো ইরাকী রাবি যত হাদিসই বর্ণনা করবে, সেগুলো গ্রহণযোগ্য হবেনা। (উল্লেখ্য, বুখারী শরীফে হযরত হিশাম বিন উরওয়া তিনি ইরাকি রাবী থেকেই এটি বর্ণনা করেছেন)। [সূত্র : তাহযীবুত তাহযীব, লেখক ইবনে হাজার আসকালানী (রহ)]
প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ইমাম আবুল হাসান ইবনে ক্বাত্তান (রহঃ) ‘বায়ানুল ওয়াহাম ওয়াল ইবহাম‘ (بيان الوهم و الإبهام) কিতাবের ৫ম খন্ডের ৫০৪ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন – أن هشام اختلط في آخر عمره অর্থ – হিশাম ইবনে উরওয়া শেষ বয়সে উল্টাপাল্টা করে পেলত।’
ইমাম যাহাবী (রহঃ) ‘মিযানুল ই’তিদাল‘ কিতাবের ৪র্থ খন্ডের ৩০১-৩০২ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন – هشام بن عروة أحد الأعلام، حجة إمام، لكن في الكبر تناقض حفظه و لم يختلط أبداً. অর্থ – হিশাম ইবনে উরওয়া (রহঃ) তিনি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন। নির্ভরযোগ্য ইমাম ছিলেন। তবে বৃদ্ধাবস্থায় তার স্মৃতিলোপ পায় অথচ (ইতিপূর্বে) তিনি কখনো উল্টাপাল্টা করেননি।’
(আরো দেখুন, আল-জারহু ওয়াত তা’দীল ৬/৪৯০, ইমাম যাহাবী)
সহীহ বুখারী, মুসলিম সহ অনেক হাদীসগ্রন্থে হিসাম ইবনে উরওয়া সূত্রে হযরত আয়েশা (রাঃ) এর বয়স নিয়ে যে তথ্য এসেছে, তা হিসাম ইবনে উরওয়াহ (রহ) কর্তৃক বর্নিত একটি মওকূফ বর্ণনারই উৎস। প্রায় ৫-টি সনদে হযরত আয়েশা (রাঃ) এর বয়স সম্পর্কিত রেওয়ায়েত উল্লেখ রয়েছে, সবই হিসাম ইবনে উরওয়াহ (রহ) কর্তৃক বর্নিত। হিসামের বর্নিত ওই ৫-টি সনদে মদিনার কোনো রাবী (বর্ণনাকারী)’র সংশ্লিষ্টতা নেই।
হিসাম ইবনে উরওয়াহ’র ভাষ্য :
ﻓﻲ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﺃﻥ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺗﺰﻭﺝ ﺃﻡ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻭ ﻫﻲ ﺍﺑﻨﺔ ﺳﺖ ﺳﻨﻮﺍﺕ ﻭ ﺩﺧﻞ ﺑﻬﺎ ﻭ ﻫﻲ ﺍﺑﻨﺔ ﺗﺴﻊ
বিশিষ্ট রাবী হযরত হিসাম ইবনে উরওয়াহ (রহ) কর্তৃক বর্ণিত রেওয়ায়েতটি সম্বন্ধে সংশয় প্রকাশ করার মতো যথেষ্ট কারণ বিদ্যমান। তন্মধ্যে প্রথম কারণটি হল, হাদীসের কোনো বিষয় বা হাবিবুল্লাহ হুজুরেপাক (সাঃ)-এর জীবন-যাপন পদ্ধতি কোনোভাবেই পবিত্র কোরআনের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারেনা। কাজেই বিবাহযোগ্য বয়সের বিষয়ে আল কোরআনের যে নির্দেশ রয়েছে, উক্ত মওকূফ বর্ণনা নির্ভর তথ্যটি সেই নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাহলে? উত্তর একটাই। উক্ত মওকূফ বর্ণনা-নির্ভর তথ্যটি সঠিক নয়; সঠিক হতেই পারেনা।
হিসাম ইবনে উরওয়া হতে উক্ত বর্ণনাটি গ্রহণযোগ্য না হওয়ার আরো কিছু কারণ নিম্নরূপ —
হাবিবুল্লাহ হুজুরেপাক (সা) পবিত্র কুরআনের আদর্শেই জীবন পরিচালিত করতেন। তার জীবনাদর্শ সর্বকালের মুসলমানদের জন্য অনুকরনীয়। তিনি কোরানের পরিপন্থি কোনো কাজ করতে পারেন না। পবিত্র কুরআন থেকে বিবাহের যোগ্যতা বা উপযুক্ত বয়সের যে দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় , তাতে এটা প্রতীয়মান হয় যে, শিশুবিবাহ ইসলামে নেই। সূরা নিসা (০৪:০৬) অর্থাৎ, আর এতীমদের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখবে যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌঁছে। তখন তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনার উন্মেষ আঁচ করতে পারলে, তবেই তাদের সম্পদ তাদের হাতে অর্পন করতে পার।” এর অর্থ একটাই, বুদ্ধি-বিবেচনাহীন কেউ বিবাহযোগ্য নয় । তার মানে যিনি বুদ্ধি-বিবেচনা সম্পন্ন তিনি প্রাপ্তবয়স্কা। (যারা আগ্রহী তারা পবিত্র কুরআনের ৪: ২১ , ৩০: ২১ ও ২৫: ৭৪ আয়াতগুলোও পড়ে দেখতে পারেন)। এ আয়াতগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যায় গেলাম না। কারণ ধর্মহীন ভ্রষ্ট নাস্তিকরা পবিত্র কুরআনে বিশ্বাস করে না। আর যেহেতু হাবিবুল্লাহ হুজুরেপাক (সা)-এর প্রতি কথিত ‘শিশুবিবাহ‘ এর কল্পিত অভিযোগটি ধর্মহীন ভ্রষ্ট নাস্তিকরাই করে, যার ভিত্তি হল বুখারির বরাতে হিসাম ইবনে উরওয়া হতে বর্ণিত একটি বর্ণনা, সেহেতু সেই হিসাম ইবনে উরওয়া সম্পর্কে এখানে কয়েকটি কথা আলোচনা করব। যার ফলে প্রমাণিত হয়ে যাবে যে, উরওয়া হতে বর্ণিত উক্ত বর্ণনাটি আইনি মাসয়ালায় দলিল প্রমাণে গ্রহণযোগ্য নয়।
হিশাম ইবনে উরওয়া’র স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা সম্পর্কে :
হিশাম ইবনে উরওয়া কর্তৃক বর্ণিত মওকূফ হাদীসটির বর্ননাকারীদের শেষ ব্যক্তি হিশাম ইবনে উরওয়া । তিনি তার পিতা থেকে হাদীসটি শুনেছিলেন। হাদীসটি মূলত খবরে ওয়াহিদ স্তরের একটি হাদীস। হিসাম ইবনে উরওয়া তিনি তার জীবনের প্রথম ৭১ (একাত্তর) বছর মদিনায় কাটালেও এ মর্মে কোনো হাদীস মদিনার কেউ তার নিকট থেকে শোনেনি। এমনকি তার বিখ্যাত ছাত্র হযরত মালিক বিন আনাস (রহ)ও এরকম কোনো হাদীস উল্লেখ করেননি। হিশাম ইবনে উরওয়া তিনি জীবনের শেষ দিনগুলো ইরাকে অতিবাহিত করেন । একারণেই হাদীসটির বর্ননাকারীদের অবশিষ্ট সকলেই ইরাকের অধিবাসী। তার সম্পর্কে যা জানা যায় তা হল-
ইমাম ইয়াকুব ইবনে শাইবাহ (রহ) বলেছেন : “হিশাম ইবনে উরওয়া’র যেসব হাদিস ইরাকিরা বর্ণনা করেন শুধুমাত্র সেগুলো ছাড়া সকল হাদীসই বিশ্বাসযোগ্য ।”
ইমাম মালিক বিন আনাস যিনি হিশাম ইবনে উরওয়া’র ছাত্র ছিলেন, তিনি ইরাকিদের মাধ্যমে বর্ণিত হিশামের হাদীসগুলোকে সন্দেহ করে সেগুলো বাতিল করে দেন। মালিক বিন আনাস (রহ)-এর বক্তব্য :
ﺃﻥَّ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻣﺎﻟﻚ ﻗﺎﻝ: ﺇﻥَّ ﺣﺪﻳﺚ ﻫﺸﺎﻡ ﺑﺎﻟﻌﺮﺍﻕ ﻻ ﻳﻘﺒﻞ .
অর্থ – নিশ্চয় ইরাকি রাবী থেকে হিশামের কোনো রেওয়ায়েত গ্রহণযোগ্য নয়। (সুত্র – তাহযীবুত তাহযীব, লেখক ইবনে হাজার আসকালানী (রহ); বইটি হাদীস বর্ণনাকারীদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে লেখিত।)
শাইখুল হাদিস প্রফেসর আল্লামা আল-বুহাইরী আস-সউদী(দা: বা:) হিশাম ইবনে উরওয়া’র শেষ বয়সে স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা সম্পর্কে লিখেছেন :
ﺃﻥَّ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺍﻟﺬﻯ ﺫﻛﺮ ﻓﻴﻪ ﺳﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺟﺎﺀ ﻣﻦ ﺧﻤﺴﺔ ﻃﺮﻕ ﻛﻠﻬﺎ ﺗﻌﻮﺩ ﺇﻟﻰ ﻫﺸﺎﻡ ﺑﻦ ﻋﺮﻭﺓ، ﻭﺃﻥَّ ﻫﺸﺎﻡ ﻗﺎﻝ ﻓﻴﻪ ﺍﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﻓﻰ ( ﻫﺪﻱ ﺍﻟﺴﺎﺭﻱ) ﻭ( ﺍﻟﺘﻬﺬﻳﺐ): “ﻗﺎﻝ ﻋﺒﺪﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ ﺑﻦ ﺧﺮﺍﺵ ﻭﻛﺎﻥ ﻣﺎﻟﻚ ﻻ ﻳﺮﺿﺎﻩ، ﺑﻠﻐﻨﻲ ﺃﻥَّ ﻣﺎﻟﻜﺎً ﻧﻘﻢ ﻋﻠﻴﻪ ﺣﺪﻳﺜﻪ ﻷﻫﻞ ﺍﻟﻌﺮﺍﻕ، ﻗﺪﻡ -ﺟﺎﺀ – ﺍﻟﻜﻮﻓﺔ ﺛﻼﺙ ﻣﺮﺍﺕ – ﻣﺮﺓ- ﻛﺎﻥ ﻳﻘﻮﻝ : ﺣﺪﺛﻨﻲ ﺃﺑﻲ، ﻗﺎﻝ ﺳﻤﻌﺖ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻭﻗﺪﻡ -ﺟﺎﺀ – ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ ﻓﻜﺎﻥ ﻳﻘﻮﻝ : ﺃﺧﺒﺮﻧﻲ ﺃﺑﻲ ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ، ﻭﻗﺪﻡ ﺍﻟﺜﺎﻟﺜﺔ ﻓﻜﺎﻥ ﻳﻘﻮﻝ : ﺃﺑﻲ ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ .”
অর্থ : হযরত আয়েশার বয়স সম্পর্কিত হাদিসটি ৫টি সনদে আছে। সব গুলো সূত্রে হিশাম ইবনে উরওয়া রয়েছেন। এ হিশাম ইবনে উরওয়া রহঃ সম্পর্কে হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ ‘তাহযীবুত তাহযীব‘ কিতাবে লিখেছেন, আব্দুর রহমান ইবনে ইউসুফ ইবনে খারাশ এবং ইমাম মালেক উনারা তার থেকে হাদিস বর্ণনার ব্যাপারে সন্তুষ্ট নন। আমার নিকট খবর পৌছিল যে, ইমাম মালেক রহঃ তিনি ইরাকি রাবীর সূত্রে তার হাদিসকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি -(হিশাম) কূফাতে তিনবার গমন করেন। প্রথমবার বলতেন, ‘আমাকে আমার পিতা বলেছেন তিনি আয়েশা থেকে শুনেছেন’। দ্বিতীয়বার যখন আগমন করলেন, তখন বলতেন ‘আমার পিতা আমাকে আয়েশা থেকে হাদিসটি জানিয়েছেন’। তৃতীয়বার যখন আসলেন তখন বলতেন ‘আমার পিতা হযরত আয়েশা থেকে বর্ণনা করেছেন’ (অর্থাৎ তিনি একই বিষয় ভিন্ন ভিন্ন শব্দচয়নে বর্ণনা করতেন) ।
ﻭﺍﻟﻤﻌﻨﻰ ﺑﺒﺴﺎﻃﺔ ﺃﻥَّ ( ﻫﺸﺎﻡ ﺑﻦ ﻋﺮﻭﺓ) ﻛﺎﻥ ﺻﺪﻭﻗﺎً ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﺍﻟﻤﻨﻮﺭﺓ، ﺛﻢ ﻟﻤﺎ ﺫﻫﺐ ﻟﻠﻌﺮﺍﻕ ﺑﺪﺃ ﺣﻔﻈﻪ ﻟﻠﺤﺪﻳﺚ ﻳﺴﻮﺀ ﻭﺑﺪﺃ ( ﻳﺪﻟﺲ) ﺃﻯ ﻳﻨﺴﺐ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻟﻐﻴﺮ ﺭﺍﻭﻳﻪ، ﺛﻢ ﺑﺪﺃ ﻳﻘﻮﻝ ( ﻋﻦ) ﺃﺑﻲ، ﺑﺪﻻً ﻣﻦ ( ﺳﻤﻌﺖ ﺃﻭ ﺣﺪﺛﻨﻲ)، ﻭﻓﻰ ﻋﻠﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻛﻠﻤﺔ ( ﺳﻤﻌﺖ) ﺃﻭ (ﺣﺪﺛﻨﻲ) ﺃﻗﻮﻯ ﻣﻦ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﺮﺍﻭﻱ (ﻋﻦ ﻓﻼﻥ) ، ﻭﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻓﻰ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻫﻜﺬﺍ ﻳﻘﻮﻝ ﻓﻴﻪ ﻫﺸﺎﻡ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻭﻟﻴﺲ (ﺳﻤﻌﺖ ﺃﻭ ﺣﺪﺛﻨﻲ)، ﻭﻫﻮ ﻣﺎ ﻳﺆﻳﺪ ﺍﻟﺸﻚ ﻓﻰ ﺳﻨﺪ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ، ﺛﻢ ﺍﻟﻨﻘﻄﺔ ﺍﻷﻫﻢ ﻭﻫﻲ ﺃﻥَّ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻣﺎﻟﻚ ﻗﺎﻝ: ﺇﻥَّ ﺣﺪﻳﺚ ﻫﺸﺎﻡ ﺑﺎﻟﻌﺮﺍﻕ ﻻﻳﻘﺒﻞ
অর্থ – নিশ্চয় হিশাম ইবনে উরওয়া মদিনা থাকাকালীন সময়ে সত্যনিষ্ঠায় প্রতিষ্ঠিত ছিলেন অতপর যখন (৭১ বছর বয়সে) ইরাক গেলেন তখন হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে তার স্মৃতি লোপ পাওয়া শুরু করে এবং হাদিসের ভেতর তাদলীস (تدلیس) তথা তার রেওয়ায়েতকে অন্যের দিকে নেসবত করা শুরু করেন। তিনি عن শব্দকে سمعت/حدثني দ্বারা পরিবর্তন করে দিতেন। অধিকন্তু ঊসূলে হাদিসের পরিভাষা অনুযায়ী عن অপেক্ষা سمعت و حدثني এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য খুব বেশি। সহীহ বুখারিতে তার বর্ণিত হাদিসে سمعت او حدثني পরিবর্তে عن এর দ্বারা উল্লেখ রয়েছে। ফলে তার বর্ণিত হাদিসের সূত্রে সন্দেহ ঘনীভূত হয়ে গেছে। অতপর ইমাম মালেক রহঃ গুরুত্বপূর্ণ যে নীতিগত ফয়সালা দিয়েছেন তা হচ্ছে, ইরাকিদের সূত্রে তার বর্ণিত হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়।
তারিখ – সংবাদপত্র, আল ইয়াওমুস সাবী () পাতা নং ২১; ১৫ জুলাই ২০০৮ ইং
যাইহোক, ঐতিহাসিক সত্যগুলো নিয়ে আসার পূর্বে প্রথমে জেনে নিই, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনকথা –
নাম- আয়েশা। উপনাম: উম্মে আব্দুল্লাহ। উপাধি – সিদ্দিকা, হুমায়রা। খেতাব- উম্মুল মু’মিনীন। পিতার নাম- আবূ বকর। মাতার নাম- উম্মে রুম্মান। হাদিস শাস্ত্রে হযরত আয়েশা (রা)-এর অবদান অনেক। তিনি অত্যন্ত জ্ঞানবতী ও মহতী ছিলেন। মহানবী (সা)-এর জীবনের বহু ঘটনা ও যুদ্ধ বিগ্রহ বিষয়ে তিনি ওয়াকিফহাল ছিলেন। তিনি কবিতা চর্চাও করতেন। মুসনাদে আহমদে তার রেওয়ায়েত সমূহ ২৫৩ পৃষ্ঠাব্যাপী লিপিবদ্ধ রয়েছে। মহানবী (সা) গৃহাভ্যন্তরে যা কিছু করতেন সে সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রা)-এর বর্ণনার উপর বেশি নির্ভর করা হয়। অনেক সাহাবি ও তাবেয়ী তাঁর সূত্রে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাঁর বোনের ছেলে হযরত উরওয়া ইবনে যুবায়ের এবং ভাতিজা কাসিম ইবনে মুহাম্মদ তাঁর থেকে অধিক সংখ্যক হাদিস বর্ণনা করেছেন।
হযরত আয়েশা (রা)-এর বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২২১০ (দু’ হাজার দু’শত দশ)। “মুকছিরীন” স্তরের একজন হাদিস বর্ণনাকারী ছিলেন। সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী ৭ জন সাহাবির মধ্যে হযরত আয়েশা (রা)-এর অবস্থান ছিল তৃতীয়। হযরত আয়েশা (রা) তিনি ৫৭ মতান্তরে ৫৮ হিজরীতে ৬৬/৬৭ বছর বয়সে বিশিষ্ট সাহাবি হযরত মু’আবিয়া (রা)-এর খিলাফতকালে ১৭-ই রামাদ্বান মদিনায় ইন্তেকাল করেন। ইন্নাল্লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। (তথ্য সূত্র : আল হাদিস ওয়া উসূলুল হাদিস : ৬৪৪/ফাযিল স্নাতক প্রথমবর্ষ ‘১২-‘১৩ ইং)।
এবার ঐতিহাসিক সত্যগুলো নিয়ে আসি :
হাবিবুল্লাহ হুজুরেপাক (সাঃ) এর সাথে আয়েশা (রাঃ) এর বিয়ে হয় তৃতীয় হিজরী সনের শাওয়াল মাসে বা ৬২৩-৬২৪ খ্রিষ্টাব্দ। যদিও বলা হয়, হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর জন্ম ৬১৪ খৃষ্টাব্দে কিন্তু সহীহ বুখারীতে এসেছে আল কোরআনের ৫৪ তম অধ্যায় নাজিলকালে আয়েশা (রাঃ) একজন কিশোরী (Jariyah) বয়স্কা ছিলেন। উল্লেখ্য ৫৪তম উক্ত অধ্যায় নাযিল হয় ৬১২ খৃষ্টাব্দের দিকে। সে হিসাবে হযরত আয়েশার বয়স তখন ৯ বছর হলেও ৬২৩-৬২৪ খৃষ্টাব্দ সালে তাঁর বয়স কোনো ভাবেই ২০ বছরের নিচে নয়।
(Sahih Bukhari, kitabu’l-tafsir, Arabic, Bab Qaulihi Bal al- sa`atu Maw`iduhum wa’l-sa`atu adha’ wa amarr)
অধিকাংশ বর্ণনাকারির মতে হযরত আয়েশা (রাঃ) বদরের যুদ্ধ (৬২৪ খৃষ্টাব্দে) এবং ওহুদের যুদ্ধ (৬২৫ খৃষ্টাব্দে) ইত্যাদিতে অংশগ্রহন করেছেন। উল্লেখ্য যে রাসুল (সাঃ) এর বাহিনীতে ১৫ বছরের কম বয়স্ক কেউ গ্রহণযোগ্য ছিলনা এবং তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। সুতরাং সেসময় যে হযরত আয়েশা’র বয়স ৬ বা ৯ ছিলনা, তা বলাই বাহুল্য।
A narrative regarding Ayesha’s participation in the battle of `Uhud is given in Bukhari, (Kitabu’l-jihad wa’l-siyar, Arabic, Bab Ghazwi’l-nisa’ wa qitalihinna ma`a’lrijal; that all boys under 15 were sent back is given in Bukhari, Kitabu’l- maghazi, Bab ghazwati’l- khandaq wa hiya’l-ahza’b, Arabic).
অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মতে, হযরত আয়েশার বোন আসমা ছিলেন তাঁর চেয়ে দশ বছরের বড়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, আসমা ৭৩ হিজরী সনে যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন তাঁর বয়স ছিল ১০০ বছর। সে হিসাবে ১লা হিজরীতে তাঁর বয়স হয় ২৭ বছর। তাহলে সে হিসেবে হযরত আয়েশার বয়স যে তখন ১৭ এর কম ছিলনা, তা বোঝা যায়। তাহলে ৬২৩-৬২৪ খৃষ্টাব্দ তাঁর বয়স ১৮/১৯ বছর।
(For Asma being 10 years older than Ayesha, see A`la’ma’l- nubala’, Al- Zahabi, Vol 2, Pg 289, Arabic, Mu’assasatu’l- risalah, Beirut, 1992. Ibn Kathir confirms this fact, [Asma] was elder to her sister [Ayesha] by ten years” (Al- Bidayah wa’l- nihayah, Ibn Kathir, Vol 8, Pg 371, Arabic, Dar al-fikr al-`arabi, Al-jizah, 1933).
For Asma being 100 years old, see Al-Bidayah wa’l-nihayah, Ibn Kathir, Vol 8, Pg 372, Arabic, Dar al-fikr al- `arabi, Al-jizah, 1933). Ibn Hajar al-Asqalani also has the same information: “She [Asma (ra)] lived a hundred years and died in 73 or 74 AH.” Taqribu’l-tehzib, Ibn Hajar Al- Asqalani, Pg 654, Arabic, Bab fi’l-nisa’, al- harfu’l-alif, Lucknow).
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আল তাবারী’র বই (Tarikhu’l-umam wa’l-mamlu’k,) থেকে পাওয়া যায়, হযরত আবু বকর (রাঃ) এর চার সন্তান ছিলেন যাঁরা সকলেই ইসলামপূর্ব যুগে জন্মগ্রহন করেন। (ইসলামপূর্ব যুগ ৬১০ খৃষ্টাব্দ শেষ হয়)। তাহলে নিশ্চয়ই হযরত আয়েশা (রাঃ) এর জন্ম ৬১০ খৃষ্টাব্দ এর পূর্বে। সে হিসাবেও তিনি বিবাহের সময় ৬/৯ বছর বয়স্কা ছিলেন না।
Tarikhu’l-umam wa’l-mamlu’k, Al-Tabari, Vol 4, Pg 50, Arabic, Dara’l-fikr, Beirut, 1979).
আরেক প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে হাইসাম থেকে জানা যায় হযরত আয়েশা (রাঃ) হযরত উমর ইবন আল খাত্তাব (রাঃ) এর বেশ আগে ইসলাম গ্রহন করেন। (উমর ইবন আল খাত্তাব (রাঃ) ৬১৬ খৃষ্টাব্দে ইসলাম গ্রহন করেন)। আবার হযরত আবু বকর (রাঃ) ইসলাম গ্রহন করেন ৬১০ খৃষ্টাব্দে। সুতরাং হযরত আয়েশা (রাঃ) ও ৬১০ এর কাছাকাছি সময়েই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। তার অর্থ আবারো দাঁড়ায় যে তিনি ৬১০ খৃষ্টাব্দের আগেই জন্মগ্রহন করেছিলেন এবং কোন ধর্ম গ্রহন করবার নূন্যতম বয়স (৬/৭ হলেও) তাঁর ছিল। তাহলে ৬২৩-৬২৪ সালে তার বয়স প্রায় ১৮-২০ হয়।
(Al-Sirah al- Nabawiyyah, Ibn Hisham, vol 1, Pg 227 – 234 and 295, Arabic, Maktabah al- Riyadh al- hadithah, Al- Riyadh)
হাম্বলি মাযহাবের ইমাম, আহমাদ ইবনে হাম্বাল তাঁর মুসনাদগ্রন্থে (৬/২১০) উল্লেখ করেছেন, বিবি খাদিযাহ (রাঃ) এর মৃত্যুর পরে (৬২০ খৃষ্টাব্দ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্য খাওলাহ خولة নামের একজন ২টা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন। যার মধ্যে হযরত আয়েশার (রাঃ) এর কথা উল্লেখ করবার সময় একজন পূর্ণবয়স্ক যুবতী হিসেবেই উল্লেখ করেন কোন ছোট্ট শিশু طفل/Baby হিসেবে নয়।
(Musnad, Ahmad ibn Hanbal, Vol 6, Pg 210, Arabic, Dar Ihya al-turath al- `arabi, Beirut).
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও সহিহ বুখারীর অন্যতম ভাষ্যকার ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ)-এর একটি কিতাবের নাম ﺍﻹﺻﺎﺑﺔ ﻓﻲ ﺗﻤﻴﻴﺰ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ (আল-ইছাবাহ ফী তাময়ীঝিস সাহাবাহ)। কিতাবটির ৪র্থ খণ্ডের ৩৭৭ নং পৃষ্ঠায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত ফাতেমা (রা)- এর জন্মের ৫ বছর পর হযরত আয়েশা (রা) জন্মগ্রহণ করেন। আর ফাতেমা (রাঃ) এর জন্মের সময় রাসুল (সাঃ) এর বয়স ছিল ৩৫ বছর। সে হিসেবে আয়েশা (রাঃ) এর জন্মের সময় মুহাম্মদ (সাঃ) এর বয়স ৪০ হবার কথা। ফলে তাঁদের বিয়ের সময় আয়েশা (রাঃ) ৬/৯ না, বরং ১৪-১৫ বছর বয়স হবার কথা।
(Al-isabah fi tamyizi’l- sahabah, Ibn Hajar al- Asqalani, Vol 4, Pg 377, Arabic, Maktabatu’l- Riyadh al- haditha, al- Riyadh,1978)
ওপরের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হলো হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে বিয়ের সময় আয়েশা (রাঃ) যে ৬/৯ বছরের শিশু ছিলেননা সেটাই প্রমাণ করা।
জ্ঞাতব্য : কোনো সহীহ হাদীস কখনো আল কোরআনের নির্দেশনার সাথে অসামাঞ্জস্যপূর্ণ হয়না। হ্যাঁ, দুর্বল সূত্রে বর্ণিত রেওয়ায়েত হলে তখনি সেটির কারণে সাংঘর্ষিক দেখা দেয়া স্বাভাবিক। তখন নিশ্চিতভাবেই সেই হাদীসের ওপর ভরসা রাখা যুক্তিযুক্ত না। তা সে বুখারী মুসলিম বা সমস্ত সিহাহ সিত্তাতেই থাকুকনা কেন। আর এই বৈপরিত্য ধরবার জন্য নিজেদের বিবেককে নয়, বরং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ‘জরাহ তা’দীল’র ইমামদের তাহকীককে গ্রহণ করা উচিত সকল মুসলমানের। বিখ্যাত স্কলারদের মতে আয়েশা (রা.) এর বিয়ের সময় বয়স ৯ বছর ছিলনা বরং তার বয়স কিছুতেই ১৭ বছরের কম হতে পারেনা এবং সম্ভবত তখন তার বয়স ১৯ বছর ছিল। আসলে এ বিষয়ে আমরা কম জেনেই অনুমানের আশ্রয় নিই। বিখ্যাত স্কলার আদিল সালাহি এ ব্যপারে কি বলছেন পড়ুন :
বিশিষ্ট স্কলার আদিল সালাহি :
আদিল সালাহি এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাব দেন, যেটি প্রকাশিত হয় আরব নিউজে ৭ মার্চ ২০০৩ তারিখে। তিনি বলেন “এ প্রশ্নটি ইসলাম এবং রাসুল (সা.)- এর ব্যক্তি চরিত্রের প্রতি আক্রমণ বৃদ্ধির সংগে সংগে বার বার উঠে আসছে। কিন্তু ইসলাম অথবা রাসুল (সা.)-এর চরিত্র এবং ব্যবহারে এমন কিছু নাই যার জন্য আমাদের ক্ষমা চাওয়ার বা বিব্রত বোধ করার প্রয়োজন আছে। তারপরও রাসুল (সা.)-এর সাথে আয়েশা (রা.)-এর বিয়ে এবং সে সময় তার বয়স প্রসংঙ্গে কিছু আলোচনা করা যেতে পারে যাতে প্রমাণ হয় এব্যপারে আদৌ অভিযোগ করার মত কিছুই নাই। এ ব্যপারে যে বর্ণনাটি সবচেয়ে বেশী উদ্ধৃত হয় তা হচেছ, রাসুল (সা.) যখন বিয়ের প্রস্তাব দেন তখন আয়েশা (রা.)-এর বয়স ছিল ছয় এবং তিনি যখন তাকে বিয়ে করেন তখন তার বয়স ছিল নয়। মানুষ এটাকে প্রতিষ্ঠিত সত্য বলে গ্রহন করে থাকে। কিন্তু যখন আমরা এসব বর্ণনা এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্ত বিষয়গুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করি, তখন আমরা দেখতে পাই, এসব বর্ণনা এমনকি প্রাথমিক নিরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হতে পারেনা।
সর্বপ্রথম আমাদের যে বিষয়টি বুঝতে হবে তা হচ্ছে, রাসুল (সা)-এর সময় আরব সমাজের অধিকাংশই ছিল নিরক্ষর এবং খুব কম লোকই লিখতে বা পড়তে পারত। বড় বড় ঘটনাগুলোর সন তারিখ হিসেব রাখার জন্য যেখানে কোন নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হত না, সেখানে মানুষের জন্ম মৃত্যুর তারিখ হিসেব রাখার কথাতো বাদই দেয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমরা পড়ি, রাসূল (সা.) জন্মগ্রহন করেছেন ‘হাতির বছরে’। হাতির বছর বলতে বোঝায় সেই বছর যেবার আবিসিনিয়ার সেনাপতি ইয়েমেন থেকে মক্কা এসেছিল এক বিরাট সেনাবাহি নী নিয়ে কাবা ঘর ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে। একটি বড় হাতি সৈন্য বাহিনীর সামনে মার্চ করে আসছিল আর তাই ঘটনাটি এবং বছরটি হাতির নামে পরিচিত হয়। রাসূল (সা.)-এর সময় আরবে মানুষের বয়স সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো বিভ্রান্তিকর এবং অনির্দিষ্ট ছিল।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সাধারণ ধারণা হচ্ছে, খাদিজা (রা.)-এর সাথে রাসূল (সা.)-এর বিয়ের সময় রাসুল (সা.)-এর বয়স ছিল ২৫ অন্যদিকে খাদিজা (রা.)-এর বয়স ছিল ৪০। “ইবনে হিশাম” রচিত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সিরাতগ্রন্থে এরকম উল্লেখ থাকলেও সে সময় রাসুল (সা.)-এর বয়স সম্পর্কে আরো দু’টি ভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে খাদিজা (রা.)-এর সাথে বিয়ের সময় রাসূল (সা.)-এর বয়স ছিল ৩০, অন্যটিতে বলা হয়েছে ২৯।
সে সময় খাদিজা (রা.) বয়স কত ছিল সে সম্পর্কেও বর্ণনার বিভিন্নতা আছে । কোথাও বলা হয়েছে সে সময় তার বয়স ছিল ৩৫ কোথাও বলা হয়েছে ২৫। রাসূল (সা.)-এর সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্যদের একজন ছিলেন রাসূল (সা.)-এর চাচাতো ভাই ইবনে আব্বাস (রা.)। তার থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, যেখানে তিনি বলেছেন, বিয়ের সময় রাসূল (সা.) ও তার স্ত্রী উভয়ের বয়সই ছিল ২৮ বছর।
খাদিজা (রা.)-এর গর্ভে রাসূল (সা.)-এর ছয়টি সন্তান জন্মগ্রহন করেছে। এদিক থেকে বিচার করলে বিয়ের সময় তার বয়স চল্লিশ ছিল এমন ধারণা করার উপায় নেই, অথচ এটাই হচ্ছে সবচেয়ে প্রচলিত বর্ণনা। প্রকৃতপক্ষে তার বয়স এর চেয়ে অনেক কম হবার কথা। তার বয়স ২৮ অথবা ২৫ ছিল এমন বর্ণনাই অনেক বেশী যুক্তিসঙ্গত মনে করা যেতে পারে। খাদিজা (রা.)-এর জীবদ্দশায় রাসূল (সা.) আর কাউকে বিয়ে করেননি এবং তিনি খাদিজার (রা.) সাথে ২৫ বছর কাটিয়েছেন। তার ইন্তেকালের পর যখন তিনি খুবই চাপের মুখে ছিলেন, তখন একজন মহিলা সাহাবী তাকে পরামর্শ দিয়ে বললেন, তার বিয়ে করা উচিৎ যাতে তিনি দিনের দীর্ঘ প্রচারকাজ শেষে বাড়িতে একজন সঙ্গিনী পান এবং স্বস্তি লাভ করতে পারেন। সেই মহিলা তাকে দু’জনের কথা বললেন, একজন কুমারী আয়েশা অন্যজন বিধবা সাওদা।
রাসূল (সা) তাকে দুজনের কাছেই প্রস্তাব নিয়ে যেতে বললেন। রাসূল (সা)- কে নতুন বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়ার উদ্দেশ্য ছিল তার জন্য একজন সঙ্গীনি এবং স্বস্তির ব্যবস্থা করা। কিন্তু যারা বলতে চান যে আয়েশা (রা)-এর বয়স সে সময় ছয় বছর ছিল, তারা কি এটা বিশ্বাস করতে বলেন যে, ঐ মহিলা সাহাবীটি রাসূল (সা)-কে মাত্র ছয় বছরের একটি বালিকার সাথে বিয়ের তথা সঙ্গ লাভের প্রস্তাব করেছিলেন? বর্ণনাগুলো শুধু যৌক্তিকতার আলোকে বিচার না করে একে কিছু দালিলীক ভিত্তি প্রমাণ স্বাপেক্ষে বিবেচনা করা উচিৎ।
এজন্য আমরা “ইবনে ইসহাক” রচিত সিরাতগ্রন্থ দেখব। আর ইবনে ইসহাক রচিত সিরাতগ্রন্থ হচেছ সমস্ত সিরাত গ্রন্থগুলোর ভিত্তি এবং তুলনামূলক সবচেয়ে নির্ভুল। সেখানে সেসব মুসলিমদের একটি তালিকা আছে, যারা ইসলামী দাওয়াতের শুরুর বছরগুলোতে ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। সেই তালিকাটিতে প্রায় পঞ্চাশ জন মুসলিমের নাম আছে। যার মধ্যে আবু বকরের দুই কন্যা আসমা এবং আয়েশার নামও অন্তর্ভুক্ত আছে। সেখানে এটাও যোগ করা আছে যে তিনি সে সময় ছোট ছিলেন। এই তালিকায় আয়েশার নাম এসেছে বিশ নম্বরে। কিন্তু আমরা এর উপর তেমন গুরুত্ব আরোপ করবনা। আমরা যে বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেব তা হচ্ছে, এ তালিকার সমস্ত মুসলিমই ইসলাম গ্রহন করেছিলেন নবুয়্যতের পঞ্চম বছরের আগে। কেননা ঐ বছরই আবিসিনিয়ায় মুসলমানদের প্রথম হিজরত সংঘঠিত হয় এবং ঐ তালিকায় এমন অনেকের নাম ছিল যারা এ হিজরতে অংশগ্রহন করেছিলেন।
সুতরাং বলতে পারি যে, বিয়ের সময় হযরত মা আয়েশা (রা)-এর বয়স ছয় বছর ছিল মর্মে প্রচলিত তথ্যটি সঠিক নয়। বরং তার বয়স কিছুতেই ১৭ বছরের কম হতে পারেনা এবং সম্ভবত তখন তার বয়স ১৯ বছর ছিল। আসলে এ বিষয়ে আমরা কম জেনেই অনুমানের আশ্রয় নিই।
অপরাপর দুটি সহিহ হাদিস দ্বারা উপরুল্লিখিত লেখাকে চ্যালেঞ্জ এবং তার জবাব :
প্রিয় সুধী! বাহ্যিকভাবে অপরাপর দুটি সহিহ হাদিস দ্বারা আমার নাতিদীর্ঘ লেখাটি চ্যালেঞ্জ করার মত যথেষ্ট সুযোগও রয়েছে। আমি হাদিস দুটি এখানে উল্লেখপূর্বক সেগুলোর জবাব দেব, ইনশাআল্লাহ। হাদিস দুটি নিচে দেয়া হল –
(১) হযরত আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আমি আল্লাহর রাসুলের উপস্থিতিতে পুতুল নিয়ে খেলা করতাম আমার বান্ধবীরাও আমার সাথে খেলত। যখন আল্লাহর রাসুল (সঃ) বাড়ীতে প্রবেশ করতেন, তখন ওরা পুতুলগুলো লুকিয়ে নিত। কিন্তু তিনি (সঃ) তাদেরকে আমার সাথে একত্রে খেলতে বলতেন। [সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬১৩০ ; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-২৪৪০ ]
(২) একবার রাসুল (সঃ) ঘরে কিছু পুতুল দেখতে পেয়ে আয়িশা (রাঃ) কে বললেন, এগুলো কী? তিনি (রাঃ) বললেন, এগুলো আমার পুতুল। এগুলোর মধ্যে একটি পাখাওয়ালা ঘোড়া ছিল। [সহিহ আবু দাউদ, হাদিস নং-২২৮১৩]
আমার জবাব : উল্লিখিত হাদীস দুটির প্রেক্ষিতে উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তরে সংক্ষেপে এতটুকু জেনে নিন যে, ১নং হাদিসের বিষয়বস্তু হযরত আয়েশা’র বিয়ের আগের সময়ের সাথে এবং বাপের বাড়ির সাথেই সম্পর্কিত। কারণ, সাধারণত বাপের বাড়িতে থাকাকালেই বান্ধবীদের সাথে মেলামেশার সুযোগ থাকে। হাদিসের বর্ণনাভঙ্গি কিন্তু এটাই বুঝাচ্ছে। আর তখন হযরত আয়েশার বিয়ে হবার প্রশ্নই আসতে পারেনা। কারণ তখনো পর্যন্ত তিনি শিশুই ছিলেন। সুতরাং হাদিসটি সহিহ এবং বিশ্লেষণ এটাই। অতএব, এটি আমার নাতিদীর্ঘ তথ্যভিত্তিক রচনার বিরুদ্ধে যায়নি।
.
আর পরের হাদিসটির বিষয়বস্তু অবশ্য বিয়ের পরে ও স্বামীর বাড়িতে থাকাকালীন সময়ের সাথেই সম্পর্কিত। আর এখানে সূক্ষ্ণভাবে চিন্তা করলে বুঝবেন যে, এ হাদিসে হযরত আয়েশার (রা) বক্তব্যটি কিভাবে রয়েছে? এখানে তিনি পুতুলগুলো নিজের সেলপ বা আলমারিতে সযত্নে রেখে দেয়ার কথাই বলতে চেয়েছেন, কিন্তু পুতুল নিয়ে খেলাধুলা করতেন—এরকম কোনো কথারই তিনি বলেননি কিংবা বলার কোনো প্রমাণও নেই। হাদিসের ভাষ্য দেখুন: ” এগুলো আমার পুতুল। এগুলোর মধ্যে একটি পাখাওয়ালা ঘোড়াও ছিল।” (সহিহ আবু দাউদ, হাদিস নং-২২৮১৩ )।
.
অতএব বুঝা গেল যে, পরের রেওয়ায়ত দ্বারা হযরত আম্মাজান আয়েশা (রা) তিনি যেন বুঝাতে চেয়েছেন যে, আমি ইতিপূর্বে এ পুতুলগুলো নিয়ে বান্ধবীদের সাথে বাপের বাড়িতে খেলাধুলা করেছিলাম। বিয়ের সময় স্বামীর বাড়িতে স্মৃতিস্বারক হিসেবে সেগুলো সংগে করে নিয়েও আসি। স্বামীর বাড়িতে নিজের নিকট এগুলো যত্নের সাথে রেখে দিই। প্রিয় স্বামী মুহাম্মদ (সা) একদা এসব পুতুল দেখে পেললেন। অমনি তিনি এক প্রকারের বিস্ময়ের স্বরে জিজ্ঞেস করলেন “এগুলো কী, হে আয়েশা!“। হাদিসের বর্ণনাভঙ্গি এমনটাই বুঝাচ্ছে। একটু গভীর ভাবে চিন্তা করে হাদিস দুটো উপলব্ধি করতে হবে।
.
সুতরাং, বলা যায় যে, উপরুল্লিখিত হাদিস দুটো আপন আপন জায়গায় সঠিক। শুধুমাত্র আমাদের বুঝার সমস্যা। অতএব এ হাদিসও আমার নাতিদীর্ঘ লেখাটির বিরুদ্ধে যায়নি। কেননা, এ হাদিস দ্বারা আর যাইহোক—হযরত আয়েশা তিনি স্বামীর বাড়িতে থাকাকালেও পুতুল খেলেছেন এরকম কোনো কথা বুঝায়নি।
হাদীস বর্ণনাকারীদের মধ্যে হযরত আয়েশা অন্যতম। তার ছিল প্রখর স্মৃতিশক্তি। তিনি নিজে কখনোই বলেননি যে, মহানবীর সাথে বিয়েতে বয়স কম হওয়ার দরুন তার কোন দাম্পত্য সংকট হয়েছিল। বরং তার বর্ণিত হাদীসে আমরা ঠিক বিপরীতটাই দেখতে পাই। তারা উভয়ে উভয়কে দারুন পছন্দ করতেন এবং সুখী দম্পতি ছিলেন। দাম্পত্য ও মেয়েলী বিষয়ে উম্মতের জন্যে দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্যে এই বয়সের স্ত্রীর প্রয়োজন ছিল, যিনি মহানবীর মৃত্যুর পরও দীর্ঘ সময় ধরে মানুষকে হেদায়েতের চেষ্টা করেছেন। নবীর বানী প্রচার করে ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য অবদান রেখে গেছেন।
মহানবীর প্রতিটি বিয়ের একটা উদ্দেশ্য ছিল এবং তার মধ্যে কল্যাণ নিহিত ছিল। তিনি পেডোফাইল বা শিশুকামি ছিলেন না, যেটা নাস্তিকেরা তার বিরুদ্ধে বলে বেড়াচ্ছেন। তিনি প্রথম যৌবনেই তার চাইতে বেশী বয়সের মহিলা বিবি খাদিজাকে বিবাহ করেছিলেন। অল্প বয়েসী হলেও প্রখর বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি সম্পন্না আয়েশা শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম ছিলেন বলেই মহানবী তাকে বিয়ে করেছিলেন। মহানবীর সাথে বিয়ের আগেই আয়েশার আরেকজনের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল। আবু বকর ও আয়েশা ইসলাম গ্রহন করায় ঐ বিয়ে ভেঙ্গে যায়। শিশু হলে তো বিয়ে ঠিক হতো না। মক্কার কাফেররা মহানবীর বিরুদ্ধে সবধরনের অভিযোগ করলেও পিডোফিলিয়ার অভিযোগ কোনদিন করেনি।
তবে পৃথিবীতে সব মানুষ একই রকম শারীরিক গঠন ও বুদ্ধি নিয়ে জন্মায় না। ব্যতিক্রমী অনেকেই আছেন। যেমন “Kim Ung-Yong” এতই প্রতিভাধর ছিলেন যে, তিনি মাত্র তিন বছর বয়সে Hanyang ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ্যা বিভাগের একজন সম্মানিত অতিথি ছাত্রের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। যা সাধারনের চিন্তাও বাহিরে। শুধু তাই নয়, সাত বছর বয়সে নাসায় রিসার্চ করার জন্য আমেরিকার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তার জন্মভূমি কোরিয়া থেকে তাকে সসম্মানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
এগুলো ব্যতিক্রমী ঘটনা। পৃথিবীতে এরকম ব্যতিক্রমী ঘটনা বহু আছে। অতীতেও ছিল। ৬/৯ বৎসরের কিশোরী ১৮/২০ বছরের যুবতীর মত সামর্থ্য অর্জন করে থাকলে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু এরকম ব্যতিক্রমের কোন ঘটনার কথা কোন হাদীসে বা সিরাত গ্রন্থে পাওয়া যায়নি।
বুখারীর বর্ণিত হাদীসটি যদি অকাট্য সত্য হিসাবে মেনে নেয়া হয়, এক্ষেত্রে যুক্তি হলো, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অল্প বয়স্কা কিশোরী বিয়ে করা কোন অন্যায় নয়। বিয়ে করা না করা, অল্প কি বেশী বয়স্কা বিয়ে করা বা বিয়ে না করা- এগুলো নবী হওয়ার কোন শর্ত নয়। নবী সে যুগে খেজুর পাতার বিছানায় ঘুমাতেন, মাটির পাত্রে খেতেন, তাই বলে এ যুগের মানুষকেও খেজুর পাতায় ঘুমাতে হবে, মাটির পাত্রে খেতে হবে তা নয়। সে সময় আরবের মানুষের আয়ুষ্কাল কম ছিল। ৯/১০ বছরের কিশোরী বিয়ে করা স্বাভাবিক ছিল বলেই প্রতীয়মান। আয়েশা, তার মা বাবা এবং সমাজের কেউই এর বিরোধিতা করেননি। এটা অনৈতিক হলে নিশ্চয়ই প্রতিবাদ হতো। কাজেই এর জন্যে বর্তমানের নাস্তিকেরা পেরেশান হলেও কিছু যায় আসে না।
পাঠক, আমরা একটা সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছি, তাহলো, মহানবী কোনভাবেই কোরআনের পরিপন্থী কোন কাজ করেননি। কেননা তিনি সর্বযুগের আদর্শ ব্যক্তিত্ব, কোরআনের বাস্তব প্রতিফলন।
.
.
.
.
কিশোরী আয়েশা রাঃ এর বিয়ে নিয়ে নাস্তিকদের মিথ্যাচার!!
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
নাস্তিকরা কিশোরী আয়েশা রাঃ-কে বিয়ে করার জন্য মুহাম্মদ সাঃ-কে নানাভাবে অভিযুক্ত ও আক্রমণ করে। এসব আক্রমণাত্মক অভিযোগের মধ্যে শিশু নির্যাতন ও একটি। তাদের অভিযোগ যে মুহাম্মদ (সা:) কালের সীমাবদ্ধতা উত্তীর্ণ হতে পারেন নি, তিনি সর্বকালের আদর্শ হতে পারেননি। আমরা এখানে তাদের অভিযোগগুলো যাচাই করতে যাচ্ছি।
প্রথমে দেখি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটেনিকায় Child Abuse বা বাচ্চাদের সাথে কুকর্মের সংজ্ঞা কী দিয়েছে-
শিশুদের সাথে কুকর্ম করা, যাকে শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতাও বলা হয়, এইটি হচ্ছে ইচ্ছাকৃত ভাবে শিশুদেরকে অন্যায় ভাবে আঘাত দেয়া এবং ভোগান্তি আরোপ করা। এই পরিভাষা যে সব অর্থ বহন করে তা হল এই: অসংযত/অপরিমিত শারীরিক নির্যাতন করা;অসঙ্গত অশ্লীলতা ভাষা ব্যবহার করা, দুর্ব্যবহার; উপযুক্ত নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থতা,খাদ্য, চিকিৎসা ও মানসিক সমর্থ দানে ব্যর্থতা; অবৈধ যৌনসম্পর্ক স্থাপন করা; যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণ;এবং শিশুদের নিয়ে অশ্লীল ছবি তৈরি করা। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটা প্রায়ই “ শিশু আঘাত জনিত লক্ষণ” বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। শিশুদের সাথে অপমানজনক কুকর্ম/দুর্ব্যবহার পৃথিবীর প্রায় সব দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত এবং ফৌজদারি সংবিধিমালায় দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। শিশুদের সাথে দুর্ব্যবহার তার ভবিষ্যৎ জীবনে গভীর পরিণতি বা প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া শারীরিক বিকাশে বিলম্ব, ভাষার ব্যবহার ও অর্থ অনুধাবনে বৈকল্য, ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন, শিক্ষা ও ব্যবহারে সমস্যা –এগুলো হচ্ছে কিছু সাধারণ বিষয় যা নাবালক দুর্ব্যবহার, অযত্ন ও অবহেলা থেকে উদ্ভূত হয়। (এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, ১৯৯৮)
মন্তব্যঃ–
উপরে উল্লেখিত নির্ণায়ক গুলোর মধ্যে কোন নির্ণায়ক মুহাম্মদ সাঃ জীবনের ইতিহাসে পাওয়া যায়নি । আয়েশা রাঃ অথবা অন্য কোন মানুষকে এই ধরণের আঘাত এবং যন্ত্রণা মুহাম্মদ সাঃ দেবার কোন একটি ঘটনা পাওয়া যায়না। আয়েশা রাঃ বা মুহাম্মদ সাঃ অন্য কোন স্ত্রী বা উপপত্নীর সাথে মুহাম্মদ সাঃ মৌখিক ভাবে হোক আর শারীরিক ভাবে যৌন নিপীড়নের কোন ন্যুনতম উদাহরণ দেখা যায়নি। ইতিহাসে আয়েশা রাঃ উনার নিজের এবং আশেপাশের অনেক মানুষের, এমনকি মুহাম্মদ সাঃ এর মত ব্যক্তিত্বের অনেক ঘটনা রাখঢাক না করেই বর্ণনা করে গিয়েছেন – কিন্তু তিনি নিজে কখনও মুহাম্মদের সাঃ স্ত্রীর দায়িত্ব পালন কালে কোন ধরণের যন্ত্রণা বা কষ্ট ভোগ করেছিলেন তাঁর কোন বর্ণনা উল্লেখ করে যাননি। বরং যখনই মুহাম্মদ সাঃ ভিন্ন কারণ বশতঃ অন্য মহিলাদেরকে বিয়ে করে এনেছিলেন তখন আমরা উনাকে অনেকসময় ঈর্ষান্বিত হতে দেখছি। এবং কোন এক ঘটনার কারণে মুহাম্মদ সাঃ স্ত্রীদের থেকে ১ মাস দূরে থাকার প্রতিজ্ঞা করে দূরে থেকে মাস পূর্ণ হবার পর স্ত্রীদের হুজরায় গিয়েছিলেন সেই সময় আয়েশা রাঃ বলে উঠেছিলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ, আজ তো ২৯ দিন মাস পূর্ণ হয় নাই!!! যে স্ত্রী হিসেব করে অপেক্ষার প্রহর গুনতেন এবং সতীনদের প্রতি ঈর্ষা বোধ করতেন – এই বাস্তবতাই বলে দেয় দেয় যে তিনি কি পরিমাণ ভালবাসতেন মুহাম্মদ সাঃ কে।.
“শিশুদের সাথে দুর্ব্যবহার তার ভবিষ্যৎ জীবনে গভীর পরিণতি বা প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া শারীরিক বিকাশে বিলম্ব,ভাষার ব্যবহার ও অর্থ অনুধাবনে বৈকল্য,ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন,শিক্ষা ও ব্যবহারে সমস্যা –এগুলো হচ্ছে কিছু সাধারণ বিষয় যা নাবালক দুর্ব্যবহার,অযত্ন ও অবহেলা থেকে উদ্ভূত হয়”।
উপরে উল্লেখিত কোন একটি সমস্যার কথা আয়েশা রাঃ জীবনী থেকে জানতে পাই না,যা পাই বরং তার উল্টা প্রতিচ্ছবি-আয়েশা রাঃ কে বাস্তব জীবনে আমার দেখে পাই – তাঁর ব্যক্তিত্ব, শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সর্ব দিক দিয়ে তিনি অনন্যা ছিলেন তাঁর প্রখর স্মৃতি শক্তির বাস্তব স্বাক্ষর আমরা হাদিসের মাধ্যমে জানতে পারি। তিনি মুহাম্মদ সাঃ ওফাতের পর দীর্ঘ ৫০ বছর মানুষকে কোরআন হাদিস শিক্ষা দান করেছিলেন শুধু তাই নয় মুহাম্মদ সাঃ পরবর্তী তিন তিন জন খলিফাকে পরামর্শ সহায়তা দিয়েছিলেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে,আয়েশা রাঃ মুহাম্মদ সাঃ কে বিয়ে করে উনার অভিভাবকত্ব লাভ করে তিনি নির্যাতিত শিশু হিসাবে নয় বরং আশীর্বাদ প্রাপ্ত শিশু ছিলেন।
মুহম্মদ সাঃ এর বিরুদ্ধে অভিযোগকে বিশ্লেষণ এবং খণ্ডন করার পর আমাদের কাছে বিকল্প টেকসই যা বলার আছে তা হচ্ছে- আয়েশা রাঃ সাথে মুহাম্মদ সাঃ বিয়ে দ্বারা মানবতা এবং ইসলামের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয়েছিল। আসুন আমরা আমাদের দাবী বিশ্লেষণ করে দেখি-
মুহাম্মদ সাঃ আয়েশা রাঃ কে প্রাথমিক যে তিন কারণের জন্য বিয়ে করেছিলেনঃ
আবু বকর রাঃ সাথের বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আত্মীয়তার মজবুত বাঁধনে পর্যবেশিত করে রাখা।
আয়েশা রাঃ ইসলামের বিধি বিধান শিক্ষা এবং তৈরী করা যাতে তিনি ইসলামের বিধি বিধানকে সংরক্ষণ, (বিশেষ করে নারীদের জন্য একান্ত বিষয়াদি) রাসুল সাঃ জীবন ইতিহাস, আল কোরআনের আয়াতের নাজিলের কারণ এবং মানুষকে তাঁর সঠিক শিক্ষাদান করতে পারেন।
উনাকে সে ভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল যাতে তিনি উনার সম্পূর্ণ সক্ষমতাকে ইসলামের জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
আয়েশা রাঃ কে বিয়ে করা ছিল আল্লাহর ইচ্ছা যা ওহির মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
মুহাম্মদ সাঃ থেকে সে সম্পর্কে যে বর্ণনা তিনি জেনে ছিলেন সেই কথা আয়েশা রাঃ নিজেই বর্ণনা করে গিয়েছেন-তিনি বলেছেন-
“তোমাকে বিয়ে করার আগে আমাকে ২ বার স্বপ্ন দেখান হয়েছিল। আমি দেখেছি একজন ফেরেশতা তোমাকে এক টুকরো রেশমি কাপড়ে জড়িয়ে আমার কাছে নিয়ে আসছেন। আমি বললাম- আপনি নিকাব উন্মোচন করুন! যখন তিনি নিকাব উন্মোচন করলেন তখন আমি দেখতে পেলাম যে ঐ মহিলা তুমিই। আমি তখন বললাম –এইটি যদি আল্লাহর তরফ থেকে হয়ে থাকে তাহলে তিনি তা অবশ্য বাস্তবায়ন করবেন। তারপর আবার আমাকে দেখানো হলো যে, একজন ফেরেশতা তোমাকে এক টুকরো রেশমি কাপড়ে জড়িয়ে আমার কাছে নিয়ে আসছেন। আমি বললাম- আপনি নিকাব উন্মোচন করুন! যখন তিনি নিকাব উন্মোচন করলেন তখন আমি দেখতে পেলাম যে ঐ মহিলা তুমিই। আমি তখন বললাম –এইটি যদি আল্লাহর তরফ থেকে হয়ে থাকে তাহলে তিনি তা অবশ্য বাস্তবায়ন করবেন। (সহি বুখারী ২৪১৮)
আয়েশা রাঃ জন্ম লাভ করেন মুহাম্মদ সাঃ এর নবুয়ত লাভের পর এবং উনার পিতা মাতার ইসলাম গ্রহণের পর, সম্পূর্ণ ইসলামী আক্বিদা ও পরিবেশে তাঁর জন্মের সময় তাদের পরিবারে প্রাক ইসলামী মুশরিকদের সংস্কার, আচার আচরণ কোনটাই তাঁর মগজে স্থান লাভ করতে পারে নাই। তিনিই জন্মগত ভাবে মুসলিম শিশু হয়ে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। ইসলাম অবিকৃত ভাবে তাঁর ভিতর রূপ গ্রহণ করতে পেরেছিল। কাজেই উনার চিন্তা চেতনায় খাঁটি ইসলামী বিশ্বাস বিরাজমান ছিল।
আয়েশা রাঃ প্রাথমিক ভাবে সাফা বিনতে আব্দুল্লাহ নাম্নীয় মহিলার তত্বাবধানে শিক্ষা লাভ করেন। তারপর সে যুগের সুগভীর জ্ঞানের অধিকারী উনার পিতা আবু বকর রাঃ কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেন। অসাধারণ ধীশক্তি সম্পন্না ও জিজ্ঞাসু স্বভাবী আয়েশা রাঃ পক্ষে উপযুক্ত শিক্ষকই জুটেছিল। তিনি প্রখর স্মৃতিশক্তি সম্পন্না ছিলেন। একবার যা শুনতেন তা অন্তরে গেঁথে রাখতে পারতেন। এই কারণে তিনি বাল্য থেকেই লক্ষণীয় সৌন্দর্য্য ও প্রখর স্মৃতিশক্তির কারণে সবার কাছে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি মুহাম্মদ সাঃ স্নেহময় যত্ন এবং সতর্ক পরিচর্যায় চলে আসার কারণে এবং স্ত্রী এবং ঘনিষ্ঠ সঙ্গী হিসাবে তিনিই এক মাত্র অতি কাছ থেকে মুহাম্মদ সাঃ এর কাছ থেকে ইসলামী জ্ঞান এবং সূক্ষ্মদর্শিতা লাভ করেছিলেন যা অন্য কোন নারীর পক্ষে সেই রূপ জ্ঞান এবং সূক্ষ্মদর্শিতা লাভ করা সম্ভব হয়নি। .
মুহাম্মদ সাঃ এর ওফাতের পর ৫০ বছর তিনি নবীর কাছ প্রাপ্ত ইসলামী শিক্ষার শিক্ষকতা করেছিলেন। উম্মতের কাছে ব্যাপক ভাবে রাসুলের হাদিস পৌঁছে দেবার জন্য এমন বয়সের স্ত্রীর প্রয়োজন ছিল। তাই এই বিয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশে যে হয়েছিল তা কোন মুসলিমদের স্বীকার করতে দ্বিধা থাকা উচিত নয়। হাফসা রাঃ সালমা রাঃ এর মত আয়েশা রাঃ এর পুরো কোরআন মুখস্থ ছিল। এমন কি মুহাম্মদ সাঃ ওফাতের পর উনার কাছে উনার নিজস্ব কোরআনের একটি সংকলন ছিল।
হাদিস বর্ণনাকারীদের অন্যতম চারজনের ( আবু হুরাইয়াহ রাঃ, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ, আনাস ইবনে মালিক রাঃ) মধ্যে আয়েশা রাঃ একজন ছিলেন। যিনি একাই ২০০০ হাজারের বেশি হাদিস বর্ণনা করে গেছেন। উনার ২২১০টি হাদিসের মধ্যে থেকে ১৭৪টি হাদিস বুখারী আর মুসলিমে স্থান পেয়েছে। তাঁর বর্ণনা কৃত হাদিসে মধ্যে এমন কিছু হাদিস আছে যা নারীদের একান্ত বিষয় যা আয়েশা রাঃ ছাড়া অন্যদের কাছ থেকে পাওয়া যায় নাই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে, উনার ভাগনা হযরত উরুওয়া ইবনে যোবায়র (রা:) সহ কমপক্ষে তিন জন হাদিস বিশারদ হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদিসসমূহ সহীফাকারে লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন। সাহাবিয়ে কেরাম পরবর্তী যুগে উরুওয়াহ ছিলেন একজন প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ। ইসলামী হাদিস বিশারদগণ বলে থাকেন- আয়েশা রাঃ না থাকলে ইলমে হাদিসের অর্ধেকই বিস্মৃতির অন্তরালে হারিয়ে যেত।
নিচের হাদিস থেকে বুঝা যেতে পারে যে, অনেক সাহাবিয়ে কেরাম আয়েশা রাঃ এর কাছ থেকে জ্ঞান লাভ করেছিলেন-
আবু মুসা (রাঃ)হতে বর্ণিতঃ এক দল মুহাজির এবং এক দল আনসারের মধ্যে একবার মতবিরোধ দেখা দেয়। জনৈক আনসার বলেছিলেন– গোসল ফরজ হবে কেবলমাত্র তখনই যদি বীর্য বেরিয়ে আসে। কিন্তু মুহাজিরগণ বলেন যে, মেয়ে লোকের সাথে সঙ্গমে মিলিত হলেই গোসল ফরজ হয়ে যায় । আবু মুসা রাঃ বললেন– ঠিক আছে, আমি তোমাদেরকে এ বিষয়ে সঠিক নিয়ম বাৎলে দেব। তিনি (আবু মুসা) বলেনঃ আমি সেখান থেকে উঠে আয়েশা রাঃ নিকট গেলাম এবং তার সাথে সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করলাম। অনুমতি মিলল এবং আমি তাকে প্রশ্ন করলামঃ উম্মুল মোমেনীন,আমি আপনাকে এমন একটি বিষয়ে প্রশ্ন করতে চাই যা বলতে আমারই লজ্জা লাগছে। তিনি বললেন, যে কথা তুমি তোমার জন্মদাত্রী মাকে জিজ্ঞেস করতে লজ্জা পেতে না, আমাকেও তুমি তা জিজ্ঞেস করতে পার। আমি তোমার মায়ের মতোই। এ কথার পর আমি তাকে বললাম– একজন পুরুষের উপর গোসল ফরজ হয় কখন?উত্তরে তিনি বললেন– তুমি ঠিক জায়গায়ই এসেছ। রসুলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন– কোন ব্যক্তি যদি (স্ত্রীলোকের) চারটি প্রত্যঙ্গের উপর সওয়ার হয় এবং খৎনা করা অঙ্গটি পরস্পর স্পর্শ করে, তখনই গোসল করা ফরজ হয়ে দাড়ায়। সহি মুসলিম, বুক নং–৩, হাদিস নং–০৬৮৪
উরওয়া বিন জুবায়ের বলেছেন-“ আমি কখনও কাউকে পাই নাই যিনি আল কোরআন, হালাল এবং হারামের আদেশ নিষেধ, ইলমুল আনসাব বা নসব–শাস্ত্র এবং আরবি কবিতায় আয়েশা রাঃ এর চেয়ে বেশি ওয়াকিবহাল ছিলেন। সেই কারণে অনেক বয়োজৈষ্ঠ সাহাবিয়ে কেরামগণ জটিল কোন বিষয় নিরসনে আয়েশা নিরসনে সাহায্য গ্রহণ করতেন। দেখুন- ইবনে কাইম ও ইবনে সা’দ কর্তৃক জালা-উল- আফহাম ভল্যুম ২ এর ২৬ পৃষ্ঠা।
আবু মুসা আল আশারী রাঃ বলেনঃ- আয়েশা রাঃ নিকট নিয়ে যাওয়া কোন সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের কখনো কোন অসুবিধা হয় নাই। দেখুনঃ- সীরাত-ই-আয়েশা, তিরমিজি পৃঃ ১৬৩
একজন শিক্ষক হিসাবে ছাত্রদেরকে অনুপ্রাণিত করার সুস্পষ্ট ভাষণ রীতি আয়েশা রাঃ আয়ত্তে ছিল। সমকালীন মানুষের মধ্যে বাগ্মিতার বাগ্মিতায় তিনি ছিলেন সেরা একজন। এই বিষয়ে আল আনাফ রাঃ এর বর্ণনা পাওয়া যায়, তিনি জানান যে, তিনি আবুবরক রাঃ থেকে উমর রাঃ, উসমান রাঃ, আলী রাঃ সহ সমকালীন খলিফার দেওয়া ভাষণ শুনেছেন কিন্তু আয়েশা রাঃ মুখ থেকে যে আকর্ষণীয় ভাবে অনুপ্রেরণা মূলক ভাষণ শোনা যেতে সেই ভাবে অন্য কারো মুখ থেকে বের হতে তিনি শুনেন নাই।
আবু মুসা আল আশারীর বর্ণনায় জানা যায় যে, নবী সাঃ বলেন- অন্যান্য মহিলার সাথে আয়েশা রাঃ এর শ্রেষ্ঠত্বের তুলনা ত্বারিদের সাথে অন্যান্য অন্যান্য খাদ্যের শ্রেষ্ঠত্বের তুলনার মত। (ত্বারিদ হচ্ছে গোস্ত আর রুটি তৈরি এক প্রকার অতুলনীয় খাদ্য)। দেখুন বুখারী ৪-৬৪৩।
মুসা ইবনে তালহা রাঃ বলেন- আমি দেখিনাই কোন একজনকে আয়েশা রাঃএর চেয়ে ভাল ভাষণ দিতে। দেখুনঃ হাকিমের মুস্তাদ্রাক ভল্যুম ৪ পৃঃ ১১
দূর দূরান্তের নারী পুরুষগণ আয়েশা রাঃ এর থেকে জ্ঞান লাভ করেছিলেন। উনার দারুণ আগ্রহ সহকারে আধ্যায়নে আল কোরআন বোধগম্য হয়েছিল। তিনি বেশ কিছু আয়াত নাজিলের চাক্ষুষ সাক্ষী ছিলেন। কয়েক বার উনার বিছানায় রাসুল সাঃ কাজে ওহী নাজিল হয়েছিল। সেই কারণে সেই আয়াত নাজিলের কারণ সম্পর্কে উনার সুস্পষ্ট ধারণা ছিল যার কারণে এই আয়াতের ব্যাখ্যা করা তাঁর জন্য সহজ ছিল।
মুহাম্মদ সাঃ আয়েশা রাঃ কোলে মাথা রেখেই ইন্তেকাল করেছিলেন। এবং উনার ঘরেই রাসুল সাঃকে দাফন করা হয়েছিল।
আয়েশা রাঃ এর জীবন ইতিহাস প্রমাণ করে দিচ্ছে যে, নারীরা চেষ্টা করলে পুরুষদের চেয়েও বেশী জ্ঞান অর্জন করার ক্ষমতা রাখেন এবং যে কোন এক বা একাধিক বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন এবং বিশারদদেরও শিক্ষক হতে পারেন। তাঁর জীবন আরও প্রমাণ করে যে, একজন নারীও ক্ষমতা আছে অন্যান্য নারী ও পুরুষদের উপর প্রভাব বিস্তার করে তাদের নেতৃত্ব দান করতে অনুপ্রাণিত করতে।
আয়েশা রাঃ আজো সমান ভাবে অনুপ্রেরণা এবং আদর্শ ভূমিকা রাখতে পারেন আমাদের তরুণদের মাঝে যারা একটি আদর্শ চরিত্র পাওয়ার জন্য তারা কায়মনোবাক্যে খুঁজে চলছেন তাদের প্রিয় তারকা, চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী কিংবা ক্রীড়া তারকাদের মধ্যে।
আয়েশা রাঃ যে ভাবে এখনও মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ের মধ্যে চির জাগরূক আছেন এবং অব্যাহত ভাবে চির জাগরূক থাকবেন । আমরা মহান আল্লাহর দরবারে আরজ জানাচ্ছি এই মহান মহীয়সী নারীকে বেহেস্তে দরজা বুলন্দ করে দিন। আমিন!
উপসংহারঃ
উপরে বর্ণিত আয়েশা রাঃ কার্যক্রম এবং গুণাবলি বিচার বিশ্লেষণ করার পর প্রমাণ হয় যে, রাসুল সাঃ পরবর্তী সময়ে ইসলামের সেবার জন্য মুহাম্মদ সাঃ প্রত্যক্ষ পরিচর্যায় মাধ্যমে আয়েশা রাঃকে ছাঁচে ঢেলে সক্ষম করে তোলাই ছিল কিশোরী আয়েশা রাঃ বিয়ে করার প্রধান কারণ। কোন অবস্থাতে বিপথগামী ওরিয়েন্টালিস্ট বা বর্ণবাদী মুশরিক, বা ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক তথা এন্টি মুসলিমগণে অপপ্রচার তাদের বিকারগ্রস্ত আনা কারণ নয়।.
অতএব আমি দুনিয়ার আস্তিক নাস্তিক, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষ সকল অকপট মানুষদেরকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আমরা – আপনারা আসুন মনের বন্ধ দরজা জানালা খুলে কোরআন এবং সুন্নাহর নির্ভরযোগ্য প্রমাণিত উৎসের আলোকে মুহাম্মদ সাঃ জীবনী পড়ুন। নিজেদের বিবেক দ্বারা নিজেরাই বিচার করুন কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা!
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মালিক আপনার আমার সবার সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রেরিত সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত পথ নির্দেশনা ইসলামকে মানব সমাজ সত্য বলে স্বীকার করে নেওয়ার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে দুনিয়াতে চিরস্থায়ী শান্তি যেমন আসবে তেমন করে মৃত্যু পরবর্তী জীবনেও দোযখের আগুন থেকে পাবেন চির পরিত্রাণ।
আমি তাঁকে (মোহাম্মদ সাঃ) বিশ্লেষণ করে দেখেছি – আশ্চর্য এক ব্যক্তি এবং আমার মতে তিনি অ্যান্টি ক্রাইস্ট তো নন-ই, বরং তাঁকে অবশ্যই মানবতার রক্ষাকারী হিসাবে বর্ণনা করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি যে তাঁর মতো মানুষ যদি আধুনিক পৃথিবীর একজন সার্বভৌম ক্ষমতাপ্রাপ্ত শাসকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, তাহলে তিনি এর সমস্যাগুলির সমাধান এমন ভাবে করতে সক্ষম হবেন যে এতে আবার বহু প্রয়োজনীয় সুখ ও শান্তি ফিরে আসবে।
— জর্জ বার্নার্ড শ’, দ্য জেনুইন ইসলাম ভল্যুম.১,নং ৮১৯৩৬।
আজ যদিও মুহাম্মদ সাঃ স্বশরীরে আমাদের মধ্যে নাই তথাপি উনার মহত্তম জীবন আদর্শ পৃথিবীর সকল মানুষের অনুসরণের জন্য উত্তম রূপে সংরক্ষিত করা আছে।
.
.
.
.
রাসুল সাঃ ও আয়িশার বিয়ে ও বাল্য বিবাহ প্রসঙ্গ
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
বাল্য বিবাহ। মোটামুটি বিগত শতাব্দী বাদে মানব ইতিহাসের একটি স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য সামাজিক আচার। বাল্য বিবাহ পৃথিবীর সকল জাতির ইতিহাসে হয়ে এসেছে এবং ইসলামের ইতিহাসেও এটা হয়েছে। আল্লাহ কুরআনে এর স্বপক্ষে আয়াত নাজিল করেছেন। তবে বাল্য বিবাহ ব্যাপারে পৃথিবীর সকল ধর্মের মানুষ এখন যেন দায়ভার ইসলামের উপর চাপিয়ে দেবার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আর এই অসুস্থ প্রচারণার শিকার হয়ে আজ এমনকি মুসলিমরাও এর বিরুদ্ধে বলতে শুরু করেছে অথবা নানাভাবে একে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছে। মুসলিমদের এ কথা জেনে রাখা উচিৎ যে, আল্লাহ হলেন সৃষ্টিকর্তা এবং মানব জাতির জন্য বিধানদাতা। তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং মানব জাতির ভালো-মন্দ, মানবদেহের খুঁটি-নাটি এবং মানব সমাজের জন্য কোন আইন প্রযোজ্য তা তাঁর চেয়ে কেউ বেশী জানেনা। মানব সৃষ্টির আগে থেকেই তিনি যেমন সব কিছু জানেন, তেমনি মানব সৃষ্টির শেষ বা কিয়ামাত পর্যন্ত সব কিছুই একমাত্র তাঁর জ্ঞানের আওতাধীন। আধুনিক বিজ্ঞান এবং মেডিক্যাল সাইন্স এবং আজকে থেকে হাজার বছর পরের বিজ্ঞান ও মেডিক্যাল সাইন্স একমাত্র আল্লাহই জানেন। সুতরাং আল্লাহ যেটা হালাল করেছেন, সেটা তাঁর অসীম জ্ঞান থেকেই হালাল করেছেন এবং আল্লাহ যেটা হারাম করেছেন সেটা তাঁর অসীম জ্ঞান থেকেই হারাম করেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যেদিন থেকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছানো শুরু করেছেন সেদিন থেকেই সকলের কাছেই বিশ্বস্ত এ মানুষটিকে সবাই অত্যাচারে জর্জরিত করতে শুরু করেছিলো। তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও বন্ধুদের মধ্য থেকে অনেকেও তাঁর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছিলো এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ অশ্লীল কবিতা লিখে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাতে লাগলো। যারা তাঁর বিরুদ্ধে অশ্লীল কবিতার প্রচারক ছিলো তারা নিজেরাও জানত এ হলো মিথ্যা এবং তিনি সত্যবাদী বৈ তো নন। কিন্তু নিজেদের ক্ষমতার মোহ ও ইলাহ হিসাবে আল্লাহকে মেনে নিয়ে তাদের ইচ্ছাকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করতে তারা চায়নি। আর এভাবেই শুরু হয়েছে ইতিহাসে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর বিরুদ্ধে অবিশ্বাসীদের মিথ্যাচার ও অশ্লীল অপবাদের চর্চা। তবে আল্লাহ যেভাবে কুরআনে তাঁর দীনকে অন্য দীনের উপর বিজয়ী করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং যেভাবে রাসুল সাঃ এর নামকে উচ্চতম করার কথে বলেছে কিয়ামাত পর্যন্ত তা বলবদ থাকবে, যদিও অবিশ্বাসীদের কাছে তা অপছন্দনীয় হোক বা তাদের অপপ্রচার কায়েম থাকুক।
রাসুলুল্লাহ সাঃ যখন আয়িশা রাঃ কে বিয়ে করেন তখন তাঁর বয়স ছিলো ৬ বছর। তিনি তাঁকে যখন ঘরে তুলে নেন তখন তাঁর বয়স ছিলো ৯ বছর। একটি কথা জেনে রাখা ভালো যে, রাসুলুল্লাহ সাঃ এর আগেই মুত’ঈম বিন আদী নামের একজন বিধর্মী কুরাইশ তার ছেলে জুবাইর বিন মুত’ঈমের সাথে আয়িশার বিয়ের জন্য আবু বাকরের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলো। আবু বাকরও এ প্রস্তাবে সম্মত ছিলেন (তখনও মুসলিমদের সাথে অমুসলিমদের বিয়ে বন্ধ হবার বিধান আসেনি)। এর মধ্যে খাওলা রাঃ স্বঃপ্রনদিত হয়ে রাসুল সাঃ এর পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব আনেন। আবু বাকর মুত’ঈমের বাড়ী গিয়ে বিয়ের ব্যাপারে জানতে গেলে এবার তার স্ত্রী রাজী নয় বলে জানিয়ে দেয়। তখন তিনি খাওলা রাঃ এর কাছে রাসুলের প্রস্তাবে রাজীর কথা জানান। আজ আমাদের মনে প্রশ্ন জেগে উঠে, নয় বছরের একটি মেয়ে স্বামীর ঘর করবে কিভাবে? তার তো তখন খেলার বয়স। হ্যাঁ, সত্যিই তাই আর রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ঘরে আয়িশা তাই করেছিলেন। বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ সমূহে এসেছে, আয়িশা রাঃ তাঁর ঘরে সমবয়সী মেয়েদের সাথে হাতে তৈরী পুতুল দিয়ে খেলতেন। মদীনায় তলোয়ার চালনা খেলা হলে আয়িশা তা গিয়ে দেখতেন এবং তখন রাসুল সাঃ তাকে সঙ্গ দিয়ে যেতেন যতক্ষন তার দেখা শেষ না হতো। কখনও তিনি আয়িশার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায়ও নামতেন। আয়িশা রাঃ বর্ণনা করেছেন, প্রথম প্রথম আমি তাঁকে হারিয়ে দিতাম কারণ আমি তখন ছিলাম হ্যাংলা-পাতলা গড়নের। পরবর্তিতে আমার শরীরের অজন কিছুটা বেড়ে গেলে তিনি আমাকে হারিয়ে দিতেন আর বলতেন, “এ হলো আগেরগুলোর প্রতিশোধ”। আর এভাবেই শৈশবের আয়িশা নবীর আলোর ছায়ায় বিকশিত হচ্ছিলেন। আয়িশা ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ও প্রখর মেধা সম্পন্ন। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর অভিভাবকত্বে এ মেধার পূর্ণ বিকাশ ঘটেছিলো। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ঘরে অক্ষরজ্ঞান থেকে শুরু করে মেডিক্যাল সাইন্স, সাহিত্য, বংশবিদ্যা, হাদীস শাস্ত্র ইত্যাদি সহ জ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি পারদর্শীতা অর্জন করেন। রাসুল সাঃ এর জীবনের প্রতিটি দিকের সূক্ষ্মতম বর্ণনা আমরা প্রধানতঃ আয়িশার কাছ থেকেই পেয়েছি। শুধু তাই নয়, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। আজ যেভাবে বলা হয় তাতে মনে হয় যেন বাল্য বয়সে আয়িশার বিয়ে হওয়াতে তাঁর জীবনটা নষ্ট হয়েছে, তবে সত্যিকার অবস্থা হলো, এ বিয়েই তাঁকে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম নারীদের একজনে পরিণত করেছে, বিয়ে না হলে যা হওয়া অসম্ভব ছিলো।
একটা ব্যাপার আমাদের মনে রাখাতে হবে যে, রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সকল স্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র আয়িশাই ছিলেন অল্পবয়স্ক, বাকী সকলেই ছিলেন এখনকার প্রচিলত অর্থে প্রাপ্ত বয়স্ক। বাল্য বিবাহকে আল্লাহ হালাল করলেও তা বাধ্যতামূলক নয় বরং মুসলিম সমাজের অধিকাংশ বিয়েই বাল্য বিবাহ নয়, তবে আয়িশাকে বিয়ে করে বাল্য বিবাহের যে পথ আল্লাহ রাসুল সাঃ এর মাধ্যমে জায়িজ করেছেন তা ইসলামের সমাজ জীবনে অনন্য ভূমিকা রেখাছিলো।
দুঃখজনক হলেও সত্য, বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে আজকের এই প্রচারণার বিরুদ্ধে বলার খুব কম লোকই আছে। আজ মিডিয়া, অবিশ্বাসীগন আর এ সমাজ ব্যবস্থা যেভাবে এর বিরুদ্ধে বলছে এই প্রেক্ষাপটে বাল্য বিবাহ ও আয়িশা আর রাসুলুল্লাহ সাঃ বিয়ের উপর আলোকপাত করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
প্রথমেই আসি ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রসঙ্গে।
ইসলাম যখন আল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাঃ কে দিয়ে এ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তখন থেকে শুরু করে এ ব্যবস্থা এক অনন্য সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন মানব ইতিহাসে স্থাপন করলো। ধর্ম-জাত-স্থান-পাত্র উপেক্ষা করে ন্যায়বিচারের অনন্য নজির ইসলাম দেখাতে সক্ষম হয়েছিলো। নিজেদের উন্নত চরিত্র আর নিজের জীবনের চেয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবেসে পরোপকারিতা আর আমানতদারীর এক অনন্য নজীর মুসলিমরা স্থাপন করেছিলেন। সে ধারাবাহিকতায় আমরা দেখতে পাই, সাহাবীগন যখন পারস্য ও রোম বিজয় করলেন, তখন সেখানকার কিশোর ও তরুন সমাজ-যাদের বাবা-চাচাদের বিরুদ্ধে সাহাবাগণ যুদ্ধ করেছিলেন, সে সাহাবাদের চরিত্র ও জীবন প্রণালী দেখে দেখে তারাই এসে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছিলো। মুহাম্মাদ বিন কাশিমের ভারত অভিযানে হিন্দু রাজা দাহিরের প্রধান সেনাপতি আহত হলে মুহাম্মাদ বিন কাশিম নিজের শিবিরে তাঁকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছিলেন, প্রথম ক্রুসেডে হাজারো মুসলিমকে গনহত্যা করার পরও সালাহুদ্দীন আইয়ুবী ২য় ক্রুসেডে জয়ী হয়ে সকল অমুসলিমদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, তাঁর সময়ে একটি অমুসলিম মেয়ের জীবন বাঁচাতে গিয়ে এক প্লাটুন মুসলিম সৈন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলো, ইসলামের অনন্য ন্যায়বিচার ও আমানতদারী দেখে খৃস্টান রাজ্য থেকে মাইগ্রেট করে খৃস্টানরা মুসলিম রাজ্যে আসত নির্বিঘ্নে নিজেদের ধর্ম পালন করতে। আর মুসলিম সমাজে সকল সৌন্দর্যের অন্যতম ছিলো তাদের অনন্য পারিবারিক বন্ধন। অমুসলিম সমাজে যখন দেখা যায় স্বামী ঘরে ফিরে নিশ্চিত নয় যে তার স্ত্রী একা সময়টা কিভাবে কাটিয়েছে আর স্ত্রীও নিশ্চিত নয় যে তার স্বামী বাইরে গিয়ে নিজের চরিত্র হেফাজত করেছে কিনা, তখন মুসলিম সমাজে দেখা গেছে স্বামী মাস বা বছরের জন্য বাইরে চলে গেলেও স্ত্রী আল্লাহর কাছে কাঁদে, “ও আমার রব, তাকে তুমি ভালো রেখ”, আর স্বামীটিও দূরদেশে বসে বসে আল্লাহকে ডেকে বলে “ও প্রতিপালক, তুমি আমার পরিবারের উপর রহম করো”। যখন অবিশ্বাসী সমাজে বার্ধক্য অভিশাপ হয়ে এসেছে, তখন মুসলিম সমাজে সন্তানেরা নিজে না খেয়ে হলেও বাবা-মা’র যত্নকে প্রধান কর্তব্য হিসাবে পালন করেছে।
যতদিন পর্যন্ত পৃথিবীতে ইসলামী অনুশাসন ছিলো, ততদিন পর্যন্ত মানুষ দেখেছে এ সমাজে ইভ টিজিং, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, অবাধ যৌনাচার ইত্যাদি সমাজ বিধ্বংসী কোন পাপাচারের স্থান নেই। ইসলামী এই সমাজ বিনির্মাণে অল্প বয়সে বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর ফলে বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্ক মুসলিম সমাজে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। উঠতি বয়সে যৌন জীবনের যে আকর্ষন, তাড়াতাড়ি বিয়ের ফলে এটা মুসলিম সমাজে অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত থেকেছে, ফলে মুসলিম সমাজে অবা্ধ যৌনাচার কখনও স্থান পায়নি। ইসলামে বিবাহ বহির্ভুত যৌনাচারের বিধান পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা এবং এই শাস্তির বিরুদ্ধে বলার লোকের অভাব নেই। তবে এটা তাদের জানা নেই যে, ইসলামের সমস্ত ইতিহাসে রজমের সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত, এমনকি উমার রাঃ এর ১০ বছর শাসনামলে মাত্র একটি রজমের ঘটনা ঘটছে, এর কারণ শুধু শাস্তির ভয়ই নয়, তাড়াতাড়ি বিয়েও একটি অন্যতম কারণ। তাড়াতাড়ি বিয়ে মুসলিম ছেলেমেয়েদের অল্প বয়সেই গুরুদায়িত্ব বহন করতে শিখিয়েছে, স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন এতে সুদৃঢ় হয়েছে এবং নিজেদের সম্পর্ক বন্ধুর মতো করে গড়ে তোলা গেছে। বাচ্চা তাড়াতাড়ি হবার ফলে বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবা সন্তানদের যত্নের ছায়াতলে থাকতে পেরেছে।
যুগে যুগে মুসলিম সমাজের এই অনন্য বন্ধন অবিশ্বাসীদের হতাশাকে বাড়িয়ে তুলেছে। আল্লাহর ঘোষণাকে সত্য প্রমাণ করে তারা ইসলামের আলোকে নিভিয়ে দেবার সব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর তাদের এই প্রচেষ্টায় মুসলিম পরিবারের বন্ধন ধ্বংস করা হলো অন্যতম এজেন্ডা। আর এরই অংশ হিসাবে এরা নারী স্বাধীনতার ধোঁয়া তুলে নারীদের হিজাব খুলিয়েছে, বন্ধুত্বের নামে ফ্রি মিক্সিংকে জায়েজ বানিয়ে দিয়ে উন্মত্ত অশ্লীলতায় সমাজকে ধ্বংস করে দিয়েছে আর নষ্ট করে দিয়েছে নারী পুরুষের স্বাভাবিক বিশ্বাস। আর ঘর থেকে মা-খালা-নানী-দাদীদের চিরন্তন ভালোবাসা ও আদরের বন্ধন বিদায় করে দিতে সক্ষম হয়েছে। প্রপাগান্ডার প্রথম থেকে তারা বাল্য বিবাহকে টার্গেট করেছে। আর তাদের এই টার্গেটে প্রধান হাতিয়ার হিসাবে তারা ব্যবহার করতে শুরু করেছে মেডিক্যাল সাইন্স।
এবার মেডিক্যাল সাইন্সের প্রেক্ষাপটে বাল্য বিবাহ অর এর বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডার কিছু অজানা দিক তুলে ধরার চেষ্টা করব।
প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন মনে করি যে, মেডিক্যাল সাইন্সের বিরুদ্ধে আমি নই এবং ইসলামে চিকিৎসা নেয়ার ব্যাপারে কোন বাধা-নিষেধ নেই । তবে বর্তমান যুগে মেডিক্যাল সাইন্স এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, মানুষ অনেক ক্ষেত্রে একে আল্লাহর স্থলে ইলাহ হিসাবে গ্রহণ করতে শুরু করেছে। আর মানুষের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে স্বার্থবাদী গোষ্ঠী মেডিক্যাল সাইন্সকে ব্যবহার করে গোপন সব ফায়দা লুটে নিচ্ছে যা চিরকালই সাধারণ মানুষের ধারণার অতীত হয়ে থাকবে। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি উদাহরণ দিতে চাই।
নিকট অতীতে যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরাক আক্রমন করে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করা শুরু করেছিলোএবং তাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার খবরেই বিশ্ব বিবেকে নাড়া পড়ে গিয়েছিলো, এহেন অবস্থায় মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাবার জন্য তারা আশ্রয় নিলো তাদের বিশ্বস্ত এবং কার্যকরতম অস্ত্র মেডিক্যাল সাইন্সের। অদের সমস্ত মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে তারা ‘সার্স’ (SARS-Severe Acute Respiratory Syndrome) নামের এক জীবনঘাতী মহামারী রোগের বিস্তারের প্রচার শুরু করলো এবং এ রোগের বিস্তারে মানুষের করণীয় হিসাবে মুখে মাস্ক পরার কথা প্রচার করল। তাদের এ প্রচার মন্ত্রের মত কাজ করলো। ইরাক যুদ্ধ থেকে সরে গিয়ে মানুষের দৃষ্টি সার্সে নিবদ্ধ হলো আর লক্ষ লক্ষ মানুষ এর ভয়ে মাস্ক পরে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে লাগলো। তবে অনেক চিকিৎসক ও গবেষকের মতে, সত্যিকার অর্থে সার্স নামে কোন রোগ ছিলো না বরং সামান্য ফ্লু কেই সে সময় অতিরঞ্জিত করে সার্স নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছিলো। মজার ব্যাপার হলো, ইরাক যুদ্ধের ওই সময়টা বাদ দিয়ে বিশ্বে আর কখনও না সার্সের প্রাদুর্ভাব আগে ঘটেছে, আর না তার পরে কখনও ঘটেছে- অথচ এ রোগের নির্মুলের জন্য কোন টীকা কোথাও দেয়া হয়নি, তাহলে এ রোগ কোথায় গেলো?
একইভাবে কিছুদিন আগে অর্থনৈতিক মন্দার সময় ‘সোয়াইন ফ্লু’ নামের এক জীবনঘাতী মহামারীর কথা প্রচার করা হয় এবং অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে প্রায় সাথে সাথেই এই কার্যকরী ঔষধ ও ভ্যাক্সিনের কথাও প্রচার করা হয়। সারা বিশ্বে কোটি কোটি ডলারের ঔষধ বিক্রি করা হয়, কিন্তু সে রোগটি এবং এর ঔষধের ভেতর আদৌ কি ছিলো তা আজও অভিজ্ঞদের কাছে রহস্যাবৃত রয়ে গেছে।
এইডস নিয়ে সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে আর এ রোগে ধুঁকছে আরো কোটি কোটি মানুষ। তবে মেডিক্যাল সাইন্সে এইডস এর ভাইরাস সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে তা এসেছে আফ্রিকার বানর থেকে। তবে একদল বিজ্ঞানী গবেষণার ভেতর উঠে এসেছে যে, এইডস এর ভাইরাস এইআইভি বানর থেকে আসা অসম্ভব এবং তারা দেখিয়েছেন এইডস এর ভাইরাস ল্যাবরটরিতে মডিফিকেশন করে তৈরী করা হয়েছে আফ্রিকার ব্ল্যাক জনসংখ্যা কমানোর জন্য এবং টীকাদান বা ভ্যাক্সিনেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে এর জীবানুকে গোপনে মানুষের দেহে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। আল্লাহু আকবার, এ যদি সত্য হয়ে থাকে, তা কতইনা ভয়বহ ব্যাপার।
আর্সেনিক নিয়ে এদেশে তাদের প্রপাগান্ডা হলো মানুষকে ভয় পাইয়ে টাকা কামাবার অন্যতম হাতিয়ার। এদেশের হাজার হাজার টিউবয়েলে তারা লাল নিশান লাগানো শিখিয়ে দিয়ে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এর ভেতর এমন সব কলও রয়েছে যার পানি কয়েক দশক ধরে পান করা হচ্ছে। অথচ আর্সেনিক রোগে মারা যাওয়া রোগী হাতে গুনতেও কষ্ট হবেনা। যেখানে সরকারী হাসপাতালগুলোতে হাজারো রকম রোগীর যায়গা দেয়া যাচ্ছেনা, যেখানে রোগীরা ডাক্তারের কাছে গিয়েও রোগীর চাপে সময় নিয়ে দেখাতে পারছেনা, সেখানে আর্সেনিক পয়জনিং হলো এমন একটি রোগ যার জন্য সরকারী মেডিক্যাল টিম সারা বছর মানুষের বাড়ী বাড়ী গিয়ে রোগী খুঁজে বেড়ায় আর একটি রোগী সনাক্ত করে দিতে পারলে ডাক্তারকে সরকারীভাবে সম্মানী দেয়া হয়।
এবার আসা যাক বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে বলা সকল মেডিক্যাল সমস্যাগুলোর ব্যাপারে। এর সমস্যাগুলো প্রধানতঃ বলা হয়ে থাকে অল্প বয়সে গর্ভধারণ বিষয়ক। এর প্রধান যে সমস্যাগুলো সম্পর্কে বলা হয় তা হলো- রক্ত স্বল্পতা, অধিক সময় ধরে ডেলিভারী, ইঊটেরাস বা গর্ভাশয় ফেটে যাওয়া, গর্ভে বাচ্চার ডিস্ট্রেস ইত্যাদি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, এই সকল গর্ভজনিত কমপ্লিকেশন বা সমস্যা যে শুধু অল্পবয়সী মায়ের ক্ষেত্রেই হবে তা নয়, বরং এগুলো যে কোন বয়সের মায়েদেরই হতে পারে এবং এমন কোন কমপ্লিকেশন নেই যা কেবল অল্পবয়সী মায়েদেরই হয়। মেডিক্যাল সাইন্সের অবসট্রেটিকস বা ধাত্রীবিদ্যায় প্রায় সবকটি রোগের প্রথম ভুক্তভোগীর নাম হলো ‘এলডারলি প্রাইমি’ বা ‘বেশী বয়সে প্রথম গর্ভধারণ’। এমনকি আমাদের দেশে (যে দেশ সম্বন্ধে অমুসলিমরা বলে থাকে যে বাল্য বিবাহের হার অনেক বেশী) হাসপাতালগুলোতেও গর্ভজনিত রোগের প্রধান ভুক্তভোগীরা হলো এলডারলি প্রাইমি বা বেশী বয়সে প্রথম বাচ্চা নেয়া মা। তবে, কম বা বেশী বয়সী মা যাই হোকনা কেন, সকল রোগই এখন চিকিৎসা যোগ্য।
আরেকটি ব্যাপার হলো এই যে, সরাসরি কোথাও না এলেও মেডিক্যাল সাইন্সেই অল্পবয়সে গর্ভধারণ নারীর অনেক জটিল রোগের কার্যকর প্রতিরোধোক বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন- জরায়ুর টিউমার ও ক্যান্সার, ব্রেস্ট টিউমার, হরমোনাল অনেক সমস্যা, ঋতুজনিত সমস্যা ইত্যাদি।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, আজ যারা বাল্যবিবাহের ধোঁয়া তুলে রাসুলুল্লাহ সাঃ এবং ইসলামের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডায় নেমেছে, তারাই সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছে শিশু পর্নোগ্রাফির মতো সাঙ্ঘাতিক অনৈতিকতা। এদের মুখের মিষ্টি কথা দিয়ে এরা নিজেদের শিশুদের মহান রক্ষক হিসাবে তুলে ধরে, অথচ এরাই আজ পতিতালয়ে গিয়ে শিশু যৌনকর্মী খোঁজে। নিজ ঘরে গিয়ে এরা দেখে তার ছোট্ট শিশু সন্তানটি এখন আর ভার্জিন নয় বরং অনেক বন্ধু আজ জুটে গেছে তার শুধু যৌনতার খাতিরে। এদের সমাজে আজ আর পারিবারিক বন্ধন বলে কিছু নেই। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে আর বিশ্বাস নেই, সন্তানেরা বাবা-মাকে মানেনা আর বাবা-মাও সমাজ ও তাদের নিজেদের তৈরী করা আইনের ফাঁদে পড়ে সন্তানদের কিছু বলতে ভয় পায়। বৃদ্ধ দাদা-দাদীরা বৃদ্ধাশ্রমের বন্দীশালায় ধুঁকে ধুঁকে মরে। বিপরীতে ইসলাম দেখিয়েছে এমন এক পরিবার ব্যবস্থা, যেখানে পরিবার হলো সবার সুখের আশ্রয়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত্তি হলো পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও বন্ধুভাব, বাবা-মা একই সাথে সন্তানের বন্ধু ও শাসক অভিভাবক, বৃদ্ধ দাদা-দাদী আর নানা-নানীরা সমাজের বোঝা নয় বরং সবার সবচেয়ে শ্রদ্ধার পাত্র আর পুরো পরিবারের ছায়ার মতো। আজ আমাদের সতর্ক হতে হবে ওদের এমন সব প্রপাগান্ডা থেকে যার ফলে আল্লাহর করুণায় প্রাপ্ত আমাদের এই অনন্য পারিবারিক বন্ধন ভেঙে পড়ে।
আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন এবং সকল অপপ্রচার থেকে বেঁচে থেকে ইসলামের উপর অটল থাকার সৌভাগ্য দান করুন। আমীন
রাসূল সাঃ ও আয়েশা রাঃ কে নিয়ে যতো মিথ্যাচার
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
মক্কার লোকগুলো প্রচণ্ড অতিষ্ঠ। আব্দুল্লাহর ছেলে মুহাম্মদ ﷺ কি এক নতুন ধর্ম নিয়ে এসেছে, বলছে সব দেব-দেবী ছেড়ে এক আল্লাহর ইবাদত করতে। শত অত্যাচার করেও তাঁকে একটুও দমানো গেলো না। কুরাইশরা তখন একটা মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিলো। তারা ভেবে দেখল, সাধারণত সম্পদ,নারী আর রাজত্ব-এই তিনটি বিষয়ের জন্যই মানুষ এতো হাঙ্গামা করে পৃথিবীতে। তাই কুরাইশদের প্রতিনিধি হয়ে উতবাহ ইবনে রাবীআহ , মুহাম্মদ ﷺ কে বললঃ
“যদি তুমি তোমার দারিদ্র্যের কারণে এমনটা করছো, আমাদের বলো তাহলে।আমরা টাকা তুলে তোমাকে সমগ্র কুরাইশদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী বানিয়ে দিবো। যদি তুমি রাজত্ব চাও, আমরা তোমাকে আমাদের রাজা বানিয়ে দিব। যদি তুমি নারী চাও, কুরাইশদের মধ্যে যাকে খুশি পছন্দ করো। আমরা দশজন নারীকে তোমার হাতে তুলে দিবো।”
বর্তমান ইসলাম বিদ্বেষী প্রচারণার একটা অন্যতম মুখ্য হাতিয়ার রাসূল ﷺ কে নারীলোভী হিসেবে উপস্থাপন করা। কারণ, তাঁর ঘোর বিরুদ্ধচারীরাও জানে মুহম্মদ ﷺ এর সম্পদের প্রতি কোনো আসক্তি ছিল না। মৃত্যুর সময় তিনি একটা দিরহাম ও রেখে যাননি[১]। রাসূল ﷺ যদি সত্যিই নারীলোভী হতেন তবে কুরাইশের সেরা সেরা দশ নারীকে বিয়ে করার জন্য এর চেয়ে মোক্ষম সুযোগ আর ছিলো না। কিন্তু তিনি এই সুযোগ গ্রহণ করেননি।
মক্কার মুশরিকরা তাঁকে পাগল বলেছে, বলেছে জাদুকর। কিন্তু কখনোই নারীলোভী কিংবা শিশুকামী বলেনি। কারণ, তারা তাঁকে ছোট থেকে বড় হতে দেখেছে। যখন তাদের সংস্কৃতিতে অবৈধ যৌনাচার একদম স্বাভাবিক ব্যাপার ছিলো তখনো তিনি কোন নারীর নিকট কখনো গমন করেননি। মক্কার সবচেয়ে সুদর্শন পুরষ হয়েও মাত্র ২৫ বছর বয়সে বিয়ে করেন ৪০ বছর বয়সী খাদিজা(রাঃ) কে। খাদিজা(রাঃ) এর মৃত্যু পর্যন্ত তার সাথে ঘর করেছেন একটানা ২৫ বছর। এরপর বিয়ে করেন পঞ্চাশ বছর বয়সী সওদা(রাঃ) কে। তারপর আল্লাহর নির্দেশেই বিয়ে করেন ছয় বছর বয়সী আয়েশা(রাঃ) কে। তারপরেও তার ঘোর শত্রুরা তাঁকে কখনো নারীলোভী কিংবা শিশুকামী বলেনি। আর তার শত্রুরা হয়তো ভুলেও কল্পনা করেনি যে, প্রায় চৌদ্দশ বছর পর তাদেরই মত কিছু ইসলামের শত্রুরা এটা নিয়ে এতো জল ঘোলা করবে।
সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, কিছু তথাকথিত মুসলিমরা বলার চেষ্টা করে যে, রাসূল ﷺ আয়েশা(রাঃ) কে বিয়ে করে ঠিক কাজ করেননি। এই হাদীসটি লক্ষ্য করুন-
আয়েশা (রাঃ) নিজেই বর্ণনা করে গিয়েছেন রাসূলﷺ বলেছেন-“তোমাকে বিয়ে করার আগে আমাকে ২ বার স্বপ্ন দেখান হয়েছিলো। আমি দেখেছি একজন ফেরেশতা তোমাকে এক টুকরো রেশমি কাপড়ে জড়িয়ে আমার কাছে নিয়ে আসছেন। আমি বললাম- আপনি নিকাব উন্মোচন করুন! যখন তিনি নিকাব উন্মোচন করলেন তখন আমি দেখতে পেলাম যে ঐ মহিলা তুমিই। আমি তখন বললাম –এটি যদি আল্লাহর তরফ থেকে হয়ে থাকে তাহলে তিনি তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করবেন। তারপর আবার আমাকে দেখানো হলো যে, একজন ফেরেশতা তোমাকে এক টুকরো রেশমি কাপড়ে জড়িয়ে আমার কাছে নিয়ে আসছেন। আমি বললাম- আপনি নিকাব উন্মোচন করুন! যখন তিনি নিকাব উন্মোচন করলেন তখন আমি দেখতে পেলাম যে ঐ মহিলা তুমিই। আমি তখন বললাম –এটি যদি আল্লাহর তরফ থেকে হয়ে থাকে তাহলে তিনি তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করবেন।[২]
আমরা জানি নবীদের স্বপ্ন হচ্ছে ওহীর মত। তাই আল্লাহতায়ালাই এই বিয়ে ঘটিয়েছিলেন। তাই এই বিয়ের পেছনে অবশ্যই একটা হিকমাহ ছিলো। এরপরেও কোন মুসলিম যদি এই বিয়ে নিয়ে আপত্তি তুলেন তবে অবশ্যই ঈমান হারা হবেন। রাসূল ﷺ কে নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীদের একটি প্রধান অভিযোগ হলোঃ
মুহাম্মদ ﷺ pedophile বা শিশুকামী ছিলেন?
যারা pedophilia তে ভোগেন তাদের IQ লেভেল এবং স্মৃতিশক্তি অনেক কম থাকে[৩]। যিনি পুরো কুরআন মুখস্থ বলে যেতে পারতেন তাঁকে আমরা অবশ্যই স্মৃতিশক্তির দোষে দুষ্ট বলতে পারি না। আর মেধার প্রয়োগ এবং সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তিনি যে জিনিয়াস ছিলেন তা পাশ্চাত্যের অনেক লেখকই স্বীকার করেছেন[৪][৫]। Pedophilia তে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রধান যেসব উপসর্গে ভোগেন তার কোনোটাই তাঁর মধ্যে প্রকট ছিল না। আসুন দেখি উইকিপিডিয়াতে pedophilia এর সংজ্ঞা হিসেবে কি বলা হয়েছেঃ
“Pedophilia or paedophilia is a psychiatric disorder in which an adult or older adolescent experiences a primary or exclusive sexual attraction to prepubescent children. the manual defines it as a paraphilia involving intense and recurrent sexual urges towards and fantasies about prepubescent children.” [৬]
এখানে pubescent বা বয়ঃপ্রাপ্তির বিষয়টা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনায় একেক অঞ্চলের মেয়েরা একেকসময় বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। যেমনঃ মরুভূমি অঞ্চলের মেয়েরা শীতপ্রধান অঞ্চলের মেয়েদের চেয়ে দ্রুত বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। মরুভূমির মেয়েরা যেখানে ১০ বছর বয়সে বয়ঃপ্রাপ্তি লাভ করে সেখানে অনেক শীতপ্রধান অঞ্চলের মেয়েরা ১৩-১৫ বছর হয়ে গেলেও বয়ঃপ্রাপ্ত হয় না। ফ্রেঞ্চ ফিলোসফার Montesqueu তার ‘Spirit of Laws’ বইটিতে[৭] উল্লেখ করেছেন, উষ্ণ অঞ্চলে মেয়েরা ৮-৯-১০ বছর বয়সেই বিয়ের উপযুক্ত হয়ে যায়। বিশ বছর বয়সে তাদেরকে বিয়ের জন্য বৃদ্ধ ভাবা হয়। ‘Spirit of Laws’ বইটি আমেরিকার সংবিধান তৈরীতে ব্যবহৃত হয়েছে।
আয়েশা(রাঃ) নিজেই মেয়েদের জন্য বিয়ের বয়স নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “মেয়ে যখন নয় বছরে উপনীত হয়ে যায়, তখন সে মহিলা হয়ে যায়।”[৮] তাই সে সময়কার আরব মেয়েদের জন্য নয় বছর বিয়ের জন্য উপযুক্ত ছিল তার প্রমাণ ছিলেন স্বয়ং আয়েশা(রাঃ)।
নিচের তালিকাটি [৯] ভালোভাবে লক্ষ্য করুন- তালিকাটাতে তিনটা ভিন্ন শতকে মেয়েদের বিয়ের জন্য অনুমোদিত বয়স কত ছিলো সেটা উল্লেখ করা হয়েছেঃ
ভালোভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাবো, ১৮৮০ সালের দিকে অধিকাংশ জায়গায় বিয়ের জন্য অনুমোদিত বয়স ছিলো ১০-১২ এর মধ্যে। আমরা যদি ইতিহাসে আরো পেছনে যেতে পারি তাহলে আরো কম বয়স লক্ষ্য করতে পারব। আবার যত সামনে আগাব লক্ষ্য করলে দেখা যাবে অনুমোদিত বয়সের সীমা ক্রমাগত বাড়ছে। এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হলো মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
Pedophilia এর সংজ্ঞায় আরো গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করা হয়েছে- “intense and recurrent sexual urges towards and fantasies about prepubescent children”। অর্থাৎ, একজন pedophile বয়ঃপ্রাপ্ত হয়নি এমন শিশুদের প্রতি বারবার প্রবল আকর্ষণ বোধ করে। মুহম্মদ ﷺ কি এমন কিছু প্রদর্শন করেছিলেন? তিনি কি বাছাই করে শুধু শিশুদের বিয়ে করেছিলেন? নিচের তালিকাটি লক্ষ্য করুন। এখানে আমি মুহাম্মদ ﷺ এর বিভিন্ন বিয়ের সময় তাঁর স্ত্রীদের বয়স উল্লেখ করেছিঃ
অর্থাৎ, তাঁর স্ত্রীদের যখন বিয়ে করেছিলেন তাদের মধ্যে ৯০ ভাগেরই বয়স ছিলো ১৭ কিংবা তার চেয়েও বেশী। একমাত্র আয়েশা(রাঃ) এর বয়স ছিলো দশের নিচে । যারা আয়েশা(রাঃ) এর বয়স দেখে খুশিতে-“Yes, we got it. All moslems are pedophile” বলে চিৎকার করে উঠেন তারা অবশ্য খাদিজা(রাঃ), উম্মে হাবীবাহ(রাঃ) ও সওদা(রাঃ) এর বয়স দেখলে যথাক্রমে বোবা, বধির ও অন্ধ হয়ে যান।
তারপরেও ছয় বছর বয়স স্বামী সংসারের জন্য উপযুক্ত না :
যারা ৬ বছর বয়সে[১০] আয়েশা(রাঃ) এর বিয়ে নিয়ে আপত্তি তুলেন তারা অবশ্য ইতিহাসের একটা সত্য এড়িয়ে যান। সেটা হচ্ছে রাসূল ﷺ এর পূর্বেই আয়েশা(রাঃ), জুবাইর ইবনে মুতিম এর সাথে engaged ছিলেন[১১]। পরবর্তীতে, আবু বকর(রাঃ)[১২] ইসলাম গ্রহণ করলে এ বিয়ে ভেংগে যায়। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, সে সময় এই বয়সেই বিয়ে করা আরবে একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। পরবর্তীতে আল্লাহর নির্দেশে মুহাম্মদ ﷺ তাঁকে বিয়ে করেন। ৬ বছর স্বামী সংসারের জন্য উপযুক্ত নয় বলেই তিনি ৯ বছর বয়সে স্বামীগৃহে উঠেন। Pedophile- এ আক্রান্তরা যেমন শিশুদের পাবার জন্য আকুল হয়ে উঠে, মুহাম্মদ ﷺ কখনোই এমন কিছু প্রদর্শন করেননি। তাই ৯ বছর বয়সে আয়েশা(রাঃ) উপযুক্ত হলে আয়েশা(রাঃ) এর পরিবারই তাকে স্বপ্রণোদিত স্বামীগৃহে উঠিয়ে দেন।
হিজরতের পর আবু বকর(রাঃ), রাসূল ﷺ এর নিকট আরজ করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আপনার স্ত্রীকে ঘরে আনছেন না কেন? প্রিয়নবী বললেন, “এই মুহূর্তে মোহর পরিশোধ করার মতো অর্থ আমার কাছে নেই। আবু বকর(রাঃ) অনুরোধ করলেন- যদি আমার অর্থ কবুল করতেন। তখন রাসূল ﷺ, আবু বকর(রা:) এর কাছ থেকে অর্থ ঋণ নিয়ে আয়েশা(রাঃ) এর নিকট পাঠিয়ে দিলেন।[১৩]
আজ থেকে ২০০ বছর আগে মেয়েরা ১০ বছর বয়সে বিয়ের জন্য উপযুক্ত হলে তা মেনে নিতে যদি আমাদের আপত্তি না থাকে তাহলে ১৪০০ বছর আগে একজন নারীর নয় বছর বয়সে সংসার করা নিয়ে অভিযোগ তোলা কি ডাবল- স্ট্যান্ডার্ড এর মধ্যে পড়ে না? কমনসেন্স,পরিসংখ্যান আর বিজ্ঞান এই তিনটাই সাক্ষ্য দেয় যে, স্বামীগৃহে উঠার সময় আয়েশা(রাঃ) “Pre-pubescent” স্টেজে ছিলেন না। যারা এমনটা বলেন তারা অবশ্যই মিথ্যাচার করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ১৯০৫ সালের আগ পর্যন্ত মুহাম্মদ ﷺ এর সাথে আয়েশা(রাঃ) এর বিয়ে কোন ইস্যুই ছিলো না। ১৯০৫ সালে জোনাথন ব্রাউন সর্বপ্রথম এটা নিয়ে জল ঘোলা করেন। কারণ, এর আগে এটা সবার কাছে একদম স্বাভাবিক ব্যাপার ছিলো।
যাদের এরপরেও ব্যাপারটা হজম করতে কষ্ট হয় তাদের ছোট্ট একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে বলবো। আপনার দাদী কিংবা নানী বেঁচে থাকলে তাদের জিজ্ঞেস করুন তাদের কত বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিলো, সম্ভব হলে তাদের কাছ থেকে জেনে নিন আপনার বড়-দাদী এবং বড়-নানীর বিয়ে কত বছর বয়সে হয়েছিলো। দেখবেন বয়সটা ৯-১৫ এর বেশি না। এখন পারবেন কি নিজেদের পূর্বপুরুষদের শিশুকামী বলতে? আল্লাহ-তায়ালা এভাবেই মানুষের মিথ্যাগুলোকে মানুষের দিকেই ফিরিয়ে দেন।
এবার সভ্য দেশগুলোর দিকে তাকাই। মেক্সিকোতে ছেলে মেয়ের দৈহিক সম্পর্কের জন্য এই আধুনিক সময়ে নূন্যতম বয়স মাত্র ১৩। খোদ ইউ.এস স্টেটে মেয়েদের বিয়ের বয়সের ভিন্নতা আছে। যেমনঃ New Hampshire এ বয়স ১৩, New York এ ১৪, South Carlonia তে বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫। আপনি কোন বয়সটাকে সঠিক বলবেন?
তবে এটা ঠিক যে, অপরিপক্ক বয়সে বিয়ে হলে, মেয়েরা আত্মগ্লানিতে ভোগেন এবং স্বামীর প্রতি এতোটা অনুরক্ত হন না। আয়েশা(রাঃ) এর সাথে কি এমনটা হয়েছিলো?
কেমন ছিলো আয়েশা(রাঃ) ও রাসূল ﷺ এর দাম্পত্য জীবন?
– রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অন্তরে আয়েশা (রাঃ) এর প্রতি যে মহত্ত্ব ও মর্যাদা ছিলো, তা অন্য কোন স্ত্রীর জন্য ছিলো না। তাঁর প্রতি এ ভালবাসা তিনি কারো থেকে গোপন পর্যন্ত করতে পারেননি, তিনি তাকে এমন ভালবাসতেন যে, আয়েশা (রাঃ) যেখান থেকে পানি পান করতেন, তিনিও সেখান থেকে পানি পান করতেন। আয়েশা (রাঃ) যেই হাড্ডি মুখে নিতেন, তিনিও সেই হাড্ডি মুখে নিতেন। [১৪]
তাঁর মানে এই না যে, রাসূল ﷺ স্ত্রীদের সাথে সমতা পালন করতেন না। তিনি অবশ্যই ভারসাম্য বজায় রাখতেন। তবে, হৃদয় তো আর ভারসাম্য মানে না। রাসূল ﷺ এই বলে আল্লাহর কাছে দু‘আ করতেন,
“ হে আল্লাহ! যা আমার নিয়ন্ত্রণে (অর্থাৎ স্ত্রীগণের প্রতি আচার-ব্যবহার ও লেনদেন) তাতে অবশ্যই সমতা বিধান করি; কিন্তু যা আমার নিয়ন্ত্রণে নয় (অর্থাৎ আয়েশা(রাঃ) এর প্রতি ভালোবাসা) তার জন্য আমাকে ক্ষমা করো।”[১৫]
– আমর ইবনুল আস (রাঃ) একবার জিজ্ঞাসা করেন : “হে আল্লাহর রাসূল, আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয় কে ?” তিনি বললেন : “আয়েশা”। আমর (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন : পুরুষদের থেকে ? তিনি বললেন : “তাঁর পিতা”।[১৬]
– রাসূলুল্লাহ ﷺ তার সাথে খেলা-ধুলা, হাসি-ঠাট্টা ইত্যাদিতে অংশ গ্রহণ করতেন। কোন এক সফরে রাসূল ﷺ তার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায়ও অংশ নেন।[১৭]
– আয়েশা (রাঃ) আরো বর্ণনা করেন, যার দ্বারা তার প্রতি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর স্নেহ, মমতার প্রকাশ পায়। তিনি বলেন :“আল্লাহর শপথ, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দেখেছি, তিনি আমার ঘরের দরজায় দাঁড়াতেন, হাবশিরা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলা-ধুলা করতো, আর রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে তাঁর চাদর দিয়ে ঢেকে নিতেন, যেন আমি তাদের খেলা উপভোগ করি তার কাঁধ ও কানের মধ্য দিয়ে। অতঃপর তিনি আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতেন, যতক্ষণ না আমিই প্রস্থান করতাম”।[১৮]
– তাঁর প্রতি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ভালোবাসার আরেকটি আলামত হচ্ছে, মৃত্যু শয্যায় তিনি অন্যান্য স্ত্রীদের নিকট অনুমতি নিয়ে আয়েশা(রাঃ) এর কক্ষে অবস্থান করেন। আর আয়েশা(রাঃ) এর কোলে মাথা রেখেই তিনি আপন প্রভুর সমীপে আত্মনিবেদন করেন।[১৯]
– “আয়েশা(রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ﷺ আমাকে বলেন : তুমি কখন আমার উপর সন্তুষ্ট থাকো আর কখন রাগ করো, আমি তা বুঝতে পারি। তিনি বলেন, আমি বললাম : কিভাবে আপনি তা বুঝেন ? তিনি বললেন : তুমি যখন আমার উপর সন্তুষ্ট থাকো, তখন বলোঃ এমন নয়- মুহাম্মদের রবের কসম, আর যখন আমার উপর রাগ করো, তখন বলো, এমন নয়- ইবরাহিমের রবের কসম। তিনি বলেন, আমি বললাম : অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল, তবে আমি শুধু আপনার নামটাই ত্যাগ করি।’’[২০]
– কোনো এক সফরে আয়েশা(রাঃ) এর সওয়ারি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। এটা দেখে, রাসূল ﷺ এতোটাই অস্থির হয়ে পড়েন যে, তাঁর পবিত্র জবান থেকে বের হয়ে গেলো-
“ হায় হায়! আমার স্ত্রীর কি হবে!”[২১]
– এক শ্রেণীর মানুষ রাসূল ﷺ কে নারীলোভী আর সম্পদলোভী হিসাবে উপস্থাপন করতে চায়। অথচ আয়েশা(রাঃ) এর ভাষায়- টানা তিনদিন নবী পরিবারে খাবার জুটেছে কখনো এমনটা হয়নি[২২]। তিনি আরো বলেছেন- মাসের পর মাস চুলোয় আগুন জ্বলতো না[২৩]। শুকনো খেজুর আর পানিতেই দিন কাটতো।[২৪]
উম্মুল মুমিনীনরা সবসময় দুনিয়ার চেয়ে আখিরাতকেই বেশী প্রাধান্য দিতেন। কিন্তু তারাও মানুষ ছিলেন। তাই সংসারের খরচ বাড়াতে তাঁরা বারবার রাসূল ﷺ কে বারবার পীড়াপীড়ি করতেন। এ নিয়ে কিছুটা মনমালিন্যের প্রেক্ষিতে রাসূল ﷺ এক মাস স্ত্রীদের সাথে দেখা করবেন না বলে শপথ করেন। ইতিহাসে এটি “ঈলার ঘটনা” নামে পরিচিত। এ সময়ে রাসূল ﷺ কে দেখতে না পাবার বিরহের কথা বলতে গিয়ে আয়েশা(রাঃ) বলেন, “আমি শুধু দিন গুনতাম।” বিরহের পালা শেষ করে রাসূল ﷺ সর্বপ্রথম আয়েশা(রাঃ) এর সাথে দেখা করেন। আয়েশা(রাঃ) অভিমান করে বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো এক মাসের শপথ করেছিলেন। অথচ সবে ঊনত্রিশ দিন হয়েছে।” রাসূল ﷺ জবাবে বলেন, “আয়েশা! মাস তো ঊনত্রিশ দিনেও হয়।”[২৫]
– আয়েশা(রাঃ), রাসূল ﷺ এর প্রতি এতোটা আত্মসম্মান বোধ করতেন যে তিনি মুহাম্মদ ﷺ কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, “কেনো আমার মতো একজন নারী, আপনার মত একজন পুরুষকে নিয়ে আত্মসম্মান বোধ করবে না ?” [২৬]
এরপরেও যারা এই বিয়ে নিয়ে জলঘোলা করে তাদের বলব, “If Ayesha (R) was happy and satisfied with her marriage, who are you to point your finger at her marriage?”
বিয়ের পেছনে হিকমাহ
– মুহাম্মদ ﷺ ও আয়েশা(রাঃ) এর বিয়ের কারণে মুসলিম উম্মাহ নানাদিক থেকে লাভবান হয়েছিল। আয়েশা(রাঃ), মুহাম্মদ ﷺ এর স্ত্রীদের মধ্যে থেকে সবচেয়ে বেশী হাদীস বর্ণনা করেছিলেন।[২৭]
-সবচেয়ে বেশী হাদীস বর্ণনাকারীদের মাঝে তিনি ছিলেন সপ্তম, নারীদের মধ্যে থেকে প্রথম।
-হাদীস এবং তাফসীরের এমন কোন বই নেই যাতে, আয়েশা(রাঃ) নামটি জ্বলজ্বল করে না।
-রাসূল ﷺ এর মৃত্যুর পর লম্বা একটা সময় তাঁর জ্ঞান আয়েশা(রাঃ) সাহাবী ও তাবেয়ীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। তিরমিযীতে আবু মুসা আশআরি(রাঃ) থেকে বর্ণিত, “আমাদের, সাহাবীগণের কাছে কোনো হাদীস অস্পষ্ট লাগলে, আমরা আয়েশা(রাঃ) এর নিকট শরণাপন্ন হতাম। তাঁর কাছে অবশ্যই কোনো না কোনো ধারণা পাওয়া যেতো।[২৮]
ইমাম যুহরী(রহঃ) তাবিঈদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন। অনেক সাহাবীর সাহচর্যে ধন্য হয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “সবচেয়ে ভালো জ্ঞান ছিলো আয়েশা(রাঃ) এর। বড়ো বড়ো সাহাবীগণ তাঁর কাছে জানতে চাইতেন।”[২৯]
ইমাম যুহরী আরো বলেন, “যদি সকল মানুষের জ্ঞান এবং পবিত্র স্ত্রীগণের জ্ঞান একত্রিত করা হয়, তারপরেও আয়েশা(রাঃ) এর জ্ঞান বেশী হবে।”[৩০]
—
আবার মক্কার মুশরিক কুরাইশদের কাছে ফিরে যাই। নানাভাবে মুহাম্মদ ﷺ কে প্রলোভন দেখিয়েও তারা মুহাম্মদ ﷺ এর সাথে কোন সমঝোতা করতে পারেনি। মুহাম্মদ ﷺ যদি নারীলোভী হতেন তবে তখনকার পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আরবের সবচেয়ে সুন্দরী নারীদের বিয়ে করতে পারতেন, শিশুকামী হলে পারতেন বেছে বেছে শিশুদের ভোগ করতে। তিনি তার কিছুই করেননি। কারণ, তাঁর মিশন ছিলো সত্যের পথে আজন্ম সংগ্রামের। তাঁর উদ্দেশ্য ছিলো মানুষকে ‘সৃষ্টির দাসত্ব থেকে স্রষ্টার দাসত্ব’ এর দিকে নিয়ে যাওয়া। তাই তো সত্য প্রচারের জন্য অনমনীয় থেকে তিনি বলেছিলেন,
“আমার এক হাতে সূর্য আরেক হাতে চন্দ্র এনে দিলেও আমার ধর্ম থেকে আমি বিরত হবো না। হয় আল্লাহ আমাকে জয়ী করবেন, নতুবা আমি শেষ হয়ে যাবো। কিন্তু এ কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হবো না। ” [৩১]
……………………………………
তথ্যসূত্রঃ
[১] সিরাতুর রাসূল-মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, পৃষ্ঠা-৭৪৮
[২] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪১৮
[৩] Cantor JM, Blanchard R, Christensen BK, Dickey R, Klassen PE, Beckstead AL, Blak T, Kuban ME (2004). “Intelligence, memory, and handedness in pedophilia”. Neuropsychology 18 (1): 3–14.
[৪] Michael Hart in ‘The 100, A Ranking of the Most Influential Persons In History,’ New York, 1978.
[৫] Sir George Bernard Shaw in ‘The Genuine Islam,’ Vol. 1, No. 8, 1936.
[৬] “Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, 5th Edition”. American Psychiatric Publishing. 2013
[৭] Montesqueu-The spirit of Laws- Book-16,page 264
[৮] তিরমিযী, কিতাবুল নিকাহ
[৯] http://chnm.gmu.edu/cyh/primary-sources/24
[১০] অনেক মুসলিমই ছয় বছর বয়সে যে আয়েশা(রাঃ) এর বিয়ে হয়েছিলো, তা স্বীকার করেন না। তারা বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করে প্রমাণের চেষ্টা করেন যে, বিয়ের সময় আয়েশা(রাঃ) এর বয়স ছিল বারো বছর অথবা ষোল বছর কিংবা তার চেয়েও বেশী। এই দাবী মেনে নিলে বেশ কয়েকটি সহীহ হাদীসকে অস্বীকার করতে হয়। ‘বিয়ের সময় আয়েশা(রাঃ) এর বয়স ষোল বছর ছিল’- এ সংক্রান্ত দাবীগুলো খণ্ডন করেছেন সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভী(রহঃ)। আগ্রহীরা তার বিখ্যাত বই “সীরাতে আয়েশা” পড়লে সেগুলো জানতে পারবেন(পৃষ্ঠাঃ৪০৪-৪৪৬)।
[১১] মুসনাদে আহমাদ, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ২১১
[১২] আয়েশা(রাঃ) ছিলেন রাসূল ﷺ এর একমাত্র কুমারী স্ত্রী। অনেক ইউরোপীয় প্রাচ্যবিদ আর খ্রিষ্টান গবেষকদের দাবী হচ্ছে , যেহেতু আরবীতে بكر বলতে কুমারী মেয়েদের বুঝানো হয়, তাই সেই সম্মানের খাতিরেই তাঁর পিতা ইসলামে “আবু বকর” উপনামে খ্যাত হন। একই ভুল করেছেন ভারতবর্ষে আধুনিক শিক্ষার অন্যতম পথিকৃৎ- স্যার সৈয়দ আমির আলি তার “লাইফ অফ মুহাম্মাদ” গ্রন্থের ১৪ নং অধ্যায়ে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, আয়েশা(রাঃ) এর জন্মের বহু পূর্বেই তাঁর পিতা “আবু বকর” উপাধিতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। আর এই পন্ডিতদের কে জানাবেন যে, আরবী ভাষায় কুমারীকে بَكْر (ফাতহা দিয়ে-বকর) বলা হয় না; বরং بِكْر (কাসরা দিয়ে-বিকর) পড়া হয়?
[১৩] তাবাকাত, ইবনে সা‘দ, পৃষ্ঠাঃ ৪৩
[১৪] মুসনাদে আহমদঃ ৬/৬৪
[১৫] আবু দাউদ
[১৬] সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
[১৭] সুনানে আবু দাউদ
[১৮] সহীহ বুখারী
[১৯] সহীহ বুখারী, পৃষ্ঠাঃ ৬৪০
[২০] সহীহ বুখারী, পৃষ্ঠাঃ ৮৯৭
[২১] মুসনাদে আহমাদ, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ২৫৮
[২২] মুসনাদে আহমাদ, পৃষ্ঠাঃ ২৫৫
[২৩] মুসনাদে আহমাদ, পৃষ্ঠাঃ ২১৭
[২৪] সহীহ বুখারী
[২৫] সীরাতে আয়েশা-সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভী(রহঃ), পৃষ্ঠা-১৪৯
[২৬] সহীহ মুসলিম
[২৭] সিরাতুর রাসূল-মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, পৃষ্ঠা- ৭৬৮
[২৮] জামে তিরমিযীঃ মানাকেব আয়েশা(রাঃ)
[২৯] তাবাকাত ইবনে সা‘দ
[৩০] মুসতারাকে হাকেম
[৩১] সীরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩১৪
Debate & Conversation :
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
আয়েশা রাঃ এর সাথে রাসূল সাঃ বিয়ে নিয়ে বেশ কিছু আলোচনা এবং ডিবেট লিংক নিচে দেয়া হলো। যা অনেক শিক্ষনীয়
.
১// আয়েশা রা এর অল্প বয়সে বিয়ে নিয়ে চমৎকার তথ্য দিলেন – এম কে হাসান ভাই
.
https://youtu.be/EWPhm_MMw-M
.
২// হযরত আয়েশা (রা) এর কি অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হয়েছে ? – মোঃ ফেরদৌস
.
https://youtu.be/B8Q1Q8uh4Vo
.
৩// মা আয়েশা (রা) কে ৬ বছর বয়েসে বিয়ে ৯ বছর বয়েসে সংসার করার মাঝে কি হেকমত ছিল
.
https://youtu.be/2HJK6mA0k8g
.
৪// হজরত মুহাম্মদ দ এর অল্প বয়সের মা আয়েশা রা কে বিয়ে ! – মুফাস্সিল ইসলাম
.
https://youtu.be/on0An-pvm_g