কোন জায়গায় বলা হচ্ছে আকাশ আগে, আর কোন জায়গায় বলা হচ্ছে পৃথিবী আগে সৃষ্টি হয়েছে, কোনটা ঠিক



 ৭৯:২৭-৩০ আয়াতে বলা হচ্ছ আকাশ আগে তৈরি- 

"তোমাদের সৃষ্টি অধিক কঠিন না আকাশের, যা তিনি নির্মাণ করেছেন? তিনি একে উচ্চ করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন। তিনি এর রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং এর সূর্যোলোক প্রকাশ করেছেন। পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।"

কিন্তু ২:২৯ বা ৪১:৯-১২ তে বলা হচ্ছে পৃথিবী আগে সৃষ্ট।
"তিনিই সে সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমীনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুতঃ তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত। " [২:২৯]

"বলুন, তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দু’দিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থীর কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা। তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন-পূর্ণ হল জিজ্ঞাসুদের জন্যে। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম। অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা।" [৪১:৯-১২]

এটা কি একটি সুস্পষ্ট পরস্পরবিরোধিতা না?



উত্তর :


যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

সবার আগে টু দা পয়েন্ট উত্তরটা দিয়ে দেই। সুরা বাকারা বা সুরা ফুসিলাতের (৪১) যে রেফারেন্স দেয়া হয়েছে, সেখানে "after that" বা "ইহার পর" বা "তারপর" এর যে আরবি শব্দটা রয়েছে সেটা হচ্ছে "ছুম্মা"। যেটার অন্য অর্থ হচ্ছে "and also or moreover" অর্থাৎ "meanwhile" বা "তার সাথে সাথে"। 

কিন্তু অনুবাদকরা "তারপর" অনুবাদ করার কারণে এই contradiction এর সৃষ্টি হয়েছে। অথচ "meanwhile" ব্যবহার করলেই সবকিছু একসাথে অগ্রগতি হচ্ছে- এমনটা বোঝা যায়। আর, সায়েন্স আমাদের সেটাই বলে 

এখানেই উত্তর পাওয়া যায়। তাছাড়া, আরও কেউ কেউ দাবি তোলে, কুরআনে কোথাও সাত বা কোথাও ছয় বা কোথাও আট দিনে সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। আসলে কোনটা হবে? 

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য আসুন আমরা কুরআনে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্বটাকে বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখি। 

“Let there be light.”
সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কোট করা ধর্মগ্রন্থের বাণী এটাই।
আদিতে ঈশ্বর বললেন, “আলো হোক” আর আলো হইল।
বাইবেলের প্রথম দিকের একটি বাণী। 

যাই হোক, সেটা আমাদের আলোচ্য বিষয় না... আমরা দেখতে চাই, আমাদের পবিত্র কুরআন মহাবিশ্ব সৃষ্টির ব্যাপারে কী বলে... কুরআনের প্রচলিত অবৈজ্ঞানিক অনুবাদ দিয়ে অবশ্য কিছুই ব্যাখ্যা করা যাবে না... তাই সাইন্সের সাহায্য নিয়ে আমরা চেষ্টা করব, কুরআনের আয়াতগুলোকে নতুন আলোতে দেখার...

বিজ্ঞানবিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত যে থিয়োরি রয়েছে মহাবিশ্ব সৃষ্টির ব্যাপারে, সেটা হল বিগ ব্যাং থিয়োরি। শুরুতে একটি সুপার অ্যাটম ছিল। প্রবল ঘনীভূত এক সুপার অ্যাটম। সেটা বিস্ফোরিত হল আর বিস্ফোরণের outburst এর কারণে মহাবিশ্ব সবদিকে সম্প্রসারিত হতে লাগল... এবং, এখনও হতে আছে...

ইসলামকে অন্য ধর্ম আর নাস্তিকেরা “বর্বর” আর “মধ্যযুগীয়” ধর্ম বলে আখ্যা দেয়। আসুন এ “মধ্যযুগীয়” ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ আমাদেরকে সাইন্সের ইমাজিনেশনের বাইরেও কী কী দেখায়, সেটা দেখে আসি...

আসুন, আমরা আগে পর্যালোচনা করি, নাস্তিকদের বিশ্বাসটা কী... অসাধারণ একটি বৈজ্ঞানিক বিশ্বাস... প্রশংসনীয়...

"আদিতে কিছুই ছিল না (Nothing), এরপর সেই Nothing এর উপর nothing ঘটল, তারপর Nothing কোন কারণ ছাড়াই Nobody এর কারণে বিস্ফোরিত হল, তারপর সেই Nothing থেকে Everything আসল, এরপর সেই একগুচ্ছ Everything বিনা কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে rearranged হয়ে গেল বাই Nobody, যা থেকে কিনা ডাইনোসর বের হয়ে আসল, এরপর মানুষ পর্যন্ত।"

এই হল উনাদের বিশ্বাস। সুন্দর না?

বিগ ব্যাং থিয়োরির বিশাল ভক্ত তারা, কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করুন, ঠিক কী কারণে কীভাবে ঐ সুপার অ্যাটম আসল? তাহলে বেশিরভাগই উত্তর দিতে পারবেন না, বা অনুমান থেকে কিছু একটা বলবেন। 

তারা ঠিকই স্বীকার করবে, যদি মাত্র ১ সেকেন্ড পরেও বিগ ব্যাং হত, তাহলে মহাবিশ্ব এখন যেভাবে সুশৃঙ্খলভাবে সৃষ্টি হয়েছে তেমন হত না... কিন্তু বলতে পারবে না, কীভাবে এত নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ হল... বলবে, By chance হয়ে গেছে... প্রকৃতির লীলাখেলা... হায় রে... তারা “প্রকৃতি”কে চিনল না...

সিম্পল উদাহরণ, গুলিস্তানে যদি কেউ বোমা বিস্ফোরণ করতে চায়, তাহলেও তো তাঁকে টাইম মেইনটেইন করে বোমা ফাটাতে হবে। একা একা বোমা বানানো হবেও না, ফাটবেও না। অবশ্য, নাস্তিকদের ঠিক নেই, বলে বসতেও পারেন, বোমাটা এমনি এমনি হয়ে গেছে। 

আমরা মুসলিমরা অবশ্যই বিশ্বাস করব না যে, এমনি এমনি সব হয়ে গেছে... একজন নিপুন শিল্পীর হাতেই এ সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের ডিজাইন... নিখুঁত এক মহাবিশ্ব...

মহাবিশ্ব নশ্বর... যার শুরু আছে, তাঁর শেষ আছে...
মহাবিশ্বের শুরু হয়েছিল, তাই এর শেষও হবে...
আল্লাহ্‌ তায়ালার কোন শুরু নেই, তিনি অনাদিকাল থেকে ছিলেন, আছেন, থাকবেন... তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী।

এবার আসা যাক, কুরআন কী বলে, সে ব্যাপারে...
“তারা কি দেখে না যে, আল্লাহ কিভাবে সৃষ্টিকর্ম শুরু করেন অতঃপর তাকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন? এটা আল্লাহর জন্যে সহজ।” (২৯:১৯)

কীভাবে তিনি সৃষ্টি করেন?
“তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উদ্ভাবক। যখন তিনি কোন কার্য সম্পাদনের সিন্ধান্ত নেন, তখন সেটিকে একথাই বলেন, ‘হয়ে যাও’ আর তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়।” (২:১১৭)

একদম শুরুতে, অর্থাৎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে কেবল আল্লাহ্‌ ছিলেন... তাঁর ইচ্ছায় মহাবিশ্ব সৃষ্টি...
যেই মহাবিশ্ব বলতে কিছুই ছিল না, সেখানেই তাঁর “হও” আদেশে সুচনা হয় মহাবিশ্বের প্রারম্ভিক অবস্থার।

কুরআনের সুম্মা শব্দের অর্থ গণহারে সবাই “অতঃপর” করেছেন... একারণে এটা বিজ্ঞানের সাথে contradictory শোনায়... এজন্য এ সংক্রান্ত আয়াতে সুম্মা এর অর্থ Meanwhile করা হয় এখন... ফলে, কুরআনে যেভাবে এক আয়াতের পর আরেক আয়াত দেয়া আছে সেটাই যে এক্স্যাক্ট টাইমলাইন তা আর থাকে না...

এবার আসা যাক কুরআনের আয়াতে... 

“তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।” (৪১:১১)
আকাশ পৃথিবী আগে ছিল... ধুম্রকুঞ্জ... Gaseous Nebula…
এরপর তারা আসল... একত্রিত হল...
ঘনীভূত হল...
সৃষ্টি হল সুপার অ্যাটম... যার মধ্যে সম্পূর্ণ মহাবিশ্ব (আকাশ পৃথিবী সব) ছিল... আর এরপর সেই মহা বিস্ফোরণ, বিগ ব্যাং... সব পৃথক পৃথক হয়ে গেল...
কুরআন বলছে...
“যারা বিশ্বাস করে না তারা কি চিন্তা করে দেখে না যে, আকাশ পৃথিবী আগে একত্রে ছিল যেন একটি একক বস্তু? এরপর আমি তাদের পৃথক করে দিলাম...” (২১:৩০)
সুবহানাল্লাহ...

বিস্ফোরণের ফলে সব কিছু ছিটকে যায়... আর নিউটনের 1st Law অনুযায়ী মহাশূন্যে ছিটকে যাওয়া বস্তু অনন্তকাল ছুটতেই থাকবে... এজন্য, এখনও মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হয়েই চলেছে...
“আমি স্বীয় শক্তিবলে আকাশমণ্ডলী সৃষ্টি করেছি এবং আমিই এর সম্প্রসারণকারী।” (৫১:৪৭)

আল্লাহ্‌ ৬টি পর্যায়ে ক্রমান্বয়ে সম্পূর্ণ মহাবিশ্ব সৃষ্টি শেষ করেন...
“তোমার প্রভু তো আল্লাহ্‌ যিনি আকাশমণ্ডলী আর পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন ৬টি পর্যায়ে...” (১০:৩)

সৃষ্টি হল নক্ষত্র পুঞ্জ... রাতের আকাশে তাকালে যাদেরকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলোকবিন্দুর মতো দেখায়... কী অপূর্ব সেই দৃশ্য...
“আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত করেছি...” (৪১:১২)

বিস্ফোরণের পর সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের formation হতে লাগল একই সাথে... পৃথিবী আর পৃথিবীর বাইরের সবকিছু Simultaneously রূপান্তরিত হতে লাগল...

প্রথমে তো সেই মহা বিস্ফোরণের পর প্রচণ্ড গরম অবস্থা, এটা একটা ধাপ... এরপর সেই Hot অবস্থা থেকে Cooling down, যা আরেক ধাপ...
“তুমি কি সেই আল্লাহ্‌কে অস্বীকার করবে যিনি কিনা পৃথিবীকে দুই পর্যায়ে তৈরি করেছেন?” (৪১:৯)

বাকি থাকল ৬-২=৪টা ধাপ... যে চার ধাপে পৃথিবীতে প্রাণধারণের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হল... এমন সুন্দর নয়নাভিরাম এক গ্রহে পরিণত হল আমাদের পৃথিবী...
আর এরপর এ প্রাণধারণক্ষম পৃথিবী নামের গ্রহে সৃষ্টি করা হল প্রাণীদের...

“আল্লাহ প্রত্যেক জীবকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাদের কেউ কেউ বুকে ভয় দিয়ে চলে, কেউ কেউ দুই পায়ে ভর দিয়ে চলে এবং কেউ কেউ চার পায়ে ভর দিয়ে চলে; আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।” (২৪:৪৫) 

মহাবিশ্বের সব কিছু চলছে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র বেঁধে দেয়া কিছু Law অনুসারে... সকল মহাজাগতিক বস্তু তাঁর নিয়মের অধীন...
“He created the sun the moon and the stars (all) GOVERNED by LAWS under His command.” (৭:৫৪) 

এত কিছুর পরেও অনেকে অস্বীকার করে তাদের স্রষ্টাকে। অবিশ্বাস করে। আল্লাহ্‌র নির্দেশ পালনে অস্বীকৃতি জানায়।

আমরা আল্লাহ্‌র প্রতি কৃতজ্ঞ... তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন... এ সুন্দর মহাবিশ্বে আমাদের অস্তিত্ব দিয়েছেন... আমরা তাঁরই উপাসনা করি আর তাঁর উপরই ভরসা করি... আমরা অবলোকন করি তাঁর সৃষ্টিকর্ম... আর শ্রদ্ধায় অবনত করি আমাদের মাথা... 
“বলে দিন, তোমরা… অনুসন্ধান কর কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন...নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।” (২৯:২০)

আরও contradictory প্রশ্ন থাকলে এ পেইজে পোস্ট করতে পারেন। ইনশাল্লাহ উত্তর দেবার চেষ্টা করা হবে।

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে যেন বিপথে যাওয়া থেকে রক্ষা করেন, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত যেন আমরা তাঁর আদেশ পালন করতে পারি কৃতজ্ঞতার সাথে... 

"হে আকাশমণ্ডলী আর পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা! দুনিয়ায় আর পরকালে তুমিই আমার রক্ষাকর্তা। আমি যেন মুসলিম হয়ে মরতে পারি, আর আমার স্থান যেন হয় সৎ লোকদের সাথে।" (১২:১০১)
[ সংগৃহীত ]

ইসলাম সম্পর্কিত যেকোনো প্রশ্ন এবং কথা থাকলে
যোগাযোগ করুন এবং লাইভ অনুষ্ঠান দেখতে চোখ রাখুন আমাদের ফেসবুক পেইজ Islam Sotto এ।

Post a Comment

Previous Post Next Post